somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাক পরী

০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে কোনদিন প্রেম করিনি।তাই মনের কোণে একটা দুঃখ নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। সারাদিন কোন কাজ থাকত না বলে ফেসবুকে পড়ে থাকতাম। ক্যামরার সামনে নিজেকে ভাল ভাবে মানিয়ে নিতে পারতাম না বলে ইমরান হাশমির ছবি প্রোফাইল পিকচার দিতাম।মাঝে মাঝে পরিচিত-অপরিচিত মেয়েদের সাথে চ্যাট করতাম। কিন্তু সেটা হাই-হ্যালো থেকে কেমন আছেন, পর্যন্ত গিয়ে থেমে যেত। স্ট্যাটাসও তেমন দিতে পারতাম না।তাই অন্যের স্ট্যাটাসে লাইক দিয়ে ফেবু লাইফ পার করতাম।
একদিন একবন্ধুর লেখা এক কবিতা আমি নিজের স্ট্যাটাসে পোষ্ট করি। সপ্তাহ খানেক পার হওয়ার পরও যেখানে লাইক ছিল মাত্র চারটা। ভাবছিলাম আর ফেবুতে আসব না। চিরতরে বিদায় নেব এই জগত থেকে। কিন্তু হঠাৎ এক মেয়ে ইনবক্সে নক করে বলল, আপনার লেখা কবিতাটা অনেক সুন্দর হয়েছে।যাক শান্তি পেলাম,কারণ এই প্রথম কোন মেয়ে আমার প্রসংশা করল।তার প্রোফাইল-নেমটা অনেক সুন্দর, “নির্বাক পরী”। প্রোফাইল পিকচারে ছিল একটা পুতুলের ছবি। যাই হোক, তাকে ধন্যবাদ জানালাম। সেই থেকে রোজ চ্যাট হত। চ্যাট করতে করতে কবে যে রাত শেষ হয়ে যেত ঠেরই পেতাম না। ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়।আমিও তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি।কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে পারি নি।সে আমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে শাসন করত, তার কষ্টের কথা শেয়ার করত। আমিও যতদূর পারি সাহায্যের চেষ্টা করতাম।জীবনের ১ম নারী সঙ্গ ভালই উপভোগ করছিলাম। অনেক বার তার মোবাইল নং চেয়েছি,তার ঠিকানা জানতে চেয়েছি। কিন্তু দেয় নি।
একদিন বিকেলে আমি বাসে করে অফিস থেকে ফিরছিলাম।আমার পাশে ছিট ফাঁকা ছিল, এক মেয়ে বাসে উঠে আমার পাশে বসল।পরনে লাল ড্রেস, কানে ছোট দুল, ঠোঁটে বিরক্তির চিহ্ন। প্রথম দেখাতে অনেক ভাল লাগল।
বাস জ্যামে আঁটকে আছে। বসে থাকতে থাকতে বোরিং চলে এসেছে। পাশের মেয়েটা দেখি মোবাইলে কি যেন করছে। আঁড় চোখে খেয়াল করলাম ফেসবুক ইউজ করছে। আমিও আমার মোবাইল থেকে লগ ইন করলাম।চ্যাটে দেখি নির্বাক পরী অন-লাইনে আছে। আমি নক করার আগেই সে আমাকে নক করল।
-কি কর?
-হাওয়া খাচ্ছি। তুমি?
-আর বলো না, মেজাজটা পুরাই খারাপ।
-কেন? কি হয়েছে?
-পুরা এক ঘন্টা জ্যামে আঁটকে আছি।
-এটা আর এমন কি আমিও জ্যামে আঁটকে হাওয়া খাচ্ছি। (পার্ট নেবার জন্যে বললাম, যদিও আমার মেজাজটা অনেক খারাপ ছিল।)
-জ্যামে বসে মানুষ মজা পায়???
-হুম, তবে জ্যামের কারণে নয়, আমার পাশে একটা সুন্দরী মেয়ে বসে থাকার কারণে।
-মেয়ে?তুমি মেয়ে নিয়ে ঘোরতেছ?
-আরে না, অপরিচিত।তোমার আশেপাশে কি কেউ নেই?
-আছে, বাসের মধ্যে অনেকেই আছে।তোমার মত আমার পাশেও একছেলে বসে আছে।
-ছেলে? তুমি ছেলে নিয়ে ঘোরতেছ?
-এই ভাল হবে না কিন্তু, আমার কথা আমাকে রিপিট দিচ্ছ কেন?
-সরি, ফাজলামী করলাম।
-ওকে, মাপ করলাম।
-তা তোমার এখন কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
-গোলচক্করের মোড়ের জ্যামে আঁটকে আছি, মনে হয় না কোথাও যেতে পারব।
(আমি গোলচক্করেই ছিলাম। তাই মনে আশার সঞ্চার হল, যদি তার দেখা পাই)
-আচ্ছা, তুমি কোন বাসে আছ?
-শতাব্দী পরিবহনে। কেন?
(আমিও শতাব্দী পরিবহনে ছিলাম। কেন জানি মনে হল “নির্বাক পরী” নামের সেই মেয়েটি আমার আশেপাশেই আছে।)
-আচ্ছা,তুমি কি ধরণের ড্রেস পড়েছ?
-লাল। কেন?
(আশে পাশে তাকিয়ে দেখি বাসে অনেক মেয়ে।কিন্তু কারো পাশেই ছেলে বসা নেই।শুধুমাত্র আমার পাশেই একটা মেয়ে বসে আছে।এবং লাল ড্রেস।মনে মনে নিশ্চিত হলাম। আরো নিশ্চিত হবার জন্যে আড় চোখে তার মোবাইলের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। কয়েবার ব্যর্থ হবার পর দেখলাম ওর ফেসবুক চ্যাটে আমার নাম।তার মানে??? এই সেই নির্বাক পরী।)
-না,এমনি জিজ্ঞেস করলাম।আচ্ছা,তোমার পাশে বসা ছেলেটা দেখতে কেমন?
-ধেৎ, ঐ হাদারামের কথা আর বলো না।চোখে বড় বড় দুইটা চশমা,গায়ে খইরি শার্ট আর কালো প্যান্টে কি অদ্ভুত যে লাগতেছে তাকে, তুমি না দেখলে বুঝেই পারবে না।
(মনে মনে ভাবছি এ যে আমার সামনে আমারই বদনাম করা হচ্ছে)
-ওকে কি তোমার ভাল লেগেছে?
-আরে ধুর, রাস্তায় যাকে তাকে দেখলেই কি ভাল লেগে যায়?
(আমি রিপ্লে না দিয়ে লগ আউট করি। পরে মেয়েটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করি।বেশ কয়েক বার প্রশ্ন করার পরও মেয়েটি কোন উত্তর দেয় না। অবশেষে হতাশ হয়ে ফেবুতে ঢুকে দেখি আরো ১টা রিপ্লে।)
-ছেলেটা কেমন ফাজিল, আমার সাথে বেহায়ার মত কথা বলতে চাইছে।
-তুমি কথা বললেই পারতে।
এরপর আর রিপ্লে আসছে না।মনে মনে ভাবলাম,সে বোধহয় আমার সাথে কথা বলবে। কিন্তু সে তা না করে মনমরা হয়ে বসে আছে।আমি কিছু বুঝতে পারলাম না।তাই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, আপু আপনার কি মন খারাপ? সে কোন উত্তর দিল না।দেখতে দেখতে বাসস্টপ চলে এলো।মেয়েটি নেমে গেল। আমার বাসস্টপ ছিল পরেরটা। কিন্তু আমি মেয়েটার ঠিকানা জানার জন্যে তার পিছু নিলাম।কিছুদুর গিয়ে সে একটা বাসায় প্রবেশ করল। আমি বাসার ঠিকানা নোট করে চলে এলাম।
রাতে বিছানায় শুয়ে চিন্তা করছিলাম আজ তাকে প্রপোজ করব।যেই ভাবা সেই কাজ, ফেবুতে ঢুকেই তাকে নক করলাম।কিছুক্ষণ চ্যাটের পর বললাম ভালবাসি।কিন্তু সে রাজি না।অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু তার একটাই কথা, হবে না।
পরেরদিন বিকালে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে তার বাসার দিকে রওনা দিলাম। বড় চশমাটা রেখে এসেছি।চুল গুলোও ঠিক করেছি, যাতে অনেকটা মানুষের মত লাগে। বাসার কাছাকাছি এসেই দেখি তাদের বাসায় লাল-নীল বাতি জ্বলছে।মনে মনে শঙ্খা দানা বাঁধল, “নির্বাক পরীর” বিয়ে নয় তো? তড়িঘড়ি করে তাদের বাসায় প্রবেশ করলাম।অপরিচিত হলেও কেউ বাধা দিল না।পাশের একজন কে জিজ্ঞেস করলাম, কার বিয়ে? বলল,আমাদের ছোট মেয়ের। তার মানে এই বাড়িতে আর কোন ছোট মেয়ে নেই। আবার সেই হতাশা।নির্বাক পরীই বোধহয় এ বাড়ির ছোট মেয়ে।তাই হতাশ হয়ে ফিরে যাব এই মুহুর্তে দেখলাম কনের পাশে মেহেদী রাঙ্গা হাতে সে বসে আছে। মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হল।পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলাম,
-কনের পাশে বসা মেয়েটাকে?
-সে কনের বড় বোন।
-তার কোথায় বিয়ে হয়েছে?
-তার বিয়ে হয় নি।
(আমি আকাশ থেকে পড়লাম।প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে বললাম।)
-কেন???
-কেন আপনি জানেন না? ও তো কথা বলতে পারে না। বারবার বিয়ের প্রস্তাব আসে,কিন্তু বোবা মেয়ে বলে সবাই ফিরে যায়।তাই এইবার ওর বাবা অনেকটা বাধ্য হয়ে ছোট মেয়েটাকে বিয়ে দিচ্ছেন।
হয়ত উনি আরো কিছু বলতেন কিন্তু আমি তা না শুনে ধীরে ধীরে হাটতে শুরু করেছি।আর ভাবছি-“একটি মেয়ে যে কিনা ভার্চুয়াল জগতে আমার সাথে সব ধরনের মনের ভাব প্রকাশ করেছে।কিন্তু বাস্তব জগতে তার মনের ভাব প্রকাশের শক্তি নেই।ফেবু-চ্যাটের মাধ্যমে যে আমার সাথে রাতের পর রাত কথা বলেছে।সে বাস্তবে কারো সাথে কথা বলতে পারছে না।সত্যি পৃথিবীটা অনেক বিচিত্র,অনেক নির্মম।“
ইশশ... মেয়েটার নামটা জানা হল না।যাক ব্যাপার না,কাল আবার আসব। তবে একা নয়, বাবা-মা কে সাথে নিয়ে।সাথে কিছু মিষ্টি হলে কেমন হয়?

২য় অংশ পড়তে ক্লিক করুনঃ নির্বাক পরী: প্রেমের প্রস্তাব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×