বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে "গ্লোবাল সিটিজেনশিপ" আর "গ্লোবাল কালচার" ধারণাগুলোকে আমার কাছে "পাগলের সুখ মনে মনে"-জাতীয় ব্যাপার-স্যাপার মনে হয়।
দেশে বহুল চর্চিত একটা অভ্যাস হল ক্ষমতাবান, বিত্তবানদের সাথে লতায় -পাতায় হলেও নিজের আত্মীয়তা জাহির করা- উক্ত ক্ষমতাবান বা বিত্তবানদের সেই আত্মীয়তায় ন্যূনতম আগ্রহ না থাকলেও নিজেকে তাদের ক্ষমতায় বলীয়ান কিংবা তাদের বিত্তে ঐশ্বর্যমণ্ডিত হবার একটা কাল্পনিক তৃপ্তি পাওয়া যায়। বাঙালির গ্লোবাল কালচার চর্চায় আগ্রহের পিছনে মূলত “জাতে উঠার” তাগিদই কাজ করে, অর্থাৎ বাঙালি যে কসপোলিটানিজমটা করতে চায় সেটা কলোনিয়ালাইজেশনেরই একটা প্রোডাক্টের নামান্তর।
ইংরেজী সাহিত্যচর্চালব্ধ যশ-গুণেও জিয়া হায়দার হোসেনের "বাংলাদেশী" তকমাটা না মুছতে পারার আক্ষেপ আমাদের এসব নিয়ে ফিকির করতে আহ্বান করে (Oh, So Now I'm Bangladeshi?- New York Times দ্রষ্টব্য)।
স্কুলে ট্রান্সলেশনের সময় একটা বাংলা প্রবাদ পড়েছিলাম- স্নেহ নিম্নমুখী, অর্থাৎ ছোটদের স্নেহ করতে বড়দের যেমন আগ্রহ দেখা যায়, বৃদ্ধদের সেবায় ততটা দেখা যায় না। আমার মতে, গ্লোবাল সিটিজেনশিপের ডিগনিটিও নিম্নমুখী। তাই হয়ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সৈনিকদের আফ্রিকাযাত্রা সম্মানের; অপরদিকে আন্তর্জাতিক গেমস ইভেন্টে অংশ নিতে খেলোয়াড়দের বিদেশযাত্রায় বরং অবৈধ অভিবাসনের দুরভিসন্ধির সন্দেহটাই প্রকট থাকে (কাউকেই অসম্মান করছি না)।
কালচার নিয়ে আমি বাঙালি পিউরিটানিজমে নাই। অর্গানিকভাবে মানুষজন ভীনদেশের সংস্কৃতির উপাদান অ্যাডপ্ট করতেই পারে। কলোনিয়ালাইজেশন আর গ্লোবাল মিডিয়ার কল্যাণে গ্লোবাল কালচার একটা রূপরেখা পেলেও সেটার উপর ভিত্তি করে কোন কালচারাল আইডেন্টিটি হতে পারে না।
গ্লোবাল কালচারের নাম করে পুরো দুনিয়ার সংস্কৃতি মনোলিথিক করলে লাভ কার?- পুঁজিবাদীদের। মুক্ত বাণিজ্য আর দুনিয়াজোড়া হোমোজেনাস কনজিউমার- আর কী লাগে?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১