somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়ন্ত্রনহীন আমাদের সড়ক !

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের একটি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে প্রতিদিন ই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর । সবাই এ ধরনের ঘটনা কে " সড়ক দুর্ঘটনা " বললে ও আমি তা মানতে নারাজ কারণ আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনা গুলি কখনো ই দুর্ঘটনা বলে সংগায়িত করা যায় না প্রতিটি দুর্ঘটনা ই ঘটছে কারো না কারো অবহেলার কারণে । তাই কারো অবহেলার কারনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা কে কি কোন ভাবে ই দুর্ঘটনা বলে আখ্যায়িত করা যায় ? তার পর ও পরিবেশ পরিস্হিতির কারনে আমি ও এটা কে দুর্ঘটনা হিসেবে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি । গত ২০ এপ্রিল রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকুরচালী এলাকায় ঘটে গেল এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়েছে অন্তত তেরজন মানুষ কে । ঐ দুর্ঘটনায় উচ্চ মাধ্যমিকের শ্রেনীর ছাত্রী জাকিয়ার রক্তমাখা পাঠ্যপুস্তক ও খাতা ছবি দেখে আমার হ্দয়ের রক্তক্ষরন হয়েছে । যদি ও ঐ প্রতিটি মানুষের মৃত্যু আমাদের কে ভীষন ভাবে ব্যাথিত করেছে তবে কেন জানি প্রতি দিন লাশের গন্ধ আর রক্ত স্রোত দেখতে দেখতে আমরা কেমন যেন পাথর হয়ে গেছি প্রবাদে আছে না " অল্প শোঁকে পাগল আর অধিক শোঁকে পাথর " । তাই আমরা আঘাত পেতে পেতে কেমন জানি পাথরেই পরিনত হয়ে গেছি । জাকিয়া ঘর থেকে কলেজের যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে ছিল কিন্তু জাকিয়া স্বপ্নে ও ভাবতে পারেনি এই বাস কখনো ই আর জাকিয়াকে কলেজে পৌঁছতে দেবেনা । শুধু জাকিয়া ই নয় আমরা সবাই ঘর থেকে বের হই কোন না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু কেউ কি ঘুনাক্ষরে ও ভাবতে পারি যে আমরা হয়তো আর কখনো ই ঘড়ে ফিরতে পারবো না বা তথা কথিত সড়ক দুর্ঘটনা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাবো ? সেদিনের ঘটনার ভূক্তভোগীরা ও তেমন টি ভাবে নি ।সেদিন সৈয়দপুর থেকে রংপুরগামী তৃপ্তি পরিবহণ ও কুমিল্লা থেকে সৈয়দপুরগামী সায়মুন পরিবহনের সংঘর্ষ হয়।যাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী চালক রাত এগারটার সময় কুমিল্লা থেকে সায়মন পরিবহনের বাসটি চালিয়ে এসে সকাল নয়টায় বগুড়ায় তার সহকারীর হাতে বাসের স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে নেমে পরেন আর অদক্ষ সহকারী মহাসড়কে হাতে স্টিয়ারিং পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল । অদক্ষ সহকারী বেপরোয়া গাড়ি চালানো ই কেড়ে নিল তেরটি মানুষের জীবন মুহুর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল তের টি পরিবার আহত হয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্বের ঘানি টানতে হবে অনেক কেই ।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রশিক্ষিত চালকের অভাব সেই সাথে আমাদের বেহাল রাস্তাতো আছেই । বৈধ লাইসেন্স ছাড়া চালকের আসনে বসে যাওয়ার ঘটনা যেন কোন ঘটনাই না । সূত্র মতে দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীক্ষা না দিয়ে লাইসেন্স নিচ্ছেন, অন্যদিকে দেশের ১৬ লাখ চালক বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছেন, আর তারা যে গাড়ি গুলি চালাচ্ছেন তার বেশির ভাগ ই চলাচলের অনুপযোগী লক্কড়-ঝক্কড় কোম্পানির গাড়ি। ফিটনেসবিহীন কত যানবাহন যে দেশের সড়কপথে চলাচল করছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান হয়তো কারো ই দেয়া সম্ভব নয়। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের জোকা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহত হওয়ার পর অবৈধভাবে লাইসেন্স নেওয়া অদক্ষ চালকদের কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয় নিয়ে যখন দেশবাসী ক্ষুব্ধ, তখন ই তৎকালীন সময়ের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন " গাড়ি চালানোর জন্য শিক্ষা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, চালকদের কিছু চিহ্ন চিনতে পারলেই হয় " । আমার মনে হয় মন্ত্রীর সেই কথা মত ই কিছু চিহ্ন জানা লোক গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে ।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) তথ্যমতে ২০১৫ সালে সারাদেশে ২ হাজার ৬২৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে এই দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৩ জন মারা যান, আহত হন ৬ হাজার ১৯৭ জন।আর ২০১৪ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২ হাজার ৭১৩টি এতে নিহতের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৮২ জন।২০১৫ সালে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হন। এই সংখ্যা ৩৫৯। এর মধ্যে রাজধানীতেই নিহত ২২৭ জন আর সবচেয়ে কম ২৮ জন মারা যান কুষ্টিয়া জেলায়।বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ি ২০১৫ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ৫৮১টি ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত হন; আহত হন ২১ হাজার ৮৫৫ জন।আর ভিন্ন এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের একটি সূত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবছর গড়ে ১৫ হাজার লোক পঙ্গু হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গত বছর পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৪৭ হাজার ৪৩৭ জন এবং ২০১৪ সালে ৪৬ হাজার ৫৮৪ জন চিকিৎসা নেয়। এদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশের চিরতরে পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়।পরিসংখ্যান যাই বলুক আমাদের দেশে যে মানুষের একটি বড় আংশের অকাল মৃত্যুর কারণ যে সড়ক দুর্ঘটনায় এটা অস্বীকার করার উপায় বোধ হয় কারো ই নেই ।

সবচেয়ে বড়কথা হলো যে সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু ব্যক্তিই নিহত হন না, নিহতের পরিবারকেও সারাজীবন এই বোঝা বহন করতে হয়। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ওই পরিবারের সদস্যদের চোখে অন্ধকার নেমে আসে এক একটি পরিবারকে ভাসতে হয় বিপদের অথৈই সাগরে।আহত হয়ে কাউকে আবার চিরতরে পঙ্গুত্ব নিয়েই অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হয় আজীব । এর পর ও আদৌ আমাদের সরকার ও তার প্রশাসনের তথাকথিত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা আছে কিনা সেটাই একটা বড় প্রশ্ন ? সড়ক ও সড়কে গাড়ি থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে এটা অস্বীকার কোন উপায় নেই তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা মাত্রা অবশ্যই সহনশীল পর্যায়ে থাকতে হবে । তাই সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ চিহ্নিত করে আশু প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া, তার সাথে কীভাবে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব থেকে জনগণকে রক্ষা করা যায় তা নিশ্চিত করা। একজন দক্ষ সচেতন চালক সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তার সাথে আমাদের অন্য কারণগুলোও বিবেচনায় আনতে হবে যেমন গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি , সড়কের বেহাল অবস্থা , পথচারীদের বেপরোয়া পথচলা ও কিন্তু দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ । সর্বোপরি সরকারকে উপলদ্ধি করতে হবে যে বাংলাদেশে এখন অন্যতম সমস্যাগুলির একটি সড়ক দুর্ঘটনা আর একটি দুর্ঘটনা একজন মানুষের বা একটি পরিবারের আজীবনের কান্না। তাই সরকারকে ই ব্যবস্থা নিতে হবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করা ।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৪৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×