ঢাকা থেকে এক খালাতো ভাই এসেছে।নাম রিণ্টু। জন্ম থেকেই ঢাকায় বড় হয়েছে।স্বভাবতই চিটাইংগা ভাষা বুঝে না।আমাদের কথোপকতন সে কান খাড়া করে শুনে।আর সু্যোগ পেলে বলে, ভাইয়া কিছু তো বুঝি না।কেমন যেন মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করছে মনে হচ্ছে।
তাকে বললাম এটা তেমন কিছু না। দুই দিনে শিখায় দিব।
সে বেশ আগ্রহে শিখার অপেক্ষায় আছে।এই সময় টিভিতে অনুষ্ঠান চলছিল।এসময় এক ছোট ভাই চিল্লায় ডাক দিল,"অ..মা, অ..মা কুঁইর, কুঁইর দেহার"।
শুনেই রিণ্টু বলল, ভাইয়া ও কি বলল?
আমি বললাম- বলেছে, মা,মা কুমির দেখাচ্ছে।
রিণ্টুঃ ও আচ্ছা, তাহলে চিটাইংগা ভাষায় কুমিরকে কুইর বলে।
আমিঃএই তো ভাল ভাবেই শিখে যাচ্ছ তুমি।কদিন পর পুরোটা বুঝে যাবে।
(এসময় তার অশেষ আগ্রহ দেখে বললাম)ঐ যে বাহিরে যে মুরগি দেখছ, ওগুলোকে আমরা কোরা বলি।
-আচ্ছা, কোরা মানে মুরগি। তাহলে হাঁস কে কি বলে?
-হাঁস কে বলে আশ্।
-আঁশ?
-আরে, ধুর আঁশ না। আশ্। স্বর আ + শ+ হসন্ত।
-বুঝছি আশ।
-আশ্ ঠিক আছে। তবে একটু ঠেলা দিয়ে বলতে হবে। আচ্ছা চল নদীতে গোসল করে আসি।
-ভাইয়া তোমরা নদীকে কি বল?
-নদীকে বলি খাল।
-ও এটা ঠিক আছে।সহজ।
-আরে বললাম তো চিটাইংগা ভাষা সহজ।
(রিণ্টুকে নিয়ে নদীতে যাচ্ছি। পাড়ার কয়েকটা ছোট ছেলেও ছিল।নদীর পাড়ে গিয়ে একজন হটাৎ চিল্লায় উঠলো। "অবাজি, কুইর ওগ্গা, হালত কুইর ওগ্গা দেহা যার"। ছেলেটার কথা শুনে রিণ্টু ভয়ে চিল্লানি দিল।)
-ভাইয়া,আমি যাব না। নদীতে কুমির আছে আমাকে খেয়ে ফেলবে।
-(আমি চারদিক এক নজর তাকিয়ে বললাম) কিরে কুমির কই?
-কেন? ঐ ছেলেটা যে বলল, কুইর আছে।
-আরে এই কুইর মানে কুকুর। আর কুমির হচ্ছে কুঁইর।
-ও, আমি কি জানতাম কুইর মানে কুকুর হয়?
-ok, ok, চল, গোসলে নামি।
(যাই হোক, নদী থেকে ফিরে বিকেলে আমরা পাড়ার রাস্তায় হাঁটছিলাম।এমন সময় এক বাড়ি থেকে উচ্চস্বরে আওয়াজ আসছিল, "ঐ বাবুইল্লা গরুরে কুরা দিয়ছ নে?তারাতারি(তাড়াতাড়ি) গরুরে কুরা হাবাগই।"
সেই কথা শুনে রিণ্টু চরম বিষ্ময়ে বলল)
-ইসফাক ভাইয়া, এখানে গরুকে কুরা, মানে মুরগি খাওয়ানো হয়?
-(আমি তখন আকাশ থেকে পড়েছি। হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছি না। নিজেকে কণ্ট্রোল করে বললাম) না রে রিণ্টু এই কুরা মানে মুরগি নয়।এটা হচ্ছে গরুর খাবার। ভুষি, খইল ইত্যাদি।তাদের মাঝে এক খাবারের নাম কুরা।
-(সব শুনে সে বলল)বাপরে চিটাইংগা ভাষা এত কঠিন? কেমনে বোঝ তুমি?
-তোর অবস্থা দেখে আমারও সন্দেহ হচ্ছে।আসলেই তো! কেমনে বুঝি আমি?