টাইটানিক মুভি দেখেনি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। মুভির মূল আকর্ষণ ছিল শেষ মুহূর্তে নায়ক বরফ পানিতে ডুবে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর নায়িকা যখন নায়কের হাত ছেড়ে দেয় তখন সে ধীরে ধীরে পানিতে ডুবে যায়। এরকম মুভির উদাহরণ আরো অনেক আছে যেখানে নায়কের/নায়িকার মৃত্যু হয়, যার ফলে আমাদের মত আম-জনতা/দর্শকের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আর অভিনেতা পরিচালক প্রযোজক সবাই খুশি, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, মুভি সুপারহিট ব্লকব্লাস্টার।
কোন মুভিতে নায়ক মারা গেলে আমরা ব্যথিত হই, আমাদের মন খারাপ থাকে। কিন্তু ভিলেন মারা গেলে আমাদের কিছুই যায় আসে না, মন খারাপও হয় না। আমরা মনেই করে থাকি যে ভিলেনের মরা উচিত। সে অপকর্ম করছে তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। ঠিক তেমনি, নায়ক ছাড়া অন্য কেউ যেমন নায়িকার বাবা, কিংবা নায়কের কাছের বন্ধুটি কিংবা টাইটানিক মুভিতে জাহাজ ডুবে মারা যাওয়া শত শত মানুষ মরলেও আমাদের কিছু যায় আসে না। কোন রকমে নায়ক বেঁচে থাকলেই হল। জনতা খুশি।
একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার আমার চারপাশে কত মানুষ অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে? বাস দুর্ঘটনা, লঞ্চডুবী, ডাকাতি, বোমাবাজীতে কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে? তার হিসাব কি আমাদের আছে? অথচ হটাত কোন এক রাজনীতিবিদ, কোন এক আমলা, কোন এক ব্লগার কিংবা কোন এক জনকে নিয়ে আমরা লেগে থাকি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলি তার জন্যে। কেন শুধু একজনকে নিয়ে বারবার লিখছি। অন্য যারা মারা যাচ্ছে তাদের কি দোষ? তাদের নিয়ে কেউ লিখে না কেন। কারণ কি?
কারণ, সবাই নায়ক না, সবাইকে নিয়ে কথা বললে হিট হওয়া যাবে না। সমুদ্রে হাজার মানুষ ডুবে গেলে আমাদের মায়া লাগে না। কিন্তু কোন এক মিঠুন চক্রবর্তী যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন আমাদের কান্না পায়। এটাই আমাদের মানষিকতা। হাজার বছর ধরে এই মানষিকতা আমরা লালন করে আসছি। যে মানষিকতায় মানবতা শুধু বড়দের জন্যে, ছোটরা সবসময় নিগৃহীত। কবি যখন বলে “এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি” তখন আমরাও সিদ্ধ হস্তে যার আছে তাকেই দেবার জন্যে প্রস্তুত থাকি। আমরা এমনই, আমরা এভাবেই থাকতে পছন্দ করি।