যারা ইসলামের জন্য নিজের মূল্যবান সম্পদ ও মহামুল্যবান জীবনটা উৎসর্গ করে দেয়ার জন্য শপথ নিয়েছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি যে আপনার এ ত্যগ তিতিক্ষার আগে একটু যাচাই-বাছাই করে নিন যে আপনার এ ত্যগ তিতিক্ষা যেন বৃথা না যায়।ধরুন ইসলাম যদি মানব রচিত বিধান হয় তাহলে আপনার এ ত্যগ তিতিক্ষার ফল জিরো বৈ কিছু হবে কি?
স্রষ্টার শপথ করে বলছি আমি আপনার কল্যানের চিন্তা করে এ উপদেশ দিচ্ছি।আমার কথা হয়ত আপনার মানতে কষ্ট হতে পারে বা অপছন্দ হতে পারে।আপনার মনের প্রশ্ন গুলো করতে থাকুন আমি সকল প্রশ্নের জবাব পর্যায়ক্রমে উত্তর দিয়ে যাবো-শর্তো হল আমাকে শত্রু মনে করে নয় বন্ধু মনে করে প্রশ্ন করতে হবে। আপনি আমার ভাই আমিও আপনার ভাই।পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণো আলোচনা পরস্পরকে সত্য বুঝতে সহায়তা করবে।
আমি নিজেও ইসলামিী আন্দোলনের একজন ত্যগি কর্মি ছিলাম। বাজারে প্রচলিত সকল ইসলামি সাহিত্যর প্রায় 95% আমার পড়া। আরবী ভাষা জানার কারনে কুরআনের ভাষা বুঝতে কষ্ট হয় না। সমগ্র কুরআন 100 বারের বেশি পড়া।বাজারে অধিক প্রচলিত হাদিস শাস্রের প্রায় সবগুলো আমার পড়া। এ কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য এই নয় যে আমি অনেক জ্ঞানী। এর উদ্দেশ্য আমি যে কথাগুলো বলছি তা হঠাত মনে জাগা বা কারো দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে নয়। বরং বহু অনুসন্ধানের রেজাল্ট।
এবার কয়েকটি বিষয় আপনাকে পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করছি। তা হল:
১. আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন ইসলাম আপনার প্রাণপ্রিয় ধর্ম-নয় কি? এর কারন এই নয় কি যে, যে কারনে হিন্দুদের কাছে হিন্দুয়িজম তাদের প্রাণপ্রিয় আর মুসলিম হিসাবে ইসলাম আপনার কাছে প্রাণপ্রিয়? এর কারন অবশ্যই এটা নয় যে ইসলাম স্রষ্টা প্রদত্ত। এর কারন যদি এটা হত যে ইসলাম স্রষ্টা প্রদত্ত তাহলে আপনি অবশ্যই তা যাচাই-বাছাই করে দেখতেন। আমি হলফ করে বলতে পারি আপনি তা করেননি।
আপনি হয়ত বলবেন, না, ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত হওয়ার পক্ষে আপনার কাছে অনেক যুক্তি প্রমাণ আছে। আমি আপনাকে প্রশ্ন করবো একজন হিন্দু বা খ্রিষ্টান জন্মের পর শিক্ষা পেল তার ধর্মোই শ্রেষ্ঠ আর তার ধর্মো সম্পর্কে কোন দ্বিধা বা প্রশ্ন দেখা দিলে শুধু হিন্দু বা খ্রিষ্টান গুরুদের থেকে তার জওয়াব খোজে, আর সমালোচনা কারীর কথা শুনে না বা দু’একটি শুনলেও তা বিচার বিশ্লেষণ করার চেষ্টা না করে তা ভূল সে ব্যখ্যা না পাওয়া পর্যোন্ত ক্ষান্ত হয় না, এমন ব্যক্তির পক্ষে কি হিন্দুয়িজম বা খ্রিষ্টান ধর্মের পক্ষে অনেক প্রমান ও যুক্তি ছাড়া কি বা থাকবে? এমন ব্যক্তি যে পক্ষপাতদুষ্ট চিন্তা দ্বারা আড়ষ্ট ও বিভ্রান্ত- তা সে জীবনেও বুঝতে পারবে না। আপনার বিষয়টি তাদের চেয়েও গুরুতর। কারন আপনি ইসলামের পক্ষে যত নসিহত ও বক্তব্য শুনে থাকেন একজন হিন্দু তার ধর্মের পক্ষে এত বক্তব্য শুনে থাকে না।
২. কুরআন যে স্রষ্টা প্রদত্ত তার পক্ষে কোন প্রমান নেই।কুরআন নিজে নিজের পক্ষে মাত্র দু’টি প্রমাণ উপাস্থাপন করে: ক)কুরআনের অনুরুপ কোন সুরা কেউ আনতে পারবে না।
খ)কুরআন মানবরচিত হলে তাতে বহু অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যেত।
প্রথম প্রমাণ সম্পর্কে বলা যায়, অনুরুপ সুরা বলতে কি কি বৈশিষ্ট থাকতে হবে তা পরিস্কার করে বলা হয়নি। যদি উদাহরণ স্বরুপ বলি কবি নজরুলে ‘থাকব নাক বদ্ধ ঘরে-------’ কবিতাটি কুরআনের সুরার শুধু অনুরুপই নয় বরং তার চেয়ে ঢের ভাল’ তাহলে এর জবাব কি হবে? [আমার এ কথার অর্থ কেউ অবশ্যই এভাবে নেবেন না যে আমি আল্লাহর কথাকে কবি নজরুলের কবিতার সাথে তুলনা করছি। আল্লাহর কথাকে কবি নজরুল কেন, পৃথিবীর কারো সাথে তুলনা করার মত স্পর্ধা কেউ করুক সেটা আমি কখনও মানব না।আমার আলোচনার বিষয় হল কুরআন কি আসলে আল্লাহর বানী নাকি মানব রচিত। এটা যখন পর্যালোচনা করবেন তখন আপনাকে সকল মানদন্ডেই তা বিচার করে সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে।]
আপনি যদি এ ধান্দায়ই থাকেন যে মিলুক আর নাই মিলুক একটু গোজামেলির হলেও বলতে হবে না নজরুলের কবিতাটি কুরআনের মানদন্ডের সমান হয়নি তাহলে ভিন্ন কথা-তবে যিনি নিরপেক্ষমনে সত্যেনুসন্ধানী তিনি এসব গোজামিলি মানবেন না।তাছাড়া প্রমান হবে এত সহজ যে একজন অশিক্ষিত রাখালও বুঝবে। এখন যদি ধরেওনি কুরআনের সুরার সাহিত্য মান অতি উচ্চে, প্রশ্ন হল একজন অশিক্ষিত সাধারণ মানুষ সাহিত্যরই বা কি বুঝবে? তার কাছে এ ধরনের প্রমানের কি অর্থ আছে?
দ্বিতীয় প্রমান সম্পর্কে বলবো যে,অসাঞ্জস্যতা পাওয়া না গেলেই যে স্রষ্টার হবে তা কথনও ১০০% প্রমান করে না।এখন মানব রচিত অনেক মনিষির বই পাওয়া যায়, সব মনিষির লেখাতেই কি অসাঞ্জস্যতা পাওয়া যায়?যদি ধরেওনি যে অসাঞ্জস্যতা পাওয়া না গেলে স্রষ্টার। কুরআনে অসংগতি মোটেই নেই? কুরআনে বহু অসংগতি রয়েছে।যেমন-
কুরআন বলে যে এতে প্রত্যেকটি বিধান অতি সুস্পষ্টভাবে ব্যখ্যা করা আছে।আসলে কি তাই? কুরআনের প্রায় প্রত্যেকটি বিধান হাদিসের ব্যখ্যার উপর নির্ভরশীল যে হাদিসশাস্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। যেখানে লক্ষ লক্ষ হাদিস মানব রচিত।বুখারী/মুসলিম ইত্যাদিকে সবচেয়ে সহীহ বলা হয় অথচ সেখানেও অসংখ্যা হাদিস পাওয়া যায় যার সাথে কুরআনের বক্তব্য সাংঘর্ষিক।
কুরআন বলে যে কুরআনে মানবজীবনের সবকিছু সুবিস্তৃতভাবে বর্ণিত। আসলে কি তাই?আল কুরআনে হাতে গোনা কয়েকটি বিধান,তাও আবার অতি সংক্ষেপে বর্ণিত।
আরও কিছু প্রমাণের কথা মুসলি স্কলাররা বলেন যে প্রমাণ সম্পর্কে কুরআন নিজেও দাবী করেনি। যেমন কুরআনে ১৪০০ বছর আগে যে কথাগুলো বলে গেছে আজ ১৪০০ বছর পর বিজ্ঞান এখন আবিস্কার করছে। মানব রচিত হলে-মানুষের পক্ষে বিজ্ঞানের এসব অভিনব তথ্য এতকাল পূর্বে মানুষের জ্ঞানে থাকার কথা নয়।– আমিও হুজুরদের এ বক্তব্য শুনে অন্য সকলের ন্যয় অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছিলাম। পরে কুরআন পড়ে দেখি এ সব গোজামেলি ও জোড়াতালি দিয়ে ব্যখ্যা করা। সমগ্র কুরআনকে সামনে রাখলে সবগোজামেলি ধরা খায়।আমি আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান বা অনুরুপ নাম বা বিষয়ের বহু বই বাজারে আছে যার প্রায় সবগুলো আমি পড়েছি। জাকির নায়েকের এ বিষয়ের বক্তব্য শুনেছি। এর সবগুলোতেই আমি গোজামেলি, জোড়াতালি দেয়া অতি চাতুর্যপূর্ণভাবে কুরআনের বক্তব্যকে আধুনিক বিজ্ঞানের বক্তব্যর সাথে মিলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ বাস্তবে কুরআনের বক্তব্যর সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের বক্তব্য মিলা তো দুরের কথা বরং বহু বিষয় সরাসরি সাংঘর্ষিক।বিজ্ঞানের সব বিষয় প্রমাণিত নয়, ঠিকই। তবে অনেক বিষয় প্রমাণিত। এরুপ প্রমাণিত বিষয়গুলোর সাথেই সাংঘর্ষিক।প্রত্যেকটি বিষয় যদি আমি কুরআন থেকে নিয়ে ব্যখ্যা দিয়ে স্কলারদের গোজামেলি ধরিয়ে দিলে আমার আলোচনা যথার্থ হত এবং পূর্ণতা পেত।কিন্তু এতগুলো আলোচনা করতে গেলে একটি বই রচিত হয়ে যাবে। আমি পরবর্তীতে সংক্ষেপে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করবে।
উপরে কুরআনের দাবীর অসারতার বিষয়ে যে ব্যখ্যা দিয়েছে তাও অতি সংক্ষেপ- যা হয়ত অনেকের মনের প্রশ্নের পূর্ণ জবাব দেবে না। সংক্ষিপ্ততার জন্য এভাবে আলোচনা করলাম।
কেউ বলবেন কুরআন স্রষ্টার হোক বা নাই হোক এতে তো মানুষের উপকার বৈ ক্ষতি হচ্ছে না। আমি বলবো বহু ক্ষতি হচ্ছে। যেমন-
১. যারা কুরআনের নামে জীবন দিচ্ছে তাদের এ জীবন দেয়াটা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
২. একই কুরআন পড়ে হাজার হাজার দলে বিভক্ত। এর কারন কুরআন নিজেই।কুরআন তার বলতে গেলে কোন বক্তব্যই ভালভাবে পরিস্কার করে বলেনি যার কারনে প্রত্যেকেই তার নিজের মত ব্যখ্যা করার সুযোগ পায়। যে যেভাবে চিন্তা করে কুরআনকে সেভাবে ব্যখ্যা করতে পারে। (বিস্তারিত আলোচনা পরে হবে)
৩. ধর্মের নামে মানুষে মানুষ বিভেদ বেশি হয়।
৪. খোদ মুসলমানদেরেই একপন্থীদের ফতোয়াই অপর পন্থীরা কাফের যা মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়িয়ে তুলছে।
৫. যতদিন মানুষ কুরআন অনুসরন করবে ততদিন এদেরকে হাজারও দলে বিভক্ত রেখে শাসন ও শোষন করা সম্ভব। ততদিন আইএসএস, তালেবান, সহ হাজারও জঙ্গি তৈরি হতে থাকবে।
৬. ধর্মান্ধতা একপ্রকার মানসিক অসুস্থতা। যতদিন মানবরচিত কুরআনকে মানুষ জড়িয়ে থাকবে ততদিন ধর্মান্ধ মানসিক অসুস্থ লোক তৈরি হতে থাকবে।
৭. ধর্মের নামে এক শ্রেণীর লোক ব্যবসা করবে আর এক শ্রেণীর লোক বঞ্চিত হতে থাকবে। চতুর শ্রেণীর লোক মানুষের দুর্বল ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে বোকা বানিয়ে নিজের আখের খোছাতে সক্ষম হবে। পীরদের ব্যবসা, মাজার ব্যবসা ইত্যাদি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আমি এক প্রতিষ্ঠানের টিচার ছিলাম যার চেয়ারম্যান ছিল এক প্রভাবশালী ধর্মীয় ছাত্র সংঘটনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। তিনি বোর্ড মিটিংয়ে টিচারদের বেতন বাড়ানোর কথা উঠলেই প্রিন্সিপালকে বলতে শিক্ষকদের ধর্মীয় কথা বলে মোটিভেট করবেন, দেখবেন বেতন না বাড়ালেও চলবে।
ইসলামী ব্যংকের কর্মচারীরাও বলে থাকেন তারা বেতন বাড়ানোর কথা বলবে তাদেরকে কিছু ওয়াজ নসিহত করে দেয়া হয় এবং দ্বিগুন কাজ করতে বলা হয়ে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২