ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি। পাহাড়ী বৈসাবী উৎসব দেখতে যাবো। ওই দিকটায় কখনও ঘোরা হয়নি বলে বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। মূলত ভ্রমণ বাংলাদেশ এর রবিউল হাসান খান মনা ভাইয়ের দেয়া ফেসবুকে ইভেন্ট পোস্টের সূত্র ধরে আমিও বেড়ানোর দলে নাম লিখিয়েছিলাম। সবকিছু রেডি কিন্তু টানা হরতালের কারণে যাবার আগের দিন বাস সংক্রান্ত জটিলতায় আমাদের ট্রিপটি ক্যানসেল হয়ে গেলো। মনের কষ্ট রাখি কই! অফিস থেকে ২ দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। সাথে শুক্র আর পহেলা বৈশাখ ১৪২০ এর সরকারি ছুটি মিলিয়ে মোট চারদিনের টানা ছুটি। এমন লম্বা ছুটি আর কবে পাবো! ছুটিটাতো নষ্ট করা যাবে না। সহকর্মী সরোয়ার জাহান আগে থেকেই আমার সাথে যাবার ব্যাপারে বলে রেখেছিলেন। তাকেই এবার প্রস্তাব দিলাম। তিনি তো একপায়ে খাঁড়া যাবার জন্য। শেষ মেষ তাকে ভালো একটা স্পট খুঁজতে বললাম। সহকর্মীটির বাড়ি ময়মনসিংহ। তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানালেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কাছাকাছি একটা জায়গা আছে নাম ‘পানিহাতা’। ওদিকটায় নাকি ভারতের বর্ডার আর সুন্দর পাহড়ি নদী আছে। আর আছে গারো উপাজাতির লোকজনের আবাস। আমরা সেখানে বেড়াতে যেতে পারি। আসলে ‘পানিহাতা’ জায়গাটি পড়েছে শেরপুর জেলায় যা আমরা যাবার পর জানতে পেরেছি। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে এর দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। যাই হোক দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো করে আমরা ১২ এপ্রিল ২০১৩ শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হলাম হালুয়াঘাটের উদ্দেশ্যে। বের হয়েই পড়লাম বিপাকে। আগের দিন ট্রান্সপোর্টের কারণে যেমন করে আমাদের খাগড়াছড়ির ট্রিপটি ক্যানসেল হয়েছিল এখনও দেখি সেই একই অবস্থা হতে যাচ্ছে। প্রচুর লোক বাসের জন্য দাঁড়িয়ে। যেন ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি যাচ্ছে। অবস্থা বুঝে বাসগুলোও ভাড়া বাড়িয়ে দিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা করে বেশি দরে। যাই হোক বহু কষ্ট করে বাসের যোগাড় করে অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে বিকল্প ঈদের ছুটির মতো করে পৌঁছলাম হালুয়াঘাটে। সহকর্মীটির নিকটাত্মীয়ের বাসায় আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হলো। আমাদের গাইড ঠিক করা হলো সেই আত্মীয়ের এক ছোট ভাই শরীফকে। অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্র হলেও আমাদের সেই গাইড পুরো এলাকাটা ভেজে খেয়ে ফেলেছে। তার কাছে আমাদের স্পটটি পানিভাত।
যেহেতু প্রথমদিন আমাদের হালুয়াঘাটে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে গিয়েছিল তাই পানিহাতি যাবার কোনো কারণ ছিল না। ওটা রেখে দিয়েছিলাম পরের দিনের জন্য। এই সময়টাকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা বিকেলে ঘুরে এসেছিলাম হালুয়াঘাটের ‘কড়ইতলা’ নামক জায়গায়। এই জায়গাটি একটি কয়লার বন্দর। প্রতিদিন ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে অসংখ্য ট্রাকভর্তি কয়লা এসে এই স্থলবন্দরে খালাস হয়। অসংখ্য কর্মী সারাদিন ব্যস্ত থাকে এই কয়লা বাংলাদেশী ট্রাকগুলোতে তুলতে। এদের একেক জনের চেহারা দেখবার মতো! হঠাৎ করে দেখলে অনেককেই মনে হবে ঠিক যেন কয়লা ভূত। তবে এরা দিনভর পরিশ্রম করে আহার যোগায়। উপার্জনও নেহায়েত কম নয়। এদের কেউ কেউ যে পরিসংখ্যান দিলো তাতে অনেকেই মাসে ৩০ হাজার টাকাও রোজগার করে। অর্থাৎ দিনে ১ হাজার টাকা করে। তবে চেহারাতে সেটি বুঝা যায় না। কয়লা বন্দরের খুব কাছেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর ক্যাম্প আর পাশেই ভারতের বর্ডার। সেখানেও বিএসএফ এর ক্যাম্প। আপনি চাইলে খানিকটা এগিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর সদস্যদের সাথে আলাপ করে আসতে পারেন। তাদের কাছ থেকে আপনি ভ্রাতৃসুলভ আচরণই পাবেন। অনেক বিষয়ে তারা আপনাকে সাহায্য করবে।
এই কড়ইতলার আশে পাশেই আছে দেখবার মতো কয়েকটি জায়গা। কয়লা ডিপোর পশ্চিম দিকটায় আছে টিলার মতো এলাকা। সেখানটায় আছে মোটামুটি ঘন জঙ্গল। রয়েছে প্রচুর গাছপালা। হাতে সময় নিয়ে এর ভেতরটা ঘুরে আসতে পারেন। স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিলে ভালো করবেন। অপরিচিতরা পথ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এই জায়গাটায় আমার একটি অভিজ্ঞতা হলো- খাগড়াছড়ি না গেলেও আমি সেখানকার আমেজ এখানে উপভোগ করতে পেরেছি। জঙ্গলে পাখির কিচিরমিচির সত্যিই খুব উপভোগ্য। আর ঝরাপাতাগুলো কী এক আবেশে আপনাকে সামনে ডেকে নিয়ে যাবে। আপনার সময়টা ভালো কাটবে।
কয়লা বন্দরের উত্তর-পূর্ব দিকে গেলে কিছুটা দূরেই দেখেতে পাবেন ভারতের বর্ডার। কাঁটাতারের বেড়া। এতটা পরিষ্কার আপনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অংশটা দেখতে পাবেন যা হয়তো আপনার কল্পনায় নেই। সড়ক পথে একে একে যানবাহন ছুটে চলেছে। ভারতীয় অংশের আগেই বাংলাদেশের একটি খাল রয়েছে। যেখানে লোকজন দিনভর গোসল করে। এদের অনেকেই কয়লা শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দা। উপভোগ্য একটি জায়গা।
এদিকটা পেছনে রেখে কিছুদূর পূর্ব দিকে এগুলে দেখতে পাবেন বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি) এর মেনংছড়া রাবার ড্যাম। যারা আগে কখনও রাবার ড্যাম দেখেননি তারা এটি দেখে আসতে পারেন। এটি মূলত হালুয়াঘাটের লক্ষীকূড়া এলাকায় অবস্থিত। রাবার ড্যামটি ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ আমরা ভ্রমণ করার প্রায় সাড়ে চার মাস আগে।
পানিহাতা স্পট:
পরের দিন ১৩ এপ্রিল ২০১৩ ইং সকাল ৯টার দিকে আমরা রওনা হলাম পানিহাতার উদ্দেশ্যে। মোটর সাইকেল ভাড়া করে উত্তর বাজার হতে উক্ত স্পটে যেতে সময় লাগলো ২০ মিনিটের মতো। মূল স্পটে যাবার আগে পড়বে কিছুটা পাহাড়ী এলাকা। এরপর যে রাস্তা দিয়ে আপনি স্পটের দিকে যাবেন সেখানে প্রবেশ পথের সাথেই দেখতে পাবেন ‘কারিতাস’ এর কম্পাউন্ড। সেটাও পাহাড়ের উপর। সাথে করে বাক্স-প্যাটরা নিয়ে গেলে এখানকার গারো দারোয়ান আপনাকে বা আপনার দলকে ভেতরে ঢুকতে দিতে চাইবে না। যেতে হলে বাক্স-প্যাটরা কোথায় রেখে যেতে হবে। আমরা অবশ্য অনেক অনুরোধ করে সাথে করেই সব নিয়ে গিয়েছিলাম। মাঝে মধ্যে অনেকে পিকনিক করতে এসে কারিতাসের মূল এলাকার ভেতরে থাকা ফুলের বাগানের ফুল ছেঁড়া ও তাদের স্থাপনার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিসাধন করায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
পাহাড়ের উপর থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অংশটা দেখতে চাইলে আপনাকে কারিতাস এর এই পাহাড়ে উঠতে হবে। কারিতাস হলো মূলত একটি খ্রিস্টান মিশনারি। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে যিশুর বিভিন্ন অবস্থা সম্বলিত বিশেষ কিছু খুঁটি আপনার চোখে পড়বে। এছাড়াও চমৎকার কিছু স্থাপনাও দেখতে পাবেন। এলাকাটাতে গারোদের রাজত্ব। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্যটা দেখতে বেশ মনোরম। বেশ কাছেই ভারতে মেঘালয় রাজ্যের একটি ব্রিজ চোখে পড়বে। মনে হবে যেন হাতের নাগালের ভেতরই এটি রয়েছে। এই ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ভোগাই নদী। এই নদীটাই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বৈশাখ মাসে এতে রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’ এর মতো জল থাকলেও বর্ষাকালে এর চেহারা বদলে যায়। ভারতের মেঘালয়ে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুণ যে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয় তার পানি গড়িয়ে এসে এই নদীতে পড়ে। নদীটি তখন হয়ে ওঠে খরস্রোতা। প্রচন্ড স্রোতে প্রায়শই ভারতীয় অংশের বড় বড় গাছ ভেঙে নদীতে ভেসে বাংলাদেশের ভেতর এসে পড়ে। স্থানীয় লোকজন এই গাছগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এদের কোনো কোনো গাছ ৪০ হাজার টাকাতেও বিক্রি হয়।
সে যাই হোক কারিতাসেরে পাহাড়ের উপর থেকে চারপাশটা দেখার পর আপনি উঠানামার কারণে হাঁপিয়ে পড়তে পারেন। নিচে নামলেই পাবেন ভোগাই নদী। বৈশাখের এই সময়টাতে পানি কম থাকায় আপনি নিশ্চিন্ত মনে এতে গোসল করতে পারেন। যারা সাঁতার জানেন না তারাও মজা করে গোসল করতে পারবেন। আমি নিজেও সাঁতার জানি না। কিন্তু দারুণ মজা করেছি। গোসল করতে গিয়ে স্থানীয় বাঙালিদের পাশাপাশি বেশ কিছু গারো অধিবাসীকেও চোখে পড়বে। এরাও গোসল করতে আর নদীতে ডুব দিয়ে ঝিনুক তুলতে আসে। আমরা বেশ কয়েকটি গারো ছেলেমেয়ের দেখা পেয়েছিলাম যারা এসব ঝিনুক তুলছিল খাবার জন্য। এরা নাকি শামুক ও ঝিনুক রান্না করে খায়। একটি বিষয় খুবই আশ্চর্য হয়েছি এই দেখে যে- এসব গারো ছেলেমেয়েরা নিজেদের গারো ভাষার পাশাপাশি খুব ভালো বাঙলা বলতে পারে। আর এদের দেখলে মনে হয় তাদের মোটামুটি অধিকাংশই শিক্ষিত। এদের অধিকংশই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। কারিতাসের মতো খ্রিস্টান মিশনারীগুলো এখানে বেশ কাজ করছে তা স্পষ্ট বুঝা যায়।
ভোগাই নদীর স্বচ্ছ জলে গা এলিয়ে দেয়ার পর আপনার মনে এক প্রশান্তি অনুভব করবেন। ইচ্ছেমতো জলের সাথে খেলা করতে পারেন। সাথে করে কেউ যদি হ্যান্ডবল জাতীয় কোনো বল নিয়ে যান তবে আরও ভাল করে সময়টা উপভোগ করতে পারবেন। আপনি যেখানটায় গোসল করবেন তার কাছেই ভারতের বর্ডার। আর ঐ ব্রিজটাও কিন্তু আপনার খুব কাছেই দেখতে পাবেন। পানি কম থাকায় চাইলে আপনি হেঁটে গিয়েই ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। কারণ ব্রিজের নিচ দিয়ে কোনো কাঁটাতারের ব্যবস্থা নেই। তবে সাবধান ভুলেও ও পথ মাড়াবেন না। বিএসএফ এর নজরে পড়লে সমস্যা হতে পারে। এমনিতে কোনো ভয় নেই।
গোসল শেষ করে কাপড় বদলে আমরা যখন সেগুলো রোদে শুকাতে দিলাম তখন কতগুলো গারো শিশু সেদিকটায় গোসল করতে আসলো। আমাদের ইচ্ছে হলো ওদের কাছ থেকে দু চারটা গারো ভাষা শিখি। ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম “কেমন আছো?” কে গারো ভাষায় কী বলে? একজন জানালো এটাকে গারো ভাষায় বলে- “নাম্মি দুংগামা’। আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলাম- “তুমি কেমন আছো?” সে এটি অনুবাদ করে দিল- “না-আ নাম্মি দুংগামা”। এবার জিজ্ঞেস করলাম “পানি” কে গারো ভাষায় কী বলে? উত্তর দিল- “চি”। এই হলো আমাদের গারো ভাষার পাঠ। তবে সময়টা চমৎকার কেটেছে।
যেভাবে যাবেনঃ
আমি যখন পানিহাতা-এর পথে রওনা হয়েছি তখন নিজেও জানতাম না যে এই এলাকাটি শেরপুর জেলায় অবস্থিত। এক সহকর্মী তার আত্মীয়ের মাধ্যমে এই স্থানটির খোঁজ বের করেন। আমরা মূলত ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে এর অবস্থান বলে জানতাম। যাই হোক যেহেতু হালুয়াঘাট থেকেই এখানে যাত্রা করেছি সেহেতেু আমার কাছে এই রুটটিই সহজ মনে হয়েছে। আশা করি অন্যরাও খুব সহজেই এই স্থানটিতে পৌঁছতে পারবেন। উল্লেখ্য, এটি শেরপুরের নাকুগাঁও এলাকার কাছাকাছি।
১। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যাওয়া যায়। এই বাস যেখানটায় থামবে সে স্থানটিকে নতুন বাসস্ট্যান্ড বলে। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড হতে শ্যামলী বাংলা, ইমাম ট্রেইলওয়েজ, ছোঁয়া পরিবহন নামের বাসগুলো নিয়মিত এই রুটে চলাচল করে। ভাড়া বাস ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়বে। এগুলোর সবই নন এসি বাস।
২। নতুন বাসস্ট্যান্ড হতে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে উত্তর বাজার-এ। বিদ্যুৎচালিত অটোতে এই স্থানটিতে যেতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৫ টাকা।
৩। উত্তর বাজার হতে আপনি দুইভাবে পানিহাতায় যেতে পারেন। প্রথম উপায় হলো মোটর সাইকেল এবং দ্বিতীয় উপায় হলো অটো ভাড়া করা। মোটর সাইকেলে শুধু যেতে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৮০ টাকা করে ভাড়া রাখবে। সময় লাগবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। তবে মোটর সাইকেল ভাড়া করার আগে যতটা সম্ভব দামাদামি করে নেবেন। নতুন লোক দেখলে এবং পার্টি মালদার মনে হলে এরা দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। কোনো ভাবেই ভাড়া ৮০ টাকার বেশি দিতে যাবেন না। ফেরত আসার সময় এই একই ভাড়া লাগবে বলে ধরে নিন। তবে চালককে বসিয়ে রাখলে তিনি কিছু বাড়তি অর্থ দাবি করতে পারেন। একটি মোটর সাইকেলে চালকসহ ইচ্ছে করলে ৪ জন বসা যাবে। মোটর সাইকেল ছোট হলে অবশ্য চালকসহ ৩ জন বসতে পারবেন। ভ্রমণ দলে সদস্য সংখ্যা বেশি হলে অটো রিজার্ভে ভাড়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এক অটোতে ৭ জনের একটি দলের বসার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যাওয়া আসাসহ ভাড়া নিতে পারে ৬০০-৭০০ টাকা। চালককে নির্দিষ্ট সময় বসিয়ে রেখে যখন আপনি প্রকৃতি উপভোগ করবেন তখন সেই কারণে আপনার কাছে তিনি বাড়তি কিছু অর্থ দাবি করতে পারেন। উত্তর বাজার হতে পানিহাতায় যেতে আপনাকে সংগ্রা, বাখাইতলা, চায়না বাজার ইত্যাদি এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
থাকা-খাওয়াঃ
যাদের আত্মীয়-স্বজন হালুয়াঘাটে থাকে তাদের বাড়িতে মেহমান হয়ে গেলে আপনার অবশ্য থাকা-খাওয়ার চিন্তা কমই করতে হবে। তবে যারা প্রথমবারের মতো এখানে যাচ্ছেন তারা আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। বাস থেকে নেমেই একটু খোঁজ করলে আপনি বেশ কিছু আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- হোটেল ইমেক্স ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মারুফ প্রভৃতি। এখানে থাকার জন্য ভাড়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছি না বলে দুঃখিত। কারণ আমরা ছিলাম এক পরিচিত আত্মীয়ের বাড়িতে। তাই ভাড়াটা জানা সম্ভব হয়নি। তবে এলাকাটা যতটুকু দেখেছি বা চিনেছি তাতে এক রুমের ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। খাওয়ার জন্য আপনি বেশ কিছু খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন। যাদের মধ্যে শ্যামলী হোটেল অন্যতম। এটি শ্যামলী বাংলা বাসের কাউন্টারের পাশেই। সকালের নাস্তা সারতে পারবেন ২০-৩০ টাকায়। দুপুর ও রাতের খাবার সারতে পারবেন ৫০-৬০ টাকায় (আইটেম বেশি খেলে দামও বেশি পড়বে)।
পানিহাতা যাবার সময় সাথে করে খাবার পানি, হালকা খাবার (বিস্কুট, চিপস, কলা-রুটি ইত্যাদি) নিয়ে যেতে পারেন। মূল স্পটে অবশ্য একটি চা-এর দোকান রয়েছে। সেখান থেকে হালাকা খাবার, চা, জুস, পান, নলকূপের পানি পাবেন। তবে ভাত খাবার কোনো ব্যবস্থা এখানে নেই। ভ্রমণ স্পটটি নতুন বলে কোনো ভাতের হোটেল নেই।
সময় পেলে প্রকৃতির এই অপরূপ স্থানে আপনিও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। পিকনিক স্পট হিসেবেও স্থানটি খারাপ নয়। হাতে দুই দিন সময় বের করে বেরিয়ে আসতে পারেন পানিহাতা থেকে। অনেকের কাছেই হয়তো এই স্থানটি অজানা। যাদের কাছে অজানা তারা এর নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আসার সুযোগটা হাতছাড়া করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১০