শহরে জন্ম হলেও ছোটবেলা থেকেই গ্রামের প্রতি অনেক আকর্ষণ ছিল।প্রায় প্রতিবছর ই গ্রামের বারিতে বেরাতে যাওয়া হত।আর সেটা হতো বার্ষিক পরীক্ষা শেষে।আমাদের পরিবার ছারাও অন্যান্য পরিবারেরা এই আনন্দে যোগদান করত।সে এক আনন্দের অনুভূতি।
সেবার আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পরছি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। অপেক্ষার পালা শেষ। গ্রামে যেতে হয় লঞ্চে। লঞ্ছ ভ্রমন আমার খুব ই প্রিয়। সবার সাথে মজায় মজায় লঞ্ছ ভ্রমন শেষে যেন পৌঁছলাম স্বর্গে। ঘরে ঢোকার প্রয়োজনবোধও করলাম না। কাজিন দের নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে গেলাম। কিন্তু তা বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। আমার মার ডাক পরল। কিছুতা বাধ্য হয়েই যেতে হল। খাওয়া দাওয়া শেষে আবার ঘুরতে বের হলাম। খুবী আনন্দে ছিলাম। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরত আসলাম। কিছুটা যখন অন্ধকার তখন গল্প শুরু হল। আমাদের সাথে একটা ছোট ভাই ছিল। ও গ্রামেই বড় হয়েছে। ও আমাদের ভূতের গল্প শোনালো। ওর নিজের কাহিনিও বলল। ওকে নাকি জিন ই ধরেছিল একবার। সেই কাহিনি তে না যাই। গল্প করতে করতে ঠিক হল,আমরা বাহিরে বের হব। এডভেঞ্চার এর জন্য। প্রথমে আমাকে নিতে রাজি হয়নি কেউ কেননা আমি মেয়ে। যেকোনো সময় ফিট হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু পরিকল্পনাটা আমার হওয়াতে আমাকে নিতে হয় সাথে। আমাদের সাথে গ্রামে বড় হওয়া ছোট ভাইটিও ছিল,সাহস দেবার জন্য।
বিলম্ব না করে বের হয়ে যাই। কিন্তু গ্রামের ছোট ভাইটি কি কারনে যেন সময় নিয়ে একটা কাজ সেরে আসে। আমরা সেই সময়টুকু অপেক্ষা করছিলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। সাথে একটা টর্চ ছিল। সেটা সেই ছোট ভাইটির কাছে ছিল। ভাইটি আগে হাঁটছিল আর আমরা ছিলাম পিছু পিছু। তেমন ভয় লাগছিল না প্রথম দিকে। ছোট ভাইটি আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলো একটি জনশূন্য পুরনো বাড়িতে। সেই বাড়ি নিয়ে নাকি গ্রামের মানুষের মাঝে অনেক কৌতুহল। প্রথমে তেমন ভয় না পেলেও,বাড়িটির কাছাকাছি আশা মাত্রই যেন গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না। শেষে না বলে বসে যে "মেয়েরা দুর্বল হৃদয়ের অধিকারি"। কিন্তু পরক্ষনেই টের পেলাম যে ভয় শুধু আমার মাঝেই না,অন্যান্য রাও ভয়ে কিছুটা না বলতে গেলে অনেক কাতর ছিল। তো যাই হোক,বাড়িটির সামনে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ পাশের কিছু বাঁশ গাছ অনেক জোরে জোরে নড়তে শুরু করল।!!!!!!!!!!!!!!!!!! অথচ বিন্দু মাত্র ও বাতাস ছিল না। অনেক ভয় পেয়েছিলাম সবাই! মনকে কেন যেন মানাতে ইচ্ছা করছিল না যে সেটা ভৌতিক কিছু হতে পারে ! ছোট ভাইটিকে বললাম টর্চ টি ওই বাঁশঝাড়ের দিকে মারতে। ও বলল "যদি বেঁচে থাকতে চাও তাহলে ওইসব দিকে মন না দেয়াই ভাল।" কথাটি শোনার পর অনেকটা চুপসে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আবিষ্কার করলাম সবাই বাড়ি ফেরত যেতে চাচ্ছে। পরে সেটাই স্থির হল। কিন্তু হঠাৎ টর্চ নিভে গেল । সেই বাঁশঝাড়ের শব্দগুলো তখনও হচ্ছিল। ছোট ভাই কে অনেক ডাকা ডাকির পর ও পাওয়া গেল না।এদিকে ভয়ে সবার গা দিয়ে শীতের রাতেও ঘাম ঝরছে। এরপর সবাই ডানে বামে পিছে না তাকিয়ে বিদ্যুৎ এর বেগে দৌড়াতে দৌড়াতে একদম বাড়ি এসে পৌঁছলাম। আমাদের এভাবে আসতে দেখে সবার হাসতে হাসতে মরে যাবার মত অবস্থা।আমরা ঘরে প্রবেশ করার পর দেখলাম ছোট ভাইটি আরামে বসে বসে মুড়ি চিবুচ্ছে আর আমাদের দেখা মাত্রই খিল খিল করে হাসতে শুরু করে। প্রথমে কিছুটা ক্ষিপ্ত হলেও আমরা সবাই মিলে সেই হাসিতে যোগদান করি। পরে জানা জানতে পারলাম এটা ছোট ভাইটি ওর কিছু বন্ধুদের সাথে যুক্তি করে এই ফাঁদ তৈরি করে।
যদিও এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে ভয়ের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমান মজাও পেয়েছিলাম।