সোম, 03/09/2015 - 10:47 — রাফী শামস
'মুক্তচিন্তা','মুক্তমনা' ইত্যাদি শব্দ গুলো এখন সব থেকে বেশি আলোচিত-সমালোচিত বললে অত্যুক্তি হবেনা।মুক্তমনা দের কে হেয় করার জন্য এক শ্রেণীর মানুষ 'মুত্রমনা' শব্দটির প্রচলন করেছে।মুক্তচিন্তা কী কিংবা মুক্তমনা কারা এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব পরিষ্কার নয়,এমনকি আমরা যারা নিজেদের কে মুক্তচিন্তার অধিকারী মুক্তমনা বলে দাবি করে থাকি তাদেরও নয়।কারণ সময়ের বিচারে এই ধারণাটি আমাদের এখানে খুবই নতুন,সদ্য ভূমিষ্ট।তাই ব্যাপার গুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষন করার প্রয়োজন আছে,অন্যথায় সদ্য ভূমিষ্ট এই শিশুটি পথভ্রষ্ট হতে পারে,যা আমাদের কাম্য নয়।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের আগমনও খুবই অল্প কিছুদিন আগে।সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার পর ইন্টারনেট আমাদের ঘরে ঘরে হাতে হাতে পৌছে গিয়েছে।বর্তমান কালের সব থেকে শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত 'তথ্য' আমাদের হাতের মুঠোতে চলে এসেছে।আধুনিক তরুন প্রজন্ম এই অস্ত্র কে যথাযথ ভাবে ব্যবহারের উপায় হিসেবে সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন ফোরাম-ব্লগ।হাল আমলে ফেসবুকের তুংগস্পর্শী জনপ্রিয়তা এবং সার্বজনীনতা এই ব্যবহারে অসাধারণ গতি নিয়ে এসেছে।এই ব্লগার ও অনলাইন লেখক গোষ্ঠি যারা কিনা মুক্তিযুদ্ধ,সৃষ্টিতত্ত্ব,গল্প,কবিতা,উপন্যাস সহ সাহিত্য ও সৃষ্টির জগতে এক নতুন 'ডিজিটাল ধারার' সৃষ্টি করেছে তারা সাধারণের চোখের আড়ালেই ছিল ২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারির পূর্বে।২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যে গণজাগরণের সূত্রপাত হয়েছিল তাকে 'নব্য রেনেসা' বললে অত্যুক্তি হবেনা।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিই শুধু নয়,এই আন্দোলন এবং গণজোয়ার বর্তমান তরুন প্রজন্মের মন-মানসিকতা এবং চিন্তার জগতে বিশাল এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে,যার সুফল হয়তো আমরা পাব আরও কিছু পরে।
এই আন্দোলনের সময় কিংবা অব্যবহিত পরেই 'ব্লগার',''ব্লগ'- এগুলোর প্রতি মানুষের বিশেষ করে আরও অসংখ্য তরুণের আগ্রহ সৃষ্টি হল।ব্লগ সাইট গুলো আরও জনপ্রিয় হল,অনেকেই আবির্ভূত হলেন ব্লগার হিসেবে।এদের সবার লেখার মান যে খুব উচু তা নয়,সবাই যে ভাল লেখ কিংবা গঠনমূলক সৃষ্টিশীল কাজ করছে তাও নয়- তবে এই যে আগমন,এই যে চর্চা এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।১০০ জন ব্লগারের মধ্যে কমপক্ষে একজন ভাল মেধাবি লেখক আমরা পেয়ে যাব,হাজার খানেক লেখার মধ্যে অন্তত দশটা ভাল লেখা আমরা পাব-এটাই প্রাপ্তি।এই বাকি ৯৯০ টা আবর্জনা তৈরি না হলে ঐ ১০ টি ভাল লেখাও তৈরি হতনা।এভাবে তরুন দের স্বাধীন মত প্রকাশের,প্রতিভা বিকাশের,লেখনি শক্তি বৃদ্ধির এই প্লাটফর্ম তৈরি হল এর কোন তুলনা নেই।
মুক্তমনা বা মুক্তচিন্তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অবধারিত ভাবেই এই ভূমিকা টুকু টানতে হয়েছে।অতি সংক্ষেপে পটভূমি টুকু উল্লেখ করতে হয়েছে।কারণ বর্তমানে আলোচিত 'মুক্তমনা' সম্প্রদায় কিংবা মুক্তচিন্তার অধিকারীরা এই উপরে আলোচিত তরুণ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত।তবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই একেবারে আকাশ থেকে আসমানি কিতাবের মত করে মুক্তচিন্তা,মুক্তমনা ব্লগার দের উপর নাযিল হয়েছে।প্রথাবদ্ধ চিন্তা চেতনার বিরূদ্ধে গিয়ে তাকে ভেঙে নতুন মানবকল্যাণ মুখী চিন্তাধারা সৃষ্টির ব্যাপারটি নতুন নয়।বস্তুত এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়।যদি এভাবে প্রচলিত প্রথার মূলে কুঠারাঘাত করে যুগোপযোগী আধুনিক চিন্তাধারা সৃষ্টি না করা হত তাহলে আমরা আজও আদিম সমাজেই রয়ে যেতাম।যেকোন নতুন ধারণা,এমনকি কোন ধর্মও প্রচলিত প্রথা কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েই সমাজের বদল ঘটিয়েছে,কালের বিবর্তনে এক সময় যা ছিল প্রথাবিরোধী নতুন চিন্তা তাও প্রথায় পরিণত হয়ে যায় এবং তখন আবার সেই প্রথা কে ভেঙে নতুন কোন প্রথাবিরোধী আধুনিক চিন্তা আনয়নের দরকার পড়ে।এভাবে এগোয় সভ্যতা,সমাজ।
ব্রিটিশ দের থেকে দেশ বিভাগের পর প্রথম প্রগতিশীল প্রথাবিরোধী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছিল ভাষার প্রশ্নে যার পূর্ণরূপ পায় ৭১ এ।কিন্তু যে প্রগতিশীল চিন্তা,ধ্যান ধারণা এবং সম-অধিকারের স্বপ্ন নিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।স্বাধীনতার পরপরই সেই স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে,হয়তো তা এখনও পড়েই আছে।সকল ধর্মের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা,পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা,নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা - এই অবশ্যপালনীয় কাজ গুলো আমরা আজও করে উঠতে পারেনি,বরং কোন কোন ক্ষেত্রে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছি।মাঝে আমরা পার করে এসেছি সেনাশাসনের তিব্র অন্ধকার যুগ,৭১ এর অর্জিত স্বাধীনতা কে যা পিছিয়ে দিয়েছে কমপক্ষে ১০০ বছর।যখন অন্ধকারের তীব্রতা বেড়ে যায়,মানুষ তখন আলোর জন্য ছটফট করে।প্রগতিশীল মুক্তচিন্তাই এনে দিতে পারে এই আলো।হয়েছেও তাই।এজন্য এই সকল সময়ে হঠাৎ হঠাৎ করে কিছু আলোক রশ্মি ঝলক দিয়ে উঠেছে এবং আমাদের কে পথ দেখিয়েছে।
প্রথমেই যে বিস্ময়কর নামটি উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন কৃষক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর।সত্যিকারের স্বশিক্ষিত মানুষের চমকপ্রদ উদাহরণ তিনি।কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও কেবল মাত্র নিজের চেষ্টায় জ্ঞানার্জন করে তিনি যেসকল প্রশ্ন উত্থাপন করে গিয়েছেন,বই লিখেছেন সেগুলো আজও আমাদের দেশে বিরল।মুক্তচিন্তার এক সার্থক উদাহরণ আরজ আলী মাতুব্বর।অন্ধকারে তিনি খানিকটা আলো আমাদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন,আজও দেখিয়ে যাচ্ছেন।এই আলোর ধারাবাহিকতায় আরও তিমিরবিদারী আলোকরশ্মির দেখা পাই আমরা।
এর মধ্যে সব থেকে শক্তিশালী আলোক রশ্মিটির নাম হুমায়ুন আজাদ।প্রচলিত প্রথা কে তীব্র আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করার এমন অসাধারণ সাহস এর আগে কেউ করতে পারেনি।প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের জীব গুলো স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে নিচে টেনে নামাতে চাইবে এজন্য তাঁর সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।আবার হুমায়ুন আজাদ কে ধারণ করার মত মস্তিষ্কও সার্টিফিকেটি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে খুবই বিরল।এই জন্য মূর্খ দের কাছে তিনি 'অসভ্য',তাঁর রচনা 'যৌন উত্তেজক'।সমাজে প্রচলিত সকল কুপ্রথা,ভন্ডামির বিরূদ্ধে এমন অকপট সত্য বলার সাহস কারও ছিলনা,ছিলনা সেই সত্য কে সহ্য করার ক্ষমতাও।তাই এখনও হুমায়ুন আজাদ নাম টি শুনলে ভন্ডরা,মুখোশধারীরা,মুর্খরা কেপে ওঠে।স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার পথিকৃত তাই হুমায়ুন আজাদ।তাঁর আগে আহমদ শরীফ তাঁর অসাধারণ সব লেখনিতে মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে গেছেন।হুমায়ুন আজাদ সহজে কারও প্রশংসা করতেন না,একমাত্র যে মানুষটির নিরবিচ্ছিন্ন প্রশংসা তিনি করে গিয়েছেন তিনি হলেন আহমদ শরীফ।
হুমায়ুন আজাদ তাঁকে গুরু মানতেন এমনটাই মনে হয় আহমদ শরীফ সম্পর্কে তাঁর লেখা গুলো পড়লে।সাধারণের কাছে আহমদ শরীফ নামটি খুব একটা পরিচিত নয় যতটা পরিচিত হুমায়ুন আজাদের নাম।এর কারণ সম্ভবত হুমায়ুন আজাদের উপর ঘটে যাওয়া নৃশংস হামলা এবং জার্মানিতে তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু।সেই সাথে হুমায়ুন আজাদের তীব্রতা ছিল সূর্যের মত তেজদীপ্ত,তার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না- আগেই উল্লেখ করেছি একথা।জীবিত হুমায়ুন আজাদের থেকে মৃত হুমায়ুন আজাদ কোটি গুন বেশি শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে।মুক্তচিন্তার বিকাশে তাঁর সৃষ্টি গুলো বাংলা সাহিত্যে এবং বাংলাদেশে 'আসমানি কিতাব' সমতুল্য।
'মুক্তচিন্তা' বিকাশে আর যে মানুষটির নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে তিনি হলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।অনেকেই ভ্রু কুচকে তাকাবেন এবং বলবেন, "জাফর ইকবাল তো ধর্ম নিয়ে লেখেননি কিংবা তিনি নিজেকে 'নাস্তিক' বলে ঘোষণা দেননি রবং তাঁকে কেউ এই অভিযোগ করলে তিনি সেটা অস্বীকারও করেছেন।" এই কথা যারা বলবেন তারা আসলে 'মুক্তচিন্তা' ব্যাপারটি সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন।যথাস্থানে এ বিষয়ে উল্লেখ করব।যাই হোক,মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর সব থেকে বড় কৃতিত্ব হল তরুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টি,যা কিনা মুক্তচিন্তার প্রাথমিক এবং মূল শর্ত।বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা,কঠিন ও অজানা বিষয় গুলোকে সহজ ভাষায় শিশু-কিশোর-তরুন দের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া এবং মুক্তিযুদ্ধ কে বর্তমান প্রজন্মের হৃদয়ে পৌছে দেয়ার কঠিন দায়িত্বটি তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন এবং করছেন।এই কারনে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠির রোষানলে রয়েছেন তিনি।তাঁকে 'মুরতাদ'(ধর্মত্যাগী) আখ্যা দিয়ে হত্যা করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে,একাধিক বার তাঁর উপর হামলাও হয়েছে। বাংলাদেশে যদি আবারও বুদ্ধিজীবী হত্যা হয় তাহলে সবার আগে এই মানুষটিকেই হত্যা করা হবে।মুহম্মদ জাফর ইকবাল নামটিও অন্ধকারের জীব দের কাছে আতংকের।
স্বাধীন দেশে আমরা এমন অল্প কিছু সাহসি মানুষ কে পেয়েছিলাম,আর আগে থেকেই আমাদের ভান্ডারে ছিলেন বিদ্যাসাগর,বেগম রোকেয়া,নজরুল সহ আরও অসংখ্য মণীষা।আমাদের বর্তমান প্রজন্মটির মধ্যে যারা এদেশীয় এবং বিদেশী মনীষী দের সঙ্গ পেয়ে বড় হয়ে উঠেছে (বই এর মাধ্যমে!)তারা পৃথক হতে বাধ্য।এই পৃথক আলোকসংগ প্রাপ্ত তরুনরাই আজকের মুক্তমনা,মুক্তচিন্তার অধিকারী।সেদিন একজন হুমায়ুন আজাদ যা লিখতেন আজ হাজারও তরুন অনলাইনের জগতে সেগুলো লিখে যাচ্ছে।একজন আরজ আলী যে সকল প্রশ্ন করতেন আজ আরও হাজারো তরুন সেই প্রশ্ন করছে,প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করছে।একজন জাফর ইকবাল বিজ্ঞান নিয়ে যে বই লেখেন তেমন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের কথা লিখে যাচ্ছে আরও অসংখ্য তরুন।মুক্তচিন্তা ব্যাপারটি কী কিংবা মুক্তমনা কারা এই ব্যাপারটি নিয়ে এবার কথা বলা যেতে পারে।
মুক্তচিন্তার বিপরীত হল বদ্ধচিন্তা।বদ্ধচিন্তা হল নতুন কিছু গ্রহণ করতে না পারা, প্রথাবদ্ধ নিয়মের বাইরে যেতে না পারা,ছোট বেলা থেকে যা শুনে এসেছে সেগুলোকেই ধ্রুব বলে 'বিশ্বাস' করা।অর্থাৎ বদ্ধচিন্তা বা চিন্তাহীনতার জন্ম 'বিশ্বাস' থেকে এবং মুক্তচিন্তার জন্ম 'সংশয়' থেকে।আর সংশয়ের জন্ম হয় জ্ঞান থেকে।কোন কিছু বিশ্বাস করতে সেটি সম্পর্কে জানা লাগেনা,কেবল বিশ্বাস করলেই চলে।বিশ্বাস করতে হলে জ্ঞানের দরকার হয়না,বরং লালন করতে হয় অজ্ঞানতা কে।অজ্ঞানতা থেকে বিশ্বাসের জন্ম।যেটি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান নেই সেটিকেই বিশ্বাস করতে হয়।যেমন কেউ বলেনা আমি 'বাতাসে বিশ্বাস করি' কিংবা আমি 'আলুতে বিশ্বাস করি'।কারণ এগুলো আছে,এগুলোকে আমরা জানি,এগুলো বিশ্বাস করতে হয়না।কিন্তু আমাদের ভূতে 'বিশ্বাস' করতে হয়,জ্বীনে 'বিশ্বাস' করতে হয়,'সৃষ্টিকর্তায়' বিশ্বাস করতে হয়।যখন আমরা বিভিন্ন বিষয় জানব,নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত হব তখনই আমরা ছোটবেলা থেকে যেসব অযৌক্তিক বিষয় শুনে এসেছি সেগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন জাগবে,সংশয় সৃষ্টি হবে,আমরা প্রথার বাইরে এসে নিরপেক্ষ ভাবে বিজ্ঞানের সাহায্যের সেটিকে পরীক্ষা করে দেখতে চাইব- এই ব্যাপারটিই হল মুক্তচিন্তা।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে ধারণা করা হয়,মুক্তচিন্তা কেবল মাত্র ধর্ম নিয়ে (বা ধর্মের বিরূদ্ধে) চিন্তা।ব্যাপারটি মোটেও তা নয়।মুক্তিচিন্তক হলেই একজন নাস্তিক হবে - তাও নয়।তবে একজন মুক্তচিন্তক বা মুক্তমনা অবশ্যই সংশয়বাদী।প্রতিটি ব্যাপারকে সেটা ধর্ম সংক্রান্ত হোক বা সামাজিক-রাজনৈতিক কোন মতাদর্শ হোক- তারা প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে,কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে মুক্ত ভাবে চিন্তা করে থাকে।যে দুটি মাপকাঠিতে এই চিন্তা আমরা করব তার একটি হল বিজ্ঞান অন্যটি মানবতা।অর্থাৎ ব্যাপারটি বিজ্ঞানসম্মত কিনা এবং মানুষের জন্য উপকারী/মঙ্গলজনক কিনা।এরপরেও মুক্তচিন্তার সাথে ধর্মের ব্যাপারটি এসেই যায় কারণ সকল ধর্মের ভিত্তি হল অবৈজ্ঞানিক কিছু কুসংস্কার।ধর্মে অসংখ্য নীতিবাক্য এবং অসংখ্য ভাল ফলদায়ক ব্যাপার রয়েছে কিন্তু একই সাথে ধর্ম গুলোতে রয়েছে অসংখ্য পৌরাণিক কল্পকাহিনী যা ধর্ম গুলো সত্য বলে দাবি করে।এখানে বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষ বাধে ধর্মের।আবার ধর্ম গুলোতে অসংখ্য মানব কল্যাণ মূলক বিষয় থাকলেও আবার রয়েছে এমন কিছু নির্দেশনা যা অন্য ধর্মের কিংবা সামগ্রিক মানবতার জন্য ক্ষতিকর।একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
বিজ্ঞান নিয়ে যার সামান্যতম জ্ঞান আছে সেও মহাকর্ষ,অভিকর্ষ এই ব্যাপার গুলো জানে।যারা বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করে তারা হয়তো সূত্র ধ্রুবক সমীকরণ সহ আরও খুটিনাটি বিষয় জানে এবং ব্যাপারটি বোঝে।তারা এটাও বোঝে যে এই সূত্রের লংঘন কোন ভাবেই সম্ভব না কারণ এটাই প্রকৃতির নিয়ম।যদি তাই হয়,তাহলে মহাকর্ষ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা কারও পক্ষে ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহম্মদের 'মেরাজ' এর কাহিনী বিশ্বাস করা বা মেনে নেয়া সম্ভব নয়।যে মহাকর্ষ বোঝে সে জানে 'বোরাক' নামক কোন বাহনে চড়ে উর্ধাকাশে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়।কাজেই অবশ্যই মেরাজের ঘটনাটি একটি কাল্পনিক কাহিনী মাত্র।আবার এই মেরাজ কে অস্বীকার করলে ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি নামায এবং রোযা কে প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হয় কারণ ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ি মেরাজে গিয়েই মুহম্মদ (স) পাচ ওয়াক্ত নামায এবং ৩০ রোযার নির্দেশ নিয়ে এসেছিলেন আল্লাহর কাছ থেকে।এখন একজন বিজ্ঞানমনস্ক মুক্তচিন্তক এই ক্ষেত্রে কী করবেন?
বিজ্ঞানের সুস্পষ্ট প্রমাণিত সূত্রাবলী কে নির্লজ্জের মত না দেখার ভান করে আমি আমার 'বিশ্বাস' কে আকড়ে ধরে রাখতে পারি,এতে মহাকর্ষ সূত্রের কিংবা এই নিয়মের কোন ক্ষতি হবেনা।আবার আমি যদি আসলেই মুক্তচিন্তার অধিকারী হই আমি সত্য কে 'কমনসেন্স' ব্যবহার করে মেনে নিতে পারি এবং এতদিন যা 'বিশ্বাস' করে এসেছি তা যে অযৌক্তিক একথা স্বীকার করতে পারি।মূলত এসকল কল্পকাহিনীর কারণেই মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে অবধারিত ভাবে ধর্ম এসে পড়ে এবং সংঘাত বাধে।
ইসলাম,খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্ম গুলোর প্রত্যেক টি তে অন্য দুটি ধর্মের অনুসারি দের কে শত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং হত্যার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।এই নির্দেশ অনুসরণ করে যদি এই তিনটি ধর্মের লোকেরা ধর্মপালন করতে যায় তাহলে সমগ্র পৃথিবীতে যুদ্ধাবস্থাই লেগে থাকবে।হিন্দু ধর্মে প্রচলিত বর্ণপ্রথা মানবতার জন্য নিকৃষ্টতম ব্যাপার এটা বুঝতে সাধারণ মানবিক চেতনা থাকাই যথেষ্ট। ধর্ম বাদ দিয়ে কেবল মাত্র সাধারণ মানবিকতা ব্যবহার করেই বলা যায় এই সকল নির্দেশ গুলো অমানবিক।ধর্মের নির্দেশের বাইরে এসে এই যে মানবিক চিন্তা এটাই মুক্তচিন্তা।
আবার একই সাথে একজন মুক্তচিন্তক যে শুধু ধর্ম নিয়েই পড়ে থাকবে এমন নয়।শুধু ধর্ম নয় সমাজের প্রচলিত প্রতিটি প্রথা বিজ্ঞান ও মানবতার কষ্টি পাথরে ঘষে পরীক্ষা করে দেখে একজন মুক্তচিন্তার অধিকারী মানুষ।মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন ব্যক্তি সবার মত কেই সম্মান করবেন,আমন্ত্রণ জানাবেন কিন্তু গ্রহণ বা বর্জন করবেন ঐ মাপকাঠিতে পরিক্ষা করে।একজন মুক্তমনা একজন অসাধারণ পাঠক।তিনি যেমন ইমাম গাজ্জালীর 'আদর্শ জান্নাতি রমনী' পড়বেন আবার হুমায়ুন আজাদের 'নারী' ও পড়বেন।পড়ার পর গাজ্জালির বইটি ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন কারণ যুক্তি-বিজ্ঞান-মানবতার মাপকাঠিতে বইটি নেগেটিভ মার্কিং পাবে,অন্যদিকে নারী বইটি নিয়ে আলোচনা করবেন,খুটিয়ে দেখবেন এবং আরও জানবেন।নারী লিখতে যে বই গুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে সেগুলোও পড়বেন।এবং লেখনি শক্তি থাকলে এই বার্তা গুলো অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেবেন- কারণ এটি তার দায়িত্ব।
বদ্ধচিন্তার মানুষের সাথে মুক্তচিন্তার মানুষের পার্থক্য হল বদ্ধচিন্তার মানুষের অসংখ্য ঈশ্বর থাকে- তার ধর্মীয় ঈশ্বর থাকে,তার রাজনৈতিক ঈশ্বর থাকে- এই সকল ঈশ্বরের বাণী তার কাছে ধ্রুব সত্য,এর বাইরে তারা যেতে পারেন না।ধর্মীয় ঈশ্বর তো বটেই,রাজনৈতিক ঈশ্বরের কোন ভুলও তার চোখে পড়েনা,তারা যা বলে সে তাই পালন করে,নিজের চিন্তা দিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করে চলেনা।অপরদিকে মুক্তচিন্তার মানুষের কোন ঈশ্বর নেই।সৃষ্টিকর্তায় তার বিশ্বাস থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু সেটা অবশ্যই সংশয়যুক্ত বিশ্বাস এবং সে সৃষ্টিকর্তা কে ঈশ্বরের পর্যায়ে নিয়ে যায়না,সৃষ্টিকর্তার বাণী বা নির্দেশও সে মুক্ত ভাবে বিচার করতে পারে।তার কোন রাজনৈতিক ঈশ্বরও নেই,নেই কোন মতাদর্শিক ঈশ্বর।যেমন আমি বঙ্গবন্ধু কে আমি ভালবাসি,কিন্তু তিনি আমার ঈশ্বর নন,তাঁর ত্রুটি সমূহের সমালোচনা করা আমি দোষের মনে করিনা।হুমায়ুন আজাদ কে ভালবাসি,তাঁকে আদর্শ মানি কিংবা তাঁর সৃষ্টি গুলোর মধ্যে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পাই কিন্তু হুমায়ুন আজাদ আমার মতাদর্শিক ঈশ্বর নন,সময়ের স্রোতে তাঁর কোন ধারণা ভুল বা ভ্রান্ত প্রমাণিত হলে কিংবা তাঁর সমালোচনা যোগ্য কিছু পেলে সেটা নিয়ে কথা বলতেও আমার কোন অসুবিধা হবেনা। এটাই হল মুক্তচিন্তা আর বদ্ধচিন্তা/চিন্তাহীনতার মূল পার্থক্য।
একজন মুক্তচিন্তক বদ্ধচিন্তার বিরূদ্ধে কথা বলবে তার অস্ত্র জ্ঞান-যুক্তি-বিজ্ঞান ব্যবহার করেই।মুক্তচিন্তক বদ্ধচিন্তা কে আক্রমন করবে কিন্তু বদ্ধচিন্তার অধিকারী কাউকে নয়।অপরদিকে বদ্ধচিন্তার অধিকারী একজন মানুষের নানাবিধ 'অনুভূতি' খুব সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলে তারা মুক্তচিন্তার মানুষ টিকেই আঘাত করে,হত্যা করতেও কুন্ঠিত হয়না।কারণ নিঃসন্দেহে মুক্তচিন্তাকে পরাস্ত করার মত কোন কিছু বদ্ধচিন্তার কাছে নেই।তাই মানুষটিকে থামিয়ে দেয়াই তাদের জন্য সহজ।কিন্তু বদ্ধচিন্তার সমাজ হল অন্ধকার সমাজ,সেখানে জ্ঞানের বিকাশ ঘটেনা এবং মানুষের কোন অগ্রগতি সাধিত হয়না।একারণেই মুক্তচিন্তার দরকার,মুক্তচিন্তার মানুষের দরকার।কারণ যুগে যুগে মুক্তচিন্তার মানুষের দ্বারাই যাবতীয় প্রগতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্লগার দের মধ্যে একটি বিশাল অংশ এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।পরিবর্তনও চোখে পড়ছে।আর একারণে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিও ভীত।যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের সহযোদ্ধা ব্লগার দের লাশ পড়ে থাকতে দেখছি রাজপথে।মুক্তচিন্তা কে যাদের ভয়,মুক্তচিন্তা যাদের মিথ্যার আসন টলিয়ে দিতে পারে তারা হত্যার মাধ্যমে থামিয়ে দিতে চায় চিন্তার এই ধারাকে,কারণ এই যুক্তিকে বিজ্ঞান কে ভিত্তি করে যে মুক্তচিন্তার ধারা গড়ে উঠেছে তার মুখোমুখি হওয়ার মত কোন জ্ঞান অন্ধকারের এই জীব দের নেই।কাজেই এখন মুক্তচিন্তার পক্ষে কথা বলা,মুক্তমনা হয়ে কথা বলা মানে জীবন হাতে নিয়ে কথা বলা।অবশ্য এটা নতুন কিছু তো নয়,সেই সক্রেটিস-ব্রুনো-গ্যালীলিও-হাইপোসিয়া-হুমায়ুন আজাদ থেকে আজকের অভিজিৎ সকলেই তো এই পথেরই পথিক।মহান সব ব্যক্তির জ্ঞানের উপরে শুধু নয় তাদের লাশের উপরে-রক্তের উপরে আমাদের সভ্যতা নির্মিত হয়েছে।
কিন্তু আমাদেরকেও আমাদের লক্ষ থেকে বিচ্যুত হলে চলবেনা।মনে রাখতে হবে আমাদের অস্ত্র জ্ঞান-যুক্তি-বিজ্ঞান।দা-তলোয়াড়-চাপাতি আমাদের অস্ত্র নয়।আরও একটি ব্যাপার আমাদের মনে রাখতে হবে।জ্ঞান যার সম্বল সে জানে জয় তার হবেই,জ্ঞানের গুণেই সে বিনয়ী।অন্যদিকে বদ্ধচিন্তার মানুষেরা যখন যুক্তিতে হেরে যায় তখন তাদের সম্বল হয়ে গালি গালাজ ও নোংরা কথন।আমাদের কে পথ ভুলাতে এবং নিজেদের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে গালি দিয়ে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে তারা।আমরা যেন এই ফাদে পা না দেই।কখনও যেন গালি,নোংরা অশ্লীল কথনের সরণাপন্ন না হই। সেই সাথে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত আরও একটি ব্যাপার মনে রাখা বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশে এখনও শিক্ষার হার সন্তোষজনক নয়।যারাও বা শিক্ষিত বলে বিবেচিত তারাও কতটুকু শিক্ষিত তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে।আমাদের অধিকাংশই শিক্ষা গ্রহন করে সার্টিফিকেট এবং চাকরির জন্য।জ্ঞান চর্চার হার এখানে দু অংকের নীচে এখনও।এমতাবস্থায় আমাদের কথা প্রচারের জন্য,জ্ঞানের আলো ছড়ানোর জন্য আমাদেরকেও কৌশলী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।আমরা এটাও জানি বদ্ধচিন্তার রাজত্বের প্রভাবে আমাদের দেশের মানুষ ধর্মের ব্যাপারে অনেক বেশি সংবেদনশীল।আমি প্রথমেই যদি বলি 'তোমার ধর্ম ভুল' তাহলে ঐ ব্যক্তি আমার আর কোন কথাই শুনবেনা।এমনিতেই তার মন বদ্ধ,এবার সে বদ্ধ দরজার উপরে আরও কয়েক স্তরের আবরণ বসিয়ে নেবে।আমি বরং তার সাথে বন্ধুর মত আলাপ করব।ধর্ম নিয়ে,বিজ্ঞান নিয়ে,তার চিন্তা ভাবনা নিয়ে।তাকে ভাবতে বাধ্য করব,প্রশ্ন করতে বাধ্য করব,উত্তর খুজে দেখতে বাধ্য করব।আমি কখনই বলব না, মেরাজ তো ভুয়া।আমি বলব মহাকর্ষের কথা,বলব এর বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।আমি বলব না আল্লাহ বলতে কেউ নেই,আমি বলব বিগ ব্যাং থিউরি,স্ট্রিং থিউরির কথা-সহজ ভাষায়।আমি বলবনা কুরান কোন আসমানি কিতাব নয়,আমি বলব আরবি না বাংলা কুরান পড় বেশি করে,মনযোগ দিয়ে।আমি বলবনা ইসলাম তো নারীকে সমঅধিকার দেয়নি,আমি আমার ছোট ভাই বোন কে 'নারী' বইটি পড়তে দেব।আমি বলবনা মসজিদ মন্দির কোন কাজের না,আমি বলব বেশি করে লাইব্রেরি চাই।আমি অজ্ঞানতা কে সরাসরি আঘাত করার থেকে জ্ঞানের আলো উসকে দিতে বেশি কাজ করব।আমি অভিজিৎ রায়,হুমায়ুন আজাদ কে নিয়ে প্রশস্তি বাক্য রচনা করবনা তাদের লেখা গুলো ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।
সেই সাথে মনে রাখতে হবে মুক্তচিন্তার মানুষরা প্রগতির পথে জাতিকে যতটা এগিয়ে নিতে পারবেন অন্যরা তা পারবে না।তাই সিস্টেম কে ভাংতে আগে ঢুকতে হবে সিস্টেমের ভিতর।রাজনীতি,সরকার,প্রশাসন,শিক্ষা সকল ক্ষেত্রে থাকতে হবে মুক্তচিন্তার মানুষ দের।নিজেদের কে নিয়ে যেতে এমন উচ্চতায় যেখানে থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ কে প্রভাবিত করা সম্ভব হবে।আমাদের দেশে মুক্তচিন্তার এই লড়াই সবে মাত্র জোড়দার হয়েছে,এটি এখনও শিশু পর্যায়ে।আঘাত আসবেই,কেননা এতদিন ধরে আসন গেড়ে থাকা অন্ধকারের জীবেরা এত সহজে কি তাদের আসন ছেড়ে দেবে?কিন্তু নিজেদের লক্ষ্য এবং বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখেই আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে,কৌশলী হতে হবে।নিজেদের কে উচ্চতর স্থানে নিয়ে যেতে হবে।নিঃশেষে জীবন বিসর্জনের মধ্যে অক্ষয় হওয়া যায় কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যেহেতু আমাদের এখানে পথপ্রদর্শক মুক্তচিন্তার অধিকারী খুবই কম তাই এই অল্প কজন কে যেকোন ভাবে,যেকোন কৌশলে বেঁচে থাকতে হবে- আমাদের জন্য,দেশের জন্য।হুমায়ুন আজাদ স্যারের লেখা পড়লে আফসোস হয় কেন তিনি আরও অনেক দিন বাচলেন না,তাহলে আরও অসাধারণ কিছু জিনিস পেতাম আমরা।অভিজিৎ দা'র কথা মনে পড়লেই ব্যথা আর বেদনায় হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠে,তার মত সোনার টুকরো আমরা কবে পাব?কিভাবে পাব?প্রয়োজনে কৌশলী হয়ে হলেও আমাদের,আমাদের কে রক্ষা করতে হবে।এটা ভয় নয় কিংবা পলায়ন নয়- এটা রণকৌশল।লেখা থামানো যাবেনা,মুক্তচিন্তার বিকাশ থামানো যাবেনা- সেই সাথে আমাদের কে যেন কেউ থামিয়ে দিতে না পারে সেটাও লক্ষ রাখতে হবে সমান ভাবে।যার যার কৌশল তারই ঠিক করতে হবে।
হুমায়ুন আজাদ,অভিজিৎ রায় শুধু নিজেদের জ্ঞান দিয়েই নয়- নিজেদের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে গেছেন।এই ভিত্তির উপর জ্ঞান আর আলোর প্রাসাদ টি নির্মানের দায়িত্ব এখন আমাদের কাধে।এই কাজে বিফল হলে চলবেনা,বিফল হওয়ার কোন সুযোগ নেই...
- See more at: Click This Link
সোম, 03/09/2015 - 10:47 — রাফী শামস
'মুক্তচিন্তা','মুক্তমনা' ইত্যাদি শব্দ গুলো এখন সব থেকে বেশি আলোচিত-সমালোচিত বললে অত্যুক্তি হবেনা।মুক্তমনা দের কে হেয় করার জন্য এক শ্রেণীর মানুষ 'মুত্রমনা' শব্দটির প্রচলন করেছে।মুক্তচিন্তা কী কিংবা মুক্তমনা কারা এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব পরিষ্কার নয়,এমনকি আমরা যারা নিজেদের কে মুক্তচিন্তার অধিকারী মুক্তমনা বলে দাবি করে থাকি তাদেরও নয়।কারণ সময়ের বিচারে এই ধারণাটি আমাদের এখানে খুবই নতুন,সদ্য ভূমিষ্ট।তাই ব্যাপার গুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষন করার প্রয়োজন আছে,অন্যথায় সদ্য ভূমিষ্ট এই শিশুটি পথভ্রষ্ট হতে পারে,যা আমাদের কাম্য নয়।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের আগমনও খুবই অল্প কিছুদিন আগে।সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার পর ইন্টারনেট আমাদের ঘরে ঘরে হাতে হাতে পৌছে গিয়েছে।বর্তমান কালের সব থেকে শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত 'তথ্য' আমাদের হাতের মুঠোতে চলে এসেছে।আধুনিক তরুন প্রজন্ম এই অস্ত্র কে যথাযথ ভাবে ব্যবহারের উপায় হিসেবে সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন ফোরাম-ব্লগ।হাল আমলে ফেসবুকের তুংগস্পর্শী জনপ্রিয়তা এবং সার্বজনীনতা এই ব্যবহারে অসাধারণ গতি নিয়ে এসেছে।এই ব্লগার ও অনলাইন লেখক গোষ্ঠি যারা কিনা মুক্তিযুদ্ধ,সৃষ্টিতত্ত্ব,গল্প,কবিতা,উপন্যাস সহ সাহিত্য ও সৃষ্টির জগতে এক নতুন 'ডিজিটাল ধারার' সৃষ্টি করেছে তারা সাধারণের চোখের আড়ালেই ছিল ২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারির পূর্বে।২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যে গণজাগরণের সূত্রপাত হয়েছিল তাকে 'নব্য রেনেসা' বললে অত্যুক্তি হবেনা।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিই শুধু নয়,এই আন্দোলন এবং গণজোয়ার বর্তমান তরুন প্রজন্মের মন-মানসিকতা এবং চিন্তার জগতে বিশাল এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে,যার সুফল হয়তো আমরা পাব আরও কিছু পরে।
এই আন্দোলনের সময় কিংবা অব্যবহিত পরেই 'ব্লগার',''ব্লগ'- এগুলোর প্রতি মানুষের বিশেষ করে আরও অসংখ্য তরুণের আগ্রহ সৃষ্টি হল।ব্লগ সাইট গুলো আরও জনপ্রিয় হল,অনেকেই আবির্ভূত হলেন ব্লগার হিসেবে।এদের সবার লেখার মান যে খুব উচু তা নয়,সবাই যে ভাল লেখ কিংবা গঠনমূলক সৃষ্টিশীল কাজ করছে তাও নয়- তবে এই যে আগমন,এই যে চর্চা এর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।১০০ জন ব্লগারের মধ্যে কমপক্ষে একজন ভাল মেধাবি লেখক আমরা পেয়ে যাব,হাজার খানেক লেখার মধ্যে অন্তত দশটা ভাল লেখা আমরা পাব-এটাই প্রাপ্তি।এই বাকি ৯৯০ টা আবর্জনা তৈরি না হলে ঐ ১০ টি ভাল লেখাও তৈরি হতনা।এভাবে তরুন দের স্বাধীন মত প্রকাশের,প্রতিভা বিকাশের,লেখনি শক্তি বৃদ্ধির এই প্লাটফর্ম তৈরি হল এর কোন তুলনা নেই।
মুক্তমনা বা মুক্তচিন্তা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অবধারিত ভাবেই এই ভূমিকা টুকু টানতে হয়েছে।অতি সংক্ষেপে পটভূমি টুকু উল্লেখ করতে হয়েছে।কারণ বর্তমানে আলোচিত 'মুক্তমনা' সম্প্রদায় কিংবা মুক্তচিন্তার অধিকারীরা এই উপরে আলোচিত তরুণ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত।তবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই একেবারে আকাশ থেকে আসমানি কিতাবের মত করে মুক্তচিন্তা,মুক্তমনা ব্লগার দের উপর নাযিল হয়েছে।প্রথাবদ্ধ চিন্তা চেতনার বিরূদ্ধে গিয়ে তাকে ভেঙে নতুন মানবকল্যাণ মুখী চিন্তাধারা সৃষ্টির ব্যাপারটি নতুন নয়।বস্তুত এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সমাজের অগ্রগতি সাধিত হয়।যদি এভাবে প্রচলিত প্রথার মূলে কুঠারাঘাত করে যুগোপযোগী আধুনিক চিন্তাধারা সৃষ্টি না করা হত তাহলে আমরা আজও আদিম সমাজেই রয়ে যেতাম।যেকোন নতুন ধারণা,এমনকি কোন ধর্মও প্রচলিত প্রথা কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েই সমাজের বদল ঘটিয়েছে,কালের বিবর্তনে এক সময় যা ছিল প্রথাবিরোধী নতুন চিন্তা তাও প্রথায় পরিণত হয়ে যায় এবং তখন আবার সেই প্রথা কে ভেঙে নতুন কোন প্রথাবিরোধী আধুনিক চিন্তা আনয়নের দরকার পড়ে।এভাবে এগোয় সভ্যতা,সমাজ।
ব্রিটিশ দের থেকে দেশ বিভাগের পর প্রথম প্রগতিশীল প্রথাবিরোধী চিন্তার প্রকাশ ঘটেছিল ভাষার প্রশ্নে যার পূর্ণরূপ পায় ৭১ এ।কিন্তু যে প্রগতিশীল চিন্তা,ধ্যান ধারণা এবং সম-অধিকারের স্বপ্ন নিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি।স্বাধীনতার পরপরই সেই স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে,হয়তো তা এখনও পড়েই আছে।সকল ধর্মের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা,পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা,নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা - এই অবশ্যপালনীয় কাজ গুলো আমরা আজও করে উঠতে পারেনি,বরং কোন কোন ক্ষেত্রে শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছি।মাঝে আমরা পার করে এসেছি সেনাশাসনের তিব্র অন্ধকার যুগ,৭১ এর অর্জিত স্বাধীনতা কে যা পিছিয়ে দিয়েছে কমপক্ষে ১০০ বছর।যখন অন্ধকারের তীব্রতা বেড়ে যায়,মানুষ তখন আলোর জন্য ছটফট করে।প্রগতিশীল মুক্তচিন্তাই এনে দিতে পারে এই আলো।হয়েছেও তাই।এজন্য এই সকল সময়ে হঠাৎ হঠাৎ করে কিছু আলোক রশ্মি ঝলক দিয়ে উঠেছে এবং আমাদের কে পথ দেখিয়েছে।
প্রথমেই যে বিস্ময়কর নামটি উল্লেখ করতে হয় তিনি হলেন কৃষক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর।সত্যিকারের স্বশিক্ষিত মানুষের চমকপ্রদ উদাহরণ তিনি।কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও কেবল মাত্র নিজের চেষ্টায় জ্ঞানার্জন করে তিনি যেসকল প্রশ্ন উত্থাপন করে গিয়েছেন,বই লিখেছেন সেগুলো আজও আমাদের দেশে বিরল।মুক্তচিন্তার এক সার্থক উদাহরণ আরজ আলী মাতুব্বর।অন্ধকারে তিনি খানিকটা আলো আমাদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন,আজও দেখিয়ে যাচ্ছেন।এই আলোর ধারাবাহিকতায় আরও তিমিরবিদারী আলোকরশ্মির দেখা পাই আমরা।
এর মধ্যে সব থেকে শক্তিশালী আলোক রশ্মিটির নাম হুমায়ুন আজাদ।প্রচলিত প্রথা কে তীব্র আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করার এমন অসাধারণ সাহস এর আগে কেউ করতে পারেনি।প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের জীব গুলো স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে নিচে টেনে নামাতে চাইবে এজন্য তাঁর সম্পর্কে কিছু ভুল ধারনা ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।আবার হুমায়ুন আজাদ কে ধারণ করার মত মস্তিষ্কও সার্টিফিকেটি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে খুবই বিরল।এই জন্য মূর্খ দের কাছে তিনি 'অসভ্য',তাঁর রচনা 'যৌন উত্তেজক'।সমাজে প্রচলিত সকল কুপ্রথা,ভন্ডামির বিরূদ্ধে এমন অকপট সত্য বলার সাহস কারও ছিলনা,ছিলনা সেই সত্য কে সহ্য করার ক্ষমতাও।তাই এখনও হুমায়ুন আজাদ নাম টি শুনলে ভন্ডরা,মুখোশধারীরা,মুর্খরা কেপে ওঠে।স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার পথিকৃত তাই হুমায়ুন আজাদ।তাঁর আগে আহমদ শরীফ তাঁর অসাধারণ সব লেখনিতে মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে গেছেন।হুমায়ুন আজাদ সহজে কারও প্রশংসা করতেন না,একমাত্র যে মানুষটির নিরবিচ্ছিন্ন প্রশংসা তিনি করে গিয়েছেন তিনি হলেন আহমদ শরীফ।
হুমায়ুন আজাদ তাঁকে গুরু মানতেন এমনটাই মনে হয় আহমদ শরীফ সম্পর্কে তাঁর লেখা গুলো পড়লে।সাধারণের কাছে আহমদ শরীফ নামটি খুব একটা পরিচিত নয় যতটা পরিচিত হুমায়ুন আজাদের নাম।এর কারণ সম্ভবত হুমায়ুন আজাদের উপর ঘটে যাওয়া নৃশংস হামলা এবং জার্মানিতে তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু।সেই সাথে হুমায়ুন আজাদের তীব্রতা ছিল সূর্যের মত তেজদীপ্ত,তার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না- আগেই উল্লেখ করেছি একথা।জীবিত হুমায়ুন আজাদের থেকে মৃত হুমায়ুন আজাদ কোটি গুন বেশি শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে।মুক্তচিন্তার বিকাশে তাঁর সৃষ্টি গুলো বাংলা সাহিত্যে এবং বাংলাদেশে 'আসমানি কিতাব' সমতুল্য।
'মুক্তচিন্তা' বিকাশে আর যে মানুষটির নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে তিনি হলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।অনেকেই ভ্রু কুচকে তাকাবেন এবং বলবেন, "জাফর ইকবাল তো ধর্ম নিয়ে লেখেননি কিংবা তিনি নিজেকে 'নাস্তিক' বলে ঘোষণা দেননি রবং তাঁকে কেউ এই অভিযোগ করলে তিনি সেটা অস্বীকারও করেছেন।" এই কথা যারা বলবেন তারা আসলে 'মুক্তচিন্তা' ব্যাপারটি সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন।যথাস্থানে এ বিষয়ে উল্লেখ করব।যাই হোক,মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর সব থেকে বড় কৃতিত্ব হল তরুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা সৃষ্টি,যা কিনা মুক্তচিন্তার প্রাথমিক এবং মূল শর্ত।বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা,কঠিন ও অজানা বিষয় গুলোকে সহজ ভাষায় শিশু-কিশোর-তরুন দের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া এবং মুক্তিযুদ্ধ কে বর্তমান প্রজন্মের হৃদয়ে পৌছে দেয়ার কঠিন দায়িত্বটি তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন এবং করছেন।এই কারনে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠির রোষানলে রয়েছেন তিনি।তাঁকে 'মুরতাদ'(ধর্মত্যাগী) আখ্যা দিয়ে হত্যা করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে,একাধিক বার তাঁর উপর হামলাও হয়েছে। বাংলাদেশে যদি আবারও বুদ্ধিজীবী হত্যা হয় তাহলে সবার আগে এই মানুষটিকেই হত্যা করা হবে।মুহম্মদ জাফর ইকবাল নামটিও অন্ধকারের জীব দের কাছে আতংকের।
স্বাধীন দেশে আমরা এমন অল্প কিছু সাহসি মানুষ কে পেয়েছিলাম,আর আগে থেকেই আমাদের ভান্ডারে ছিলেন বিদ্যাসাগর,বেগম রোকেয়া,নজরুল সহ আরও অসংখ্য মণীষা।আমাদের বর্তমান প্রজন্মটির মধ্যে যারা এদেশীয় এবং বিদেশী মনীষী দের সঙ্গ পেয়ে বড় হয়ে উঠেছে (বই এর মাধ্যমে!)তারা পৃথক হতে বাধ্য।এই পৃথক আলোকসংগ প্রাপ্ত তরুনরাই আজকের মুক্তমনা,মুক্তচিন্তার অধিকারী।সেদিন একজন হুমায়ুন আজাদ যা লিখতেন আজ হাজারও তরুন অনলাইনের জগতে সেগুলো লিখে যাচ্ছে।একজন আরজ আলী যে সকল প্রশ্ন করতেন আজ আরও হাজারো তরুন সেই প্রশ্ন করছে,প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করছে।একজন জাফর ইকবাল বিজ্ঞান নিয়ে যে বই লেখেন তেমন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের কথা লিখে যাচ্ছে আরও অসংখ্য তরুন।মুক্তচিন্তা ব্যাপারটি কী কিংবা মুক্তমনা কারা এই ব্যাপারটি নিয়ে এবার কথা বলা যেতে পারে।
মুক্তচিন্তার বিপরীত হল বদ্ধচিন্তা।বদ্ধচিন্তা হল নতুন কিছু গ্রহণ করতে না পারা, প্রথাবদ্ধ নিয়মের বাইরে যেতে না পারা,ছোট বেলা থেকে যা শুনে এসেছে সেগুলোকেই ধ্রুব বলে 'বিশ্বাস' করা।অর্থাৎ বদ্ধচিন্তা বা চিন্তাহীনতার জন্ম 'বিশ্বাস' থেকে এবং মুক্তচিন্তার জন্ম 'সংশয়' থেকে।আর সংশয়ের জন্ম হয় জ্ঞান থেকে।কোন কিছু বিশ্বাস করতে সেটি সম্পর্কে জানা লাগেনা,কেবল বিশ্বাস করলেই চলে।বিশ্বাস করতে হলে জ্ঞানের দরকার হয়না,বরং লালন করতে হয় অজ্ঞানতা কে।অজ্ঞানতা থেকে বিশ্বাসের জন্ম।যেটি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান নেই সেটিকেই বিশ্বাস করতে হয়।যেমন কেউ বলেনা আমি 'বাতাসে বিশ্বাস করি' কিংবা আমি 'আলুতে বিশ্বাস করি'।কারণ এগুলো আছে,এগুলোকে আমরা জানি,এগুলো বিশ্বাস করতে হয়না।কিন্তু আমাদের ভূতে 'বিশ্বাস' করতে হয়,জ্বীনে 'বিশ্বাস' করতে হয়,'সৃষ্টিকর্তায়' বিশ্বাস করতে হয়।যখন আমরা বিভিন্ন বিষয় জানব,নতুন জ্ঞানের সাথে পরিচিত হব তখনই আমরা ছোটবেলা থেকে যেসব অযৌক্তিক বিষয় শুনে এসেছি সেগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন জাগবে,সংশয় সৃষ্টি হবে,আমরা প্রথার বাইরে এসে নিরপেক্ষ ভাবে বিজ্ঞানের সাহায্যের সেটিকে পরীক্ষা করে দেখতে চাইব- এই ব্যাপারটিই হল মুক্তচিন্তা।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে ধারণা করা হয়,মুক্তচিন্তা কেবল মাত্র ধর্ম নিয়ে (বা ধর্মের বিরূদ্ধে) চিন্তা।ব্যাপারটি মোটেও তা নয়।মুক্তিচিন্তক হলেই একজন নাস্তিক হবে - তাও নয়।তবে একজন মুক্তচিন্তক বা মুক্তমনা অবশ্যই সংশয়বাদী।প্রতিটি ব্যাপারকে সেটা ধর্ম সংক্রান্ত হোক বা সামাজিক-রাজনৈতিক কোন মতাদর্শ হোক- তারা প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে,কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে মুক্ত ভাবে চিন্তা করে থাকে।যে দুটি মাপকাঠিতে এই চিন্তা আমরা করব তার একটি হল বিজ্ঞান অন্যটি মানবতা।অর্থাৎ ব্যাপারটি বিজ্ঞানসম্মত কিনা এবং মানুষের জন্য উপকারী/মঙ্গলজনক কিনা।এরপরেও মুক্তচিন্তার সাথে ধর্মের ব্যাপারটি এসেই যায় কারণ সকল ধর্মের ভিত্তি হল অবৈজ্ঞানিক কিছু কুসংস্কার।ধর্মে অসংখ্য নীতিবাক্য এবং অসংখ্য ভাল ফলদায়ক ব্যাপার রয়েছে কিন্তু একই সাথে ধর্ম গুলোতে রয়েছে অসংখ্য পৌরাণিক কল্পকাহিনী যা ধর্ম গুলো সত্য বলে দাবি করে।এখানে বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষ বাধে ধর্মের।আবার ধর্ম গুলোতে অসংখ্য মানব কল্যাণ মূলক বিষয় থাকলেও আবার রয়েছে এমন কিছু নির্দেশনা যা অন্য ধর্মের কিংবা সামগ্রিক মানবতার জন্য ক্ষতিকর।একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
বিজ্ঞান নিয়ে যার সামান্যতম জ্ঞান আছে সেও মহাকর্ষ,অভিকর্ষ এই ব্যাপার গুলো জানে।যারা বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করে তারা হয়তো সূত্র ধ্রুবক সমীকরণ সহ আরও খুটিনাটি বিষয় জানে এবং ব্যাপারটি বোঝে।তারা এটাও বোঝে যে এই সূত্রের লংঘন কোন ভাবেই সম্ভব না কারণ এটাই প্রকৃতির নিয়ম।যদি তাই হয়,তাহলে মহাকর্ষ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা কারও পক্ষে ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহম্মদের 'মেরাজ' এর কাহিনী বিশ্বাস করা বা মেনে নেয়া সম্ভব নয়।যে মহাকর্ষ বোঝে সে জানে 'বোরাক' নামক কোন বাহনে চড়ে উর্ধাকাশে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়।কাজেই অবশ্যই মেরাজের ঘটনাটি একটি কাল্পনিক কাহিনী মাত্র।আবার এই মেরাজ কে অস্বীকার করলে ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি নামায এবং রোযা কে প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হয় কারণ ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ি মেরাজে গিয়েই মুহম্মদ (স) পাচ ওয়াক্ত নামায এবং ৩০ রোযার নির্দেশ নিয়ে এসেছিলেন আল্লাহর কাছ থেকে।এখন একজন বিজ্ঞানমনস্ক মুক্তচিন্তক এই ক্ষেত্রে কী করবেন?
বিজ্ঞানের সুস্পষ্ট প্রমাণিত সূত্রাবলী কে নির্লজ্জের মত না দেখার ভান করে আমি আমার 'বিশ্বাস' কে আকড়ে ধরে রাখতে পারি,এতে মহাকর্ষ সূত্রের কিংবা এই নিয়মের কোন ক্ষতি হবেনা।আবার আমি যদি আসলেই মুক্তচিন্তার অধিকারী হই আমি সত্য কে 'কমনসেন্স' ব্যবহার করে মেনে নিতে পারি এবং এতদিন যা 'বিশ্বাস' করে এসেছি তা যে অযৌক্তিক একথা স্বীকার করতে পারি।মূলত এসকল কল্পকাহিনীর কারণেই মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে অবধারিত ভাবে ধর্ম এসে পড়ে এবং সংঘাত বাধে।
ইসলাম,খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্ম গুলোর প্রত্যেক টি তে অন্য দুটি ধর্মের অনুসারি দের কে শত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং হত্যার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।এই নির্দেশ অনুসরণ করে যদি এই তিনটি ধর্মের লোকেরা ধর্মপালন করতে যায় তাহলে সমগ্র পৃথিবীতে যুদ্ধাবস্থাই লেগে থাকবে।হিন্দু ধর্মে প্রচলিত বর্ণপ্রথা মানবতার জন্য নিকৃষ্টতম ব্যাপার এটা বুঝতে সাধারণ মানবিক চেতনা থাকাই যথেষ্ট। ধর্ম বাদ দিয়ে কেবল মাত্র সাধারণ মানবিকতা ব্যবহার করেই বলা যায় এই সকল নির্দেশ গুলো অমানবিক।ধর্মের নির্দেশের বাইরে এসে এই যে মানবিক চিন্তা এটাই মুক্তচিন্তা।
আবার একই সাথে একজন মুক্তচিন্তক যে শুধু ধর্ম নিয়েই পড়ে থাকবে এমন নয়।শুধু ধর্ম নয় সমাজের প্রচলিত প্রতিটি প্রথা বিজ্ঞান ও মানবতার কষ্টি পাথরে ঘষে পরীক্ষা করে দেখে একজন মুক্তচিন্তার অধিকারী মানুষ।মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন ব্যক্তি সবার মত কেই সম্মান করবেন,আমন্ত্রণ জানাবেন কিন্তু গ্রহণ বা বর্জন করবেন ঐ মাপকাঠিতে পরিক্ষা করে।একজন মুক্তমনা একজন অসাধারণ পাঠক।তিনি যেমন ইমাম গাজ্জালীর 'আদর্শ জান্নাতি রমনী' পড়বেন আবার হুমায়ুন আজাদের 'নারী' ও পড়বেন।পড়ার পর গাজ্জালির বইটি ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন কারণ যুক্তি-বিজ্ঞান-মানবতার মাপকাঠিতে বইটি নেগেটিভ মার্কিং পাবে,অন্যদিকে নারী বইটি নিয়ে আলোচনা করবেন,খুটিয়ে দেখবেন এবং আরও জানবেন।নারী লিখতে যে বই গুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে সেগুলোও পড়বেন।এবং লেখনি শক্তি থাকলে এই বার্তা গুলো অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেবেন- কারণ এটি তার দায়িত্ব।
বদ্ধচিন্তার মানুষের সাথে মুক্তচিন্তার মানুষের পার্থক্য হল বদ্ধচিন্তার মানুষের অসংখ্য ঈশ্বর থাকে- তার ধর্মীয় ঈশ্বর থাকে,তার রাজনৈতিক ঈশ্বর থাকে- এই সকল ঈশ্বরের বাণী তার কাছে ধ্রুব সত্য,এর বাইরে তারা যেতে পারেন না।ধর্মীয় ঈশ্বর তো বটেই,রাজনৈতিক ঈশ্বরের কোন ভুলও তার চোখে পড়েনা,তারা যা বলে সে তাই পালন করে,নিজের চিন্তা দিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করে চলেনা।অপরদিকে মুক্তচিন্তার মানুষের কোন ঈশ্বর নেই।সৃষ্টিকর্তায় তার বিশ্বাস থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু সেটা অবশ্যই সংশয়যুক্ত বিশ্বাস এবং সে সৃষ্টিকর্তা কে ঈশ্বরের পর্যায়ে নিয়ে যায়না,সৃষ্টিকর্তার বাণী বা নির্দেশও সে মুক্ত ভাবে বিচার করতে পারে।তার কোন রাজনৈতিক ঈশ্বরও নেই,নেই কোন মতাদর্শিক ঈশ্বর।যেমন আমি বঙ্গবন্ধু কে আমি ভালবাসি,কিন্তু তিনি আমার ঈশ্বর নন,তাঁর ত্রুটি সমূহের সমালোচনা করা আমি দোষের মনে করিনা।হুমায়ুন আজাদ কে ভালবাসি,তাঁকে আদর্শ মানি কিংবা তাঁর সৃষ্টি গুলোর মধ্যে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পাই কিন্তু হুমায়ুন আজাদ আমার মতাদর্শিক ঈশ্বর নন,সময়ের স্রোতে তাঁর কোন ধারণা ভুল বা ভ্রান্ত প্রমাণিত হলে কিংবা তাঁর সমালোচনা যোগ্য কিছু পেলে সেটা নিয়ে কথা বলতেও আমার কোন অসুবিধা হবেনা। এটাই হল মুক্তচিন্তা আর বদ্ধচিন্তা/চিন্তাহীনতার মূল পার্থক্য।
একজন মুক্তচিন্তক বদ্ধচিন্তার বিরূদ্ধে কথা বলবে তার অস্ত্র জ্ঞান-যুক্তি-বিজ্ঞান ব্যবহার করেই।মুক্তচিন্তক বদ্ধচিন্তা কে আক্রমন করবে কিন্তু বদ্ধচিন্তার অধিকারী কাউকে নয়।অপরদিকে বদ্ধচিন্তার অধিকারী একজন মানুষের নানাবিধ 'অনুভূতি' খুব সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত হয় বলে তারা মুক্তচিন্তার মানুষ টিকেই আঘাত করে,হত্যা করতেও কুন্ঠিত হয়না।কারণ নিঃসন্দেহে মুক্তচিন্তাকে পরাস্ত করার মত কোন কিছু বদ্ধচিন্তার কাছে নেই।তাই মানুষটিকে থামিয়ে দেয়াই তাদের জন্য সহজ।কিন্তু বদ্ধচিন্তার সমাজ হল অন্ধকার সমাজ,সেখানে জ্ঞানের বিকাশ ঘটেনা এবং মানুষের কোন অগ্রগতি সাধিত হয়না।একারণেই মুক্তচিন্তার দরকার,মুক্তচিন্তার মানুষের দরকার।কারণ যুগে যুগে মুক্তচিন্তার মানুষের দ্বারাই যাবতীয় প্রগতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্লগার দের মধ্যে একটি বিশাল অংশ এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।পরিবর্তনও চোখে পড়ছে।আর একারণে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিও ভীত।যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের সহযোদ্ধা ব্লগার দের লাশ পড়ে থাকতে দেখছি রাজপথে।মুক্তচিন্তা কে যাদের ভয়,মুক্তচিন্তা যাদের মিথ্যার আসন টলিয়ে দিতে পারে তারা হত্যার মাধ্যমে থামিয়ে দিতে চায় চিন্তার এই ধারাকে,কারণ এই যুক্তিকে বিজ্ঞান কে ভিত্তি করে যে মুক্তচিন্তার ধারা গড়ে উঠেছে তার মুখোমুখি হওয়ার মত কোন জ্ঞান অন্ধকারের এই জীব দের নেই।কাজেই এখন মুক্তচিন্তার পক্ষে কথা বলা,মুক্তমনা হয়ে কথা বলা মানে জীবন হাতে নিয়ে কথা বলা।অবশ্য এটা নতুন কিছু তো নয়,সেই সক্রেটিস-ব্রুনো-গ্যালীলিও-হাইপোসিয়া-হুমায়ুন আজাদ থেকে আজকের অভিজিৎ সকলেই তো এই পথেরই পথিক।মহান সব ব্যক্তির জ্ঞানের উপরে শুধু নয় তাদের লাশের উপরে-রক্তের উপরে আমাদের সভ্যতা নির্মিত হয়েছে।
কিন্তু আমাদেরকেও আমাদের লক্ষ থেকে বিচ্যুত হলে চলবেনা।মনে রাখতে হবে আমাদের অস্ত্র জ্ঞান-যুক্তি-বিজ্ঞান।দা-তলোয়াড়-চাপাতি আমাদের অস্ত্র নয়।আরও একটি ব্যাপার আমাদের মনে রাখতে হবে।জ্ঞান যার সম্বল সে জানে জয় তার হবেই,জ্ঞানের গুণেই সে বিনয়ী।অন্যদিকে বদ্ধচিন্তার মানুষেরা যখন যুক্তিতে হেরে যায় তখন তাদের সম্বল হয়ে গালি গালাজ ও নোংরা কথন।আমাদের কে পথ ভুলাতে এবং নিজেদের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে গালি দিয়ে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে তারা।আমরা যেন এই ফাদে পা না দেই।কখনও যেন গালি,নোংরা অশ্লীল কথনের সরণাপন্ন না হই। সেই সাথে বাংলাদেশের প্রেক্ষিত আরও একটি ব্যাপার মনে রাখা বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশে এখনও শিক্ষার হার সন্তোষজনক নয়।যারাও বা শিক্ষিত বলে বিবেচিত তারাও কতটুকু শিক্ষিত তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে।আমাদের অধিকাংশই শিক্ষা গ্রহন করে সার্টিফিকেট এবং চাকরির জন্য।জ্ঞান চর্চার হার এখানে দু অংকের নীচে এখনও।এমতাবস্থায় আমাদের কথা প্রচারের জন্য,জ্ঞানের আলো ছড়ানোর জন্য আমাদেরকেও কৌশলী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।আমরা এটাও জানি বদ্ধচিন্তার রাজত্বের প্রভাবে আমাদের দেশের মানুষ ধর্মের ব্যাপারে অনেক বেশি সংবেদনশীল।আমি প্রথমেই যদি বলি 'তোমার ধর্ম ভুল' তাহলে ঐ ব্যক্তি আমার আর কোন কথাই শুনবেনা।এমনিতেই তার মন বদ্ধ,এবার সে বদ্ধ দরজার উপরে আরও কয়েক স্তরের আবরণ বসিয়ে নেবে।আমি বরং তার সাথে বন্ধুর মত আলাপ করব।ধর্ম নিয়ে,বিজ্ঞান নিয়ে,তার চিন্তা ভাবনা নিয়ে।তাকে ভাবতে বাধ্য করব,প্রশ্ন করতে বাধ্য করব,উত্তর খুজে দেখতে বাধ্য করব।আমি কখনই বলব না, মেরাজ তো ভুয়া।আমি বলব মহাকর্ষের কথা,বলব এর বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।আমি বলব না আল্লাহ বলতে কেউ নেই,আমি বলব বিগ ব্যাং থিউরি,স্ট্রিং থিউরির কথা-সহজ ভাষায়।আমি বলবনা কুরান কোন আসমানি কিতাব নয়,আমি বলব আরবি না বাংলা কুরান পড় বেশি করে,মনযোগ দিয়ে।আমি বলবনা ইসলাম তো নারীকে সমঅধিকার দেয়নি,আমি আমার ছোট ভাই বোন কে 'নারী' বইটি পড়তে দেব।আমি বলবনা মসজিদ মন্দির কোন কাজের না,আমি বলব বেশি করে লাইব্রেরি চাই।আমি অজ্ঞানতা কে সরাসরি আঘাত করার থেকে জ্ঞানের আলো উসকে দিতে বেশি কাজ করব।আমি অভিজিৎ রায়,হুমায়ুন আজাদ কে নিয়ে প্রশস্তি বাক্য রচনা করবনা তাদের লেখা গুলো ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব।
সেই সাথে মনে রাখতে হবে মুক্তচিন্তার মানুষরা প্রগতির পথে জাতিকে যতটা এগিয়ে নিতে পারবেন অন্যরা তা পারবে না।তাই সিস্টেম কে ভাংতে আগে ঢুকতে হবে সিস্টেমের ভিতর।রাজনীতি,সরকার,প্রশাসন,শিক্ষা সকল ক্ষেত্রে থাকতে হবে মুক্তচিন্তার মানুষ দের।নিজেদের কে নিয়ে যেতে এমন উচ্চতায় যেখানে থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ কে প্রভাবিত করা সম্ভব হবে।আমাদের দেশে মুক্তচিন্তার এই লড়াই সবে মাত্র জোড়দার হয়েছে,এটি এখনও শিশু পর্যায়ে।আঘাত আসবেই,কেননা এতদিন ধরে আসন গেড়ে থাকা অন্ধকারের জীবেরা এত সহজে কি তাদের আসন ছেড়ে দেবে?কিন্তু নিজেদের লক্ষ্য এবং বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখেই আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে,কৌশলী হতে হবে।নিজেদের কে উচ্চতর স্থানে নিয়ে যেতে হবে।নিঃশেষে জীবন বিসর্জনের মধ্যে অক্ষয় হওয়া যায় কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যেহেতু আমাদের এখানে পথপ্রদর্শক মুক্তচিন্তার অধিকারী খুবই কম তাই এই অল্প কজন কে যেকোন ভাবে,যেকোন কৌশলে বেঁচে থাকতে হবে- আমাদের জন্য,দেশের জন্য।হুমায়ুন আজাদ স্যারের লেখা পড়লে আফসোস হয় কেন তিনি আরও অনেক দিন বাচলেন না,তাহলে আরও অসাধারণ কিছু জিনিস পেতাম আমরা।অভিজিৎ দা'র কথা মনে পড়লেই ব্যথা আর বেদনায় হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠে,তার মত সোনার টুকরো আমরা কবে পাব?কিভাবে পাব?প্রয়োজনে কৌশলী হয়ে হলেও আমাদের,আমাদের কে রক্ষা করতে হবে।এটা ভয় নয় কিংবা পলায়ন নয়- এটা রণকৌশল।লেখা থামানো যাবেনা,মুক্তচিন্তার বিকাশ থামানো যাবেনা- সেই সাথে আমাদের কে যেন কেউ থামিয়ে দিতে না পারে সেটাও লক্ষ রাখতে হবে সমান ভাবে।যার যার কৌশল তারই ঠিক করতে হবে।
হুমায়ুন আজাদ,অভিজিৎ রায় শুধু নিজেদের জ্ঞান দিয়েই নয়- নিজেদের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে গেছেন।এই ভিত্তির উপর জ্ঞান আর আলোর প্রাসাদ টি নির্মানের দায়িত্ব এখন আমাদের কাধে।এই কাজে বিফল হলে চলবেনা,বিফল হওয়ার কোন সুযোগ নেই... (সংগৃহিত)
সুত্র:http://www.istishon.com/?q=blog/835
- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২