কেউ কেউ মনে করেন ধর্ম সত্য বা মিথ্যা যাই-ই হোক, ধর্ম না থাকলে পৃথিবী নৈরাজ্য ভরে যেত । ধর্মের কারনে ও খোদার ভয়ে মানুষ ভাল আছে । সুতরাং ধর্মের প্রচার ও প্রসার হওয়া উচিত । আমিও একসময় এ দর্শনের সমর্থক ছিলাম । কিন্তু বাস্তবতা চরম ভিন্ন ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু মানুষ এমন প্রবৃত্তি নিয়ে জন্মায় যে তারা শাসন (রাষ্ট্রীয় হোক বা যাইই হোক, মুগুরে সোজা) ছাড়া কথা ভাল থাকে না আর এক শ্রেনীর মানুষ আছে আপনি যদি তাদেরকে অপরাধ করতে জোরও করেন তথাপিও তারা তা কখনও করবে না, তাদের বিবেকবোধ বাধা দেয় । প্রথম শ্রেনীর লোক ধর্মীয় প্রশিক্ষন , শিক্ষা- দিক্ষা ও শত অনুশাসনের মধ্যে থাকলেও উচ্ছৃঙ্খল থেকে যায় । পৃথিবীতে ধর্ম না থাকলেও এরুপ দু’শ্রেণীর লোক থাকবে । এক শ্রেনীর লোক ভাল আর একশ্রেণীর লোক খারাপ । আর সমাজ কতটা ভাল বা খারাপ তা নির্ভর করে রাষ্ট্রের উপর (রাষ্ট্রপতি কতটুকু দক্ষ এবং রাষ্ট্রনীতি কতটুকু সুন্দর ইত্যাদির উপর)। এবার কিছু প্রমান দেয়া যাক ।
পৃথিবীর কোন দেশে ধর্ষন সবচেয়ে বেশি হয়? এর উত্তরে হয়ত অনেকে আমেরিকা, কানাডার নাম নিবে । বাস্তব সত্য কিন্তু ভিন্ন । আমেরিকায় সকল ধর্ষনের রিপোর্ট পুলিশের কাছে পৌছে, এমনকি অনেক নারী সত্যিকার ধর্ষিতা না হলেও, কাউকে হয়রানীর উদ্দেশ্যও পুলিশে সে ধর্ষিতা হয়েছে বলে রিপোর্ট করে থাকে । আবার স্বামী জোর পূর্বক যৌণ মিলন করলেও তা ধর্ষন হিসাবে মামলা হয় । আর আমাদের দেশে এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র । আমাদের দেশে যারা ধর্ষিতা হয় তার মধ্যে মামলা হয় শতকরা ১০% আর বাকি ৯০% লোক চক্ষুর অন্তরালেই রয়ে যায় । আর স্বামী কর্তৃক জোর পূর্বক যৌন মিলন তো ধর্ষন হিসাবে আমাদের দেশে মোটেই স্বীকৃত নয় । প্রকৃত হিসাবে আমাদের দেশেই ধর্ষনের হার সবচেয়ে বেশি । আবার ওয়াজ-নসিহত, ধর্মীয় আলোচনা ইত্যাদিতেও আমরা পৃথিবীতে শীর্ষে ।
বহু লোক পাবেন যারা নামায কালাম মোটেও পড়ে না, তবে তাদের নৈতিকতা অনেক ভাল । পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত নামে মাত্র তাদের একটি ধর্ম আছে। প্রকৃতিপক্ষে বাস্তব জীবনে তারা ধর্মের কোন বিধান মানে না । তারা কোন প্রতারনা, ঠকবাজি করে না । তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠি । তাদের আচার-ব্যবহার অতি সুমিষ্ট । অপরদিকে বহু নামাযি ও ধার্মিক লোক দেখবেন যারা মসজীদে বহু সময় কাটায় কিন্তু তাদের মুখের ভাষা ও আচারন আপনার হৃদয়ের এত গভীর এত বিষাক্তরুপে বিদ্ধ করবে যা কখনও দূরিভূত হওয়ার নয় । তারা বাস্তব জীবনে বহু মানুষকে ঠকায় এবং বিভিন্ন ধরনের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত । তাদের নৈতিকতাও অনেক নিম্ন মানের ।
পবিত্র রমযান মাসেও দেখবেন এ শ্রেনীর ধার্মিকদের মধ্যে যারা ব্যবসায়ী তারা তাদের ব্যবসার হীন স্বার্থে দ্রব্যমুল্যর কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে রোযাদার গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যায় তাদের পণ্যের মুল্য । তারা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে যে কোন মানুষের দূর্বলতাকে পুজি হিসাবে ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না । তাদের আচারণ নিষ্ঠুরতার চরম অবস্থাও প্রদর্শন করে থাকে । সংযমের মাসে অসংযমতা চুড়ান্ত রুপ লাভ করে ।
যারা ইসলামী আন্দোলন করে তারা ধর্মের নামে ইসলামের অনেক প্রশিক্ষন নিয়ে থাকে এবং নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকে । তাদের মধ্যেও বৃহৎ একশ্রেনীর লোক পাবেন যাদের নৈতিকতা অনেক নিম্নে । তারা ইসলামী আন্দোলন করে বিধায় তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডগুলোর ব্যপারে সাধ্যমত গোপণীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করে । এটা আমার কানে শোনা কথা নয় । নিজ চোখে দেখা অভিজ্ঞতা । ইসলামী আন্দোলনের উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কথা বলছি, সাধারন কর্মীর কথা নয় । একজন, দু’জনকে দেখে এ মন্তব্য নয়,বরং হাজার জনকে দেখা । তাদের লেন-দেন ও বাস্তব আচার ব্যবহারও নিম্নমানের । তবে সাংগঠনিক কাজের জন্য কিছু আনুষ্ঠানিক আচারনের ব্যপারে তারা প্রশিক্ষিত । তাদের আনুষ্ঠানিক আচার-ব্যবহারগুলোতে উক্ত আচার-আচারণ অনুশীলন করা হয় বলে লোকে মনে করে তারা কত সুন্দর ব্যবহার করে । সাংগঠনিক আচারনের বাইরে আপনি যদি ব্যক্তিগত কোন লেন-দেন বা উঠা-বসা হয় তাহলে তাদের আসল চেহারা দেখবেন । শুনেছি ইসলামী ব্যংকে সবচেয়ে বড় যে ক’টি আর্থিক কেলাংকারি হয়েছে তার প্রায় সবক’টি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার্মিক ও সৎ চরিত্রবান বলে পরিচিত তাদের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে ।
আমি আগেই বলে নিয়েছি আমার এ পর্যালোচনা ঢালাওভাবে সবার জন্য নয় । আমি শুরুতেই বলে নিয়েছি মানব সমাজে দু’শ্রেনীর মানুষ দেখা যায়-হোক তারা ধর্মীয় প্রশিক্ষনে বা ধর্ম ছাড়া । উপরোক্ত উদাহরনে আমি দেখিয়েছি যে ধর্মীয় প্রশিক্ষন সত্ত্বেও যারা দ্বিতীয় শ্রেণীল চরিত্রে তারা সে চরিত্রেই থেকে যায় আর যারা প্রথম শ্রেণীর তারা তাদের নিজ চরিত্রেই থেকে যায় ।
আলোচনা লম্বা হওয়ায় আপাতত এখানে শেষ করছি । দ্বিতীয় পর্বে আরো কিছু প্রমান দেখাব এবং আলোচনা করবো ধর্ম মানুষের জন্য কি কি ক্ষতি বহন করে আনছে । গঠনমুলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছি । ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:১০