somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ বস্র বিতরণ : বিজ্ঞাপণের নতুন ধারা

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে বরিশালে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে তিন নারী। গুরুতর আহত আরো দশ জন। প্রতিবছরই এই ধরনের সংবাদ পাঠ করে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি আমরা। যাকাতের কাপড়ের দোকানে সবচাইতে সস্তা শাড়ী বা লুঙ্গি থাকে এবং তাই দেয়া হয় গরীব মানুষদের। এই সস্তা কাপড়, মাত্র কয়েকবার ধোলাইয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এই কথাটি যাকাতের কাপড় দেয়া এবং যাকাতের কাপড় নেয়া মানুষটি ভালভাবেই জানে। তবুও গরীব মানুষ নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ধস্তাধস্তি করে সংগ্রহ করেন যাকাতের কাপড়। কারণ যিনি যাকাতের কাপড়টি নিয়ে থাকেন সে বিক্রি করে দিয়ে থাকেন সেই যাকাতের কাপড় আবারো কোন এক যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গী বিক্রি করার দোকানে। কারণ হচ্ছে এই একি কাপড় তিনি আরো পেয়েছেন অতএব তাঁর আর প্রয়োজন নেই এই কাপড়ের। বিষয়টা হয়ে পড়েছে কোরবানির ঈদের কোরবানি করা পশুর মাংস যেভাবে গরীব মানুষ সংগ্রহ করে থাকে অতঃপর খোলা রাস্তার উপর বা বিভিন্য হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে দেয়ার মতো।আমাদের সমাজে ধনী, উচ্চবিত্ত এবং বিভিন্য সেলিব্রেটিরা তাঁদের ফেসবুক আইডি গুলীকে এখন কাজে লাগাচ্ছে তাঁদের নাম প্রচার করার কাজে। বিভিন্য সেলিব্রেটির ফেসবুক ঘুরে দেখা যায় তাঁরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যাকাতের কাপড় বিতরণ করছে এবং সেই সব ছবি খুব গর্ব সহকারে তাঁদের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করে বেড়াচ্ছে! আমাদের অনুসন্ধানে একটি চমকপ্রদ চিত্র উঠে এসেছে তাঁদের এহেন কাজকর্মে। যে সকল উচ্চবিত্ত/সেলিব্রেটিরা এহেন কাজ করে যাচ্ছে আদতে তাঁরা তাঁদের ইমেজ বা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ইমেজ কে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষদের থেকে সংগ্রহ করছে যাকাতের কাপড় এবং এই সব মানুষদের এহেন কাজে কিছু বিতর্কিত কর্পোরেট হাউজ স্পন্সর করে ঢাকা ও ঢাকার পার্শবর্তি অঞ্চলে বিলিবল্টন করে যাচ্ছে যাকাতের কাপড়ের নামে ”ঈদ বস্ত্র বিতরণ”। এতে সেই ব্যাক্তি এবং কর্পোরেট কোম্পানি বা হাউজের নাম প্রচার-প্রচারণা করে সমাজে নিজেদের সমাজ সেবক হিসেবে উপস্থাপন করছে। আরো আশ্চার্জজনক ভাবে দেখতে হচ্ছে, তাঁদের এহেন কাজকে তাঁরা যাকাতের কাতারেই ফেলতে চান না, তাঁরা বলে থাকেন আমরা শিশুদের মুখে একটু হাঁসি ফুটানোর জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। যদি তাই হয় তাহলে যাকাত দিন ঠিক মতো এই সব দুঃস্থ শিশুটির পরিবার থেকে শুরু করে গরীবদের মাঝে, তবেই তো সেই অসহায় মানুষটি স্বাবলম্বী হয়ে নিজেই নিজের সন্তান ও নিজের পরিবারের জন্য কিনে আনতে পারবে ঈদের নতুন পোশাক। এই বিষয়ে নিম্নে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।এবার আসুন যেনে নেই কোরআন-হাদিসে যাকাত ও ফিতরা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে ? যাকাত ও ফিতরা মুসলিম গরীবের হক। ফিতরা দিতে হবে প্রতি পরিবারের জনপ্রতি প্রায় আড়াই কেজি হিসেবে খাদ্যশস্য দিয়ে এবং ফিতরা দিতে হয় ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে। যেহেতু আমাদের দেশে ফিতরা খাদ্যশস্য দিয়ে ফিতরা দেয়া হয়না এই কারণে ফিতরা টাকায় নির্ধারন করা হয়। এবারের ফিতরা নির্ধারন করা হয়েছে ৬৫ টাকা জনপ্রতি। যেমন এক কেজি ইরি চালের দাম ২৬ টাকা হলে আড়াই কেজি চালের দাম হয় ৬৫ টাকা। অতএব আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসাব করে এই টাকার খাদ্যশস্য বা টাকা গরীবদের মাঝে বিতরণ করুন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে।যাকাত দেয়া মানে ভিক্ষা দেয়া না। যাকাত গরীব মুসলিমদের হক। যাকাত ইসলাম ধর্মে এসেছে শুধু মাত্র দুঃস্থ মুসলিম পরিবার গুলোকে স্বাবলম্বী করার জন্য। যাকাত দেয়ার নিয়ম হচ্ছে, একশত টাকায় আড়াই টাকা, এক লক্ষ টাকায় আড়াই হাজার টাকা, এক কোটি টাকায় আড়াই লাখ টাকা এই হিসাবে দিতে হবে। যাকাতের টাকা অবশ্যই নগদে প্রদান করতে হবে কেননা কেউ যদি যাকাতের টাকা দিয়ে বিভিন্য দ্রব্য কিনে গরীবদের মাঝে বিতরণ করে তাহলে দেখা গেলো সেই দ্রব্য আদতে সেই গরীব মানুষটির কোনই প্রয়োজন নেই। তখন সে বিক্রি করে দেয় সেই দ্রব্য। তবে গরীবদের চাহিদা অনুযায়ী যদি যাকাতের টাকা দিয়ে দ্রব্য কিনে তাঁদের মাঝে বিতরণ করা হয় তাঁতে কোন দোষের কিছু নেই। যাকাতের টাকা নগদে প্রদান করার উদ্দেশ্য একটাই, আর তাহলো সেই মানুষটি যেন যাকাতের এই টাকা দিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারে। লোক দেখানো বা নিজের নাম প্রচারের জন্য যে যাকাতের নামে শাড়ি-লুঙ্গী বিতরণ করে নিজেদের প্রদর্শন করছে, তাঁদের সোয়াব কখনোই হবে না। কারণ আমাদের প্রাণ প্রিয় মহা নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) স্বয়ং বলেছেন, তোমরা এমন ভাবে গরীবদের সাহায্য করবে যেন ডান হাত দিয়ে সাহায্য করলে তোমার বাম হাত ও টের না পায়। এর অর্থ হচ্ছে যাকাত বা সাহায্য করতে হয় গোপনে। যাকাতের টাকা দিয়ে ভ্যানগাড়ি বা রিকশা অথবা টং মুদির দোকান করে দিতে পারেন তাঁদের জন্য, এতে সমাজ তথা দেশ থেকে গরীব নামে কোন শব্দই আর থাকবে না, সবাই হবে স্বাবলম্বী।যাকাত কারা পাবে ? যাকাতের হকদার মুসলিম ফকির, মিসকিন এবং এতিম ছেলে-মেয়েরা। ফকির ও এতিম মানে কি এটা প্রায় সবাই জানলেও অনেকেই জানে না মিসকিন মানে কাদের বলা হয়েছে। মিসকিন আপনার আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী ও হয়ে থাকতে পারে, যারা এতোটাই গরীব যে লোক-লজ্জা, চোখ-লজ্জার ভয়ে আপনার কাছে বা কারো কাছে হাত পর্যন্ত পাতে না, তাঁদেরকেই মূলত মিসকিন বলা হয়। অতএব যাকাতের গুরুত্ব ইসলাম ধর্মে ব্যাপক ভাবে বলা হয়েছে। সুতারাং প্রত্যেকটা মুসলিম পরিবারের উচিৎ তাঁর নিজের গ্রামের বাড়ি বা নিজের বাড়ির আশেপাশে আগে খোঁজ করা কারা এই অসহায় অবস্থায় আছে এবং তাঁদের যাকাতের টাকা দাণ করে তাঁদের স্বাবলম্বী করার জন্য সাহায্য করা। যাকাত দেয়া উচিত এভাবে যাতে এবছর যিনি যাকাত পাচ্ছেন তিনি যেন পরের বছর যাকাত প্রার্থী না হন, সে যেন স্বাবলম্বী হন এবছরেই।আমরা সবাই জানি আমাদের সমাজে যাকাতের কাপড় বিতরণ মানে হচ্ছে নিজের নাম জাহির করা ঢাকঢোল পিটিয়ে। তাছাড়া কতজন মুসলিম পরিবার তাঁদের সম্পদের সঠিক হিসাব করে সঠিক ভাবে যাকাতের টাকা দিয়ে থাকে গরীবদের মাঝে এটা শুধু তাঁরা এবং আল্লাহ্‌পাক ভালো জানেন। তবে সর্বশেষ কথা হচ্ছে, পরীক্ষার খাতায় ভূল উত্তর লিখলে নাম্বার আসে শূন্য ঠিক তেমনি ভাবে উত্তর না লিখলেও নাম্বার আসে শুন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:৪৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×