-তুই আমাকে এখন একটুও ভালবাসিস না।
-লক্ষী পাগলীটা বলে কি।অনেক ভালবাসি আমার তুলতুলি পাখিটাকে।
-সত্যি যদি আমাকে অনেক ভালবাসিস তাহলে আমরা যে চাইনিজ রেস্তেরায়টায় বসি ওখানে ১ঘন্টার মধ্যে আসবি।
-আজ অনেক ব্যস্ত লক্ষী সোনা চাদের কনা।কাল আসলে হয় না।
-দেখা করতে বললেই ঢং মার্কা ডায়লগ।বাকী সময় এইসব লক্ষী সোনা,তুলতুলি পাখি এইসব ডায়লগ কই থাকে শুনি?সম্পর্কের শুরুতে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে যেতি।আর এখন ১০০বার বললে একবার দেখা করিস।
-সেকি গত পরশু না তোর সাথে দেখা হল।
-তো কি হয়েছে?গত পরশু হয়েছে বলে কি আজকে দেখা করা যাবে না?এই তোর অনেক ভালবাসা!
-ওকে আর ক্ষেপতে হবে না।আমি এক ঘন্টার মধ্যে আসছি।
লাইন কেটে দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি ঝুম বৃষ্টি।সাথে ছাতাও নেই।রিক্সাওয়ালাকে যাবে কিনা জানতে চাইতেই ভাড়া যা বলল ফান আইডিয়াবাজ এন আই মানিকের বিখ্যাত ডায়লগ ‘বৃষ্টির ফোটা যতবেশী পড়ে রিক্সাওয়ালাদের ডিমান্ড ততবেশী বাড়ে।জমিদারদের ভাব দেখলে মনে হয় ফোটায় ফোটায় টাকা পড়ে ’ মনে পড়ে গেল।কিন্তু উপায় নায়।বাধ্য হয়ে চারগুন বেশী ভাড়ায় রিক্সায় উঠলাম।গুলশানের চাইনিজ রেস্তেরার সামনে যখন পৌছালাম তখন দুপুর একটা ১টা।বৃষ্টিতে টিশার্টটা ভিজে একাকার।প্যান্টের অবস্থাও সুবিধার না।আমাকে দেখেই মাসুমা ছাতা নিয়ে এল।রেষ্টুরেন্টের বারান্দায় দাড়ঁ করিয়ে ওড়না দিয়ে চুল মুছে দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ব্যাগ থেকে একটা টিশার্ট বের করে বলল,আমি জানতাম তুই গাধা ছাতা না নিয়েই বের হবি।তাই আসার পথে টিশার্ট নিয়ে এসেছি।ওয়াশরুমে গিয়ে পাল্টে নে।আমি খাবার অর্ডার করছি।
-বিল কিন্তু তুই দিবি।
-তোকে কখনো বিল দিতে দিয়েছি?এখন জলদি যা না হয় ঠান্ডা লেগে যাবে।তখন আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হাজার বার বলা লাগবে।
ওয়াশরুমে গিয়ে টিশার্টটা পাল্টে এসে চেয়ার টেনে বসেছি এমন সময় আমাদের বামপাশের টেবিলে বসা এক ছেলেকে একটা মেয়ে কলার ধরে বলল,এই তোর এক্সাম?আমাকে এক্সামের বাহনা দিয়ে এখানে আরেক মেয়ের সাথে চাইনিজ ফুড গিলছিস।ফোন করলেই ব্যস্ততা।আজকে এটা কালকে ঐটা।প্রতারক আজকে তোকে বাটপারির এমন শিক্ষা দেব যে প্রেমের ১৭গুষ্টি ভুলে যাবি।
এক প্রেমিকাকে নিয়ে চাইনিজ খেতে এসে আরেক প্রেমিকার কাছে এভাবে ধরা পড়ে ছেলেটা তব্দা খেয়ে গেল।যে মেয়েটার সাথে এসেছে সে মেয়েটা কলার ধরে রাখা মেয়েটাকে বলল,তোমার সাথে ওর সম্পর্ক কত দিনের?
-১বছরের বেশী।তোমার সাথে কতদিনের?
-৬মাস।না জানি আমাদের মত আরো কতজনের সাথে ও প্রেমের খেলা খেলছে বলে বসা থেকে উঠে ছেলেটার গালে ঠাস করে একটা বসিয়ে দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল।কলার ধরে রাখা মেয়েটিও আরো কয়েকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে বেরিয়ে গেল।
ঘটনার আকস্মিকতায় আশপাশের টেবিলের প্রেমিকারা প্রেমিকের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করল।বেশ কিছুদিন ধরে মাসুমা এমনিতেই ক্ষেপে আছে আগের মত সময় দিতে পারিনা বলে।এই ঘটনার পর না জানি কি কান্ড করে ভাবতে দেরী আমার হাত থেকে মোবাইলটা ছোঁ মেরে নিয়ে ইনবক্স,সেন্ট বক্স,ম্যাসেজ ডেলিভারী রির্পোট.কল হিস্টরি সব চেক করল।যে নাম্বারগুলোতে মিনিট তিনেকের বেশী কথা হয়েছে সে নাম্বারগুলো ওর নাম্বারে তুলে নিয়ে বলল,ঈমানে কইতাছি।তুই যদি এমন কিছু করিস না তাহলে আমি ওদের মত তোকে কয়েকটা চড় দিয়ে ছেড়ে দেব না।খুন করে ফেলব মনে রাখিস।এখন বল আমাকে কতটা ভালবাসিস।
-টেরাই কর আমারে কত্ত ভালবাসি তোমারে।
-ওরে বাপস!এই যে দেখি কঠিন ডায়লগ!দেখি সবার সামনে চিৎকারে করে বলতো,মাসুম তুই ছাড়া কারো হমুনা।
-ঐ আমার লজ্জা করবে না।
-ওলে ওলে লজ্জাবতী ছেলেরে!ভাবখানা এমন লজ্জাবতী পাতাও লজ্জার কাছে হার মানবে।তুই বলেছিস তোকে টেরাই করতে।ইতিং বিতিং লজ্জা না দেখিয়ে বলে ফেল।
-অন্য পরীক্ষা নিলে হয়না।
-ওকে রাস্তায় দাঁিড়য়ে দুই হাত দুই দিকে দিয়ে চিৎকার করে আমাকে ‘আই লাভ ইউ’ বলবি।
-ঐ আমরা কি সিনেমার নায়ক-নায়িকা নাকি!মানুষ কি বলবে?পাগল ভেবে দুইজনকে পাবনা পাঠিয়ে দেয় যদি?
-ইস!কি ইনোসেন্ট কথাবার্তা!যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা।এই তোর ভালবাসা।সামান্য একটা রেস্তেরায় জনা বিশেক প্রেমিক-প্রেমিকার সামনে বলতে পারবিনা আর বলিস অনেক ভালবাসিস!গুষ্টি কিলাই তোর ভালবাসার।থাক তুই আমি গেলাম।
সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছে দেখে লজ্জার মাথা খেয়ে একরকম চিৎকার করেই বললাম,মাসুমা তুই ছাড়া কারো হমুনা!এমন সিনেমাটিক ঘটনা অন্য সময় ঘটলে আশপাশের টেবিলগুলোতে জোড়া-জোড়ায় বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে তুমুল হাসির ঝড় উঠত।কিন্তু একটু আগের ঘটনায় আজ সবার মুখ ভারী।প্রেমিকাদের কঠিন সন্দেহের দৃষ্টি প্রেমিকের ভেতরটা দেখে নেওয়ার চেষ্টায় প্রেমিকদের বেহাল দশা।
মাসুমা ফিরে এসে ‘গুল্টু সোনাটা’ বলে আমার চুলগুলো নাড়িয়ে দিয়ে বিজয়নীরি বেশে চেয়ারে বসল।আশপাশের প্রেমিকাদের দেখিয়ে দিতে পারার গর্বে বেশ জোরেই বলল,আজকের পর তোর আত্মীয় স্বজন ছাড়া অন্য কোন মেয়েকে ফেসবুকে রাখতে পারবিনা।বুঝেছিস।
আস্তে করে বললাম,হ্যা।
-গুড বয়।এইবার তোর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড বল।বাসায় গিয়ে দেখব এতদিন কয়জনের সাথে টাংকি মারছিস।যদি উল্টাপাল্টা কিছু দেখিরে তাইলে কইলাম তোর একদিন কি আমার একদিন।খোলা ম্যানহোলে চুবিয়ে ছাড়ব বলে রাখলাম!
লগইন পাসওয়ার্ড বলে অনেক চেষ্টা করে মনে করতে পারলাম না অদেখা সোনিয়া,মুনিয়াদের সাথে দুষ্টামি ছলে টাংকি মারার ম্যাসেজগুলো ডিলেট করেছি কিনা.....
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৩২