যারা সময় ও টাকার অভাবে ঘুরতে যেতে পারেন না বলে অভিযোগ করেন।তাদের বলছি আফসোস না করে নিজের এলাকা টা ঘুরে দেখুন।কতোটা সুন্দর ভৌগলিক অবস্থানে আমরা বাস করি,সেটা কি কখনো খেয়াল করেছেন?
আমাদের এলাকার উত্তর ও পশ্চিম অংশে রয়েছে পাহাড়ের বুক চিড়ে আসা নদ- ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখা নদী হলহলি ও সোনাভরি ,পূর্ব প্রান্ত জুড়ে পাশে আসামের তুরা পাহাড় আর মেঘালয় এর ছোট বড় পাহাড় আর জিঞ্জিরাম নদী যেন পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছে পাহাড়ের গা ছুয়ে ছুয়ে।দুই দেশের মধ্যে দৃশ্যমান রেখাপাতও করেছে এই নদী।
দক্ষিন প্রান্তে রয়েছে রাজিবপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা।এই দুই উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারন।
চলুন দেখে নেই রৌমারী ও এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থান এবং ঘোরাঘুরির জায়গা গুলিঃ
১.বড়াইবাড়ী স্মৃতিসৌধঃ রৌমারী ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী গ্রামে বড়াইবাড়ী সীমান্ত ফারি অবস্থিত।২০০১ সালের বিডিআর ও বিএসএফ এর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে শহিদদের সমাধিস্থল এই বড়াইবাড়ী সীমান্ত ফারিতে অবস্থিত।
রৌমারী সদর থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। মটর সাইকেল/সাইকেল/রিক্সা/পিকআপ দিয়ে ইজলামারী নৌকা ঘাটে যেতে হবে। নৌকা ঘাট থেকে নৌকা পাড় হয়ে হেটে অথবা ভ্যানযোগে বড়াইবাড়ী স্মৃতিসৌধ যাওয়া যায়।
২.কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারঃউপজেলা পরিষদ থেকে পায়ে হেটেই এখানে যাওয়া যায়।
৩.ফলুয়ার চর ঘাটপারঃ রৌমারী সদর থেকে ফলুয়ার চর ঘাটপার যেতে হলে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৩ কি.মি. পথ। যেতে পারেন ভ্যান,নছিমন বা মটর সাইকেল যোগে।
প্রকৃতি যেন এখানে উদার হাতে সৌন্দর্য ছড়িয়েছে ।সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় বিধাতা যেন নিজেই রঙ তুলি নিয়ে বসেন এখানে।আর জোছনা রাতে পানির উপর জ্যোৎস্নার প্রতিফলন আপনাকে দিবে ঐশ্বরিক অনুভুতি।আর নদিতে যখন পানি কম থাকে তখন দল বেধে যেতে পারেন গোসল করতেও।
শরত কালে নৌকা নিয়ে কাশফুল দেখতে যেতে পারেন নদির ওপারে।কাসফুলের শুভ্রতা আপনার মন মাতিয়ে দিবে নিশ্চিত।
বেড়াতে যাওয়ার উত্তম সময় এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস।
৪.সাহেবের আলগাঃ রৌমারী উপজেলার সর্ব উত্তরে অবস্থিত এটি।এখানে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে দাঁতভাঙ্গা।তারপর শালুর মোড় ধরে আরও প্রায় ৪ কি.মিঃ।আর যেতে যেতেই পূর্ব পাশে চোখে পড়বে মাঠে কাজ করা কৃষক আর তার পিছনে আবছায়ার মতো চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারি।
আর সাহেবের আলগা ক্যাম্প থেকে একটু সামনে এগোলেই দেখতে পারবেন ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ।
দাঁতভাঙ্গা আপনি দুই ভাবে যেতে পারেন।বড়াইকান্দি দিয়ে সোজা পথে(যদিও এই দিকের রাস্তাটা বর্তমানে খারাপ)অথবা খঞ্জনমারা-পাখিউরা ঘাট হয়ে নতুন তৈরি পাকা সড়ক দিয়ে।
এখানে বেড়াতে যাওয়ার উত্তম সময় শরত কাল।যাওয়ার বাহন ভ্যান,নছিমন ও মোটর সাইকেল।
৫.কর্তিমারি ঘাট পারঃ কর্তিমারি ঘাটপার যেতে হলে বাস,ভ্যান বা নছিমন দিয়ে করতিমারি বাজারে নেমে তারপর আবারো ভ্যানে চড়ে ঘাটে যেতে হবে।আর মোটর সাইকেল থাকলে যেতে পারবেন সরাসরি।
সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় রঙের হোলি খেলা যেন চলে এখানে।চটকা জাল দিয়ে মানুষের মাছ ধরার দৃশ্য কিংবা নদী পারের মানুষের জীবন যাত্রা মুগ্ধ করবে আপনাকে।
ঘাট থেকে বেড়িয়ে আসার পর কর্তিমারি বাজারে নেমে খেয়ে নিতে পারেন সুস্বাদু লটপটি ও পরোটা।
৬.বর্ডার হাট,বালিয়ামারিঃবালিয়ামারিঃবাংলাদেশ-ভারত প্রথম যৌথ হাট এটি।হাট দেখতে তো যাবেনই।সেই সঙ্গে বলে নেই এর প্রাকৃতিক আবেদনও কিন্তু কম নয়।বয়ে চলা জিঞ্জিরাম নদী আর তার ঠিক কাছে মাথা ঘেসে দাঁড়ানো মেঘের রাজ্য মেঘালয়ের পাহাড়।নদি আর পাহাড়ের এমন অপূর্ব সংযোগ স্থল বাংলাদেশেই খুব কমই আছে। বর্ডার হাট এর বাঁশের পুল এ দাড়িয়ে প্রাণভরে উপভোগ করতে পারবেন দুই পাশের মনোরম দৃশ্য।
রাতের বেলা ব্রিজ এ বসে চাঁদও দেখতে পারেন চাইলে।বেড়াতে যাওয়ার উত্তম সময় জুন থকে সেপ্টেম্বর মাস।
যেতে হলে বাস,ভ্যান বা নছিমন দিয়ে বালিয়ামারি সীমান্ত ফারিতে নেমে আবারো ভ্যানে চড়ে বর্ডার হাটে যেতে হবে।আর মোটর সাইকেল থাকলে যেতে পারবেন সরাসরি।
৭.ডিগ্রির চর মাজারঃকামাল শাহ্ এর মাজার রয়েছে এখানে।মুল মাজার পাহাড়ের উপরে-ভারতের অংশে হলেও বাংলাদেশে রয়েছে অস্থায়ী মাজার।প্রতি বুধবার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ জন এখানে আসে মানতের ছিন্নি দিতে।
পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা একটি সরু ঝুরাও রয়েছে এখানে।ঝুরার স্বচ্ছ পানির উপর বসে থাকতে দেখা জায় ধবধবে সাদা বক।
রৌমারী সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কি.মি.। যেতে হলে বাস বা সিএনজি যোগে ডিগ্রির চর বাজারে((রৌমারি-ঢাকা রোড) নেমে ভ্যানে চড়ে বা পায়ে হেটে যেতে হবে মাজারে।আর মোটর সাইকেল থাকলে যেতে পারবেন সরাসরি।
৮.মাদারটিলা ব্রিজঃ রৌমারী উপজেলার সব চেয়ে উচু ব্রিজ এটি।যারা জোছনা পিপাসু তাদের জন্য এই ব্রিজ হতে পারে আদর্শ স্থান।কোন এক পূর্ণিমা রাতে মোটর সাইকেল যোগে হুট করে চলে যেতে পারেন এই ব্রিজে।এখানে গেলে যে আপনি চন্দ্রাহত হবেন তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।
রৌমারী সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কি.মি.।গোয়ালগ্রাম বাজার হয়ে কর্তিমারির দিকে যেতে পরবে এই ব্রিজ।
৯.পাথরের চর ব্রিজঃসবার প্রিয় একটি বিনোদের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাথরের চর ব্রিজ।বিশেষ করে ঈদ এর দিন এখানে দশনার্থীদের উপচে পরা ভিড় থাকে।
দক্ষিন দিকে যেতে যেতে হঠাৎ করে পথ ভুলে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে চলা জিঞ্জিরাম নদী আর আর পূর্ব পাশে থাকথাক করে সাজানো মেঘালয়ের পাহাড় আর মেঘ সব কিছু মিলিয়ে অপূর্ব এক স্থান পাথরের চর ব্রিজ।
যদি সৌভাগ্যবান হন তবে ডিসেম্বর,জানুয়ারী মাসে দেখা মিলতে পারে বুনো হাতিরও।
আর জোছনা ভাগ্য ভালো থাকলে পাহাড়ের চূড়ায় আগুন লাগিয়ে হঠাৎ করে লাফ দিয়ে বের হয়ে আসা গোলাকার চাঁদও দেখতে পারবেন।
রৌমারী সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কি.মি. বাস,সিএনজি বা মোটর সাইকেল যোগে সরাসরি পাথরের চর ব্রিজ এই নামতে পারবেন(রৌমারি-ঢাকা রোড)।বছরের যেকোনো সময় এখানে আপনার ভালো লাগবে।
এছারাও ঘুরে আসতে পারেন ধর্মপুর, বেহুলার চর এবং চান্দার চর সীমান্ত।
সকল ছবিঃনিজস্ব।
সাবধানতাঃ
১.নদিতে স্রোত থাকার সময় গোসল করলে সাবধানতা অবলম্বন করবেন,সাতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিবেন।
২. সীমান্তে চলাচলের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। সীমান্ত যাতে অতিক্রম না করেন সেদিকে খেয়াল রাখুন। বেশি সাহস দেখিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি যাবেন না।
তথ্যসুত্র- সরকারী তথ্য বাতায়ন এবং ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:১৩