আমরা দেখব কোটা পদ্ধতি কতটা যৌক্তিক। আমাদের সংবিধানের ২৮(১) এ বলা আছে রাষ্ট্র কারও প্রতি বৈষম্য করবে না। ২৯(১) এ বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিক সমান। এতে বুঝা যায় যে, কোন কোটা থাকা উচিৎ না। কিন্তু ২৯(৩)এর(ক) তে আছে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করার জন্য তাদের জন্য বিশেষ বিধান থাকবে। এতে আমরা রাষ্ট্রে কোটা ব্যবস্থা থাকার সাংবিধানিক যৌক্তিকতা দেখতে পাই। তবে তা শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য।
এখন প্রশ্ন হলো অনগ্রসর কারা। প্রতিবন্ধীরা অনগ্রসর। উপজাতি শ্রেণি ভৌগোলিক ও ভাষার কারণে অনেক পিছিয়ে। পিছিয়ে রয়েছে আমাদের দেশের ছিন্নমূল মানুষ। আছেন চরম দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে এমন মানুষজন। হ্যাঁ যদি আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ পিছিয়ে পড়া হিসেবে বিবেচিত হন তাহলে তিনি কোটার সুবিধা পাওয়ার অধিক হকদার। আবার কোটাধারীদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য হন বা এদের কেউ বা কোন শ্রেণি যদি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা কোটার সুবিধা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার হারাবেন।
মেয়েরা এক সময়ে পিছিয়ে ছিল। গত কয়েক বছরে দেখা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি।সব ক্ষেত্রে তাদের অংশ গ্রহণ বেড়েছে।সুতরাং এখন নারীদের জন্য কোটা প্রযোজ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার দরকার। জেলা কোটার অযৌক্তিকতা নিয়ে বিশেষজ্ঞগণ অনেক আগেই তাদের মত প্রকাশ করেছেন।
এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে কোটা কারও জন্য পুরস্কার নয়। পুরস্কারের জন্য রয়েছে রাষ্ট্রপতি পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার ও নোবেল পুরস্কারসহ অন্যান্য পুরস্কার। এর চেয়ে বড় পুরস্কার হল মানুষের মনের কোঠায় ভালোবাসার জায়গা করে নেওয়া। সর্বদা তাদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে তাদের আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করা। সুতরাং যদি পুরস্কার হিসেবে কাউকে কোন কোটা দেওয়া হয় তাহলে তা হবে সংবিধান বহির্ভূত মানবাধিকার বিরোধী।
কাউকে যদি একবার কোন সুবিধা দেওয়া হয় সেটা যতই অযৌক্তিক বা সংবিধান বিরোধী হোক না কেন তা তারা ছাড়তে চাইবে না। বরং সে সুবিধা পাওয়ার জন্য যেকোন পন্থা অবলম্বন করবে। প্রয়োজনে টাকা দিয়ে সনদ কিনে নেবে।
আমরা একটি দুর্ভাগা জাতি। এ দেশ স্বাধীন করার জন্য যিনি পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পেয়েছেন একটি ভূখণ্ড।একটি মানচিত্র। সে ভূমিকে তার রক্তে রঞ্জিত হতে হয়েছে। যারা এ দেশ স্বাধীন করার জন্য বাড়ি-ঘর ছেড়েছেন, তাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু আমরা দিতে পারি নি। তাদেরকে কলঙ্কিত করেছি তাদের সাথে একঝাঁক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যোগ করে। সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায় সনদধারী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। খবরে জানতে পারলাম আরও প্রায় দেড় লাখ আবেদন জমা পড়েছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নতুন করে নাম তোলার জন্য।
যদি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, নারীদের উপবৃত্তি আরও বৃদ্ধি করা হয় তবু এ দেশের মানুষ কিছুই বলবে না বরং সাধুবাদ জানাবে কিন্তু আমাদের এই ছোট্ট জনবহুল উন্নয়নশীল দেশে ৫৬% কোটা রেখে মেধাবীদের বঞ্চিত করা বড্ড বেমানান।
সুতরাং সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়তে মেধাকে মূল্যায়ন করে কোটা সংস্কার জরুরী। প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ বেকারের এই দেশে মেধাবীদের হতাশ না করে তাদেরকে দেশ গড়ার কাজে সুযোগ দিলে আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা উপহার পাবো।
জহিরুল শামীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।