বাঘের ডেরায় -২ - তাহসিন শাহেদ
বাঘের ডেরায় -৩ - তাহসিন শাহেদ
সাগর-নদী-জঙ্গলের এক অপূর্ব মিলনভূমি সুন্দরবন। শুনেছিলাম অন্যান্য ন্যাশনাল পার্কের সাথে সুন্দরবনের পার্থক্য নাকি এক জায়গাতেই, সেটা হল তার স্বাভাবিক বন্যতা। জঙ্গলে গেলেই যেমন সারে সারে পশুর দেখা পাওয়া যায় না, পশুর দেখা পাওয়ার জন্য র্ধৈয্য, পরিশ্রম, উপস্থিত বুদ্ধির সাধনা করতে হয়, আর হঠাৎ সেই সাধনার ফল পাওয়া গেলে প্রচণ্ড উত্তেজনার আস্বাদন। সুন্দরবনে পশু দেখার অভিজ্ঞতা ঠিক তেমনই। জীবজন্তু, গাছপালা, কীটপতঙ্গ, পাখপাখালি থেকে শুরু করে জঙ্গলের চারপাশের খাল-নদী মিলিয়ে গোটা বনের পরিবেশ অত্যন্ত অকৃত্রিম। এক দিকে সুন্দর, অন্য দিকে ভয়ঙ্কর। বন্য ভয়াবহতা স্নায়ুর প্রতিটি বিন্দু দিয়ে অনুভব করা যায় এই সুন্দরবনের বাঁকে বাঁকে।
সেই বন্য ভয়াবহতা অনুভব করতেই এবার ‘ভ্রমণ বাংলাদেশ’ এর ছুটে চলা সুন্দরবনে। সফর সঙ্গী মাত্র ৭২ জন। সাথে রয়েছে লঞ্চের ক্রু, বাবুর্চি, গার্ড মিলিয়ে আরও ১৮ জন। সর্বমোট ৯০ জন। মাত্র ১০ জনের জন্য সেঞ্চুরি মিস! আমাদের দলনেতা টুটু ভাই ও এই ট্যুরের অন্যতম পরিকল্পনাকারীদের একজন প্রিন্স ভাই দু’দিন আগেই পোঁছে গেছেন খুলনায়। আগামী ৩ দিনের প্রয়োজনীয় বাজার ও বনে ঢুকার অনুমতি তারা আগেই নিয়ে রাখবেন।
ওয়াসিম উদ্দিন সুমন (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য , ভ্রমণ বাংলাদেশ) ও আমাদের সবার প্রিয় সৈয়দ মুজক্কির আহসান ।
যাত্রা হল শুরুঃ
১২ই জানুয়ারী রাতের বাসে চড়ে আমরা রওনা হলাম খুলনার উদ্দেশে। হিসাব অনুযায়ী খুব সকালেই আমাদের পোঁছে যাওয়ার কথা খুলনাতে। আর খুলনাতে পৌছেই লঞ্চে উঠে ভোঁ দৌড় সুন্দরবনের দিকে। কিন্তু হায়! ড্রাইভারের ভুলে গাড়িতে গ্যাস না নিয়ে সামনে এগুতে গিয়ে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়া, টিউব পাংচার হয়ে হাবা-হাসমতের মত রাস্তায় বসে থাকা, অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে ফেরী চলাচল বন্ধ থাকাসহ বেশ কিছু কারনে আমরা যখন খুলনা লঞ্চ ঘাটে এসে পোঁছালাম তখন সূর্যি মামা সেদিনের মতো বিদায়ের পাঁয়তারা শুরু করে দিয়েছে।
মনে মনে বলে উঠলাম, দেরি নাহি চাহি হায়, তবু দেরি হয়ে যায়, কি করি উপায়। প্রায় ১৮ ঘণ্টার ঢাকা টু খুলনা ‘ জার্নি বাই বাস’ শেষ করে আমরা যখন ‘জার্নি বাই লঞ্চের’ প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম ততোক্ষণে সূর্যি মামা রূপসা নদীকে তার আজকের শেষ চুম্বনটি দিয়ে বিদায় নিয়েছে।
সবাইকে যার যার কেবিন বুঝিয়ে দিয়ে আমরা চলে এলাম ডেকে। একটু পরে সবাই ডেকে এলে ছোটও করে সবার পরিচয় পর্ব শেষ করে আমরা আড্ডায় বসে গেলাম। দাবা ও লুডু খেলা চলল বেশ কিছুক্ষণ। রাত ৯ টার দিকে খাবারের জন্য ডাক পড়লো।
ভাত , রুই মাছ , ডাল আর সালাদ ছিল আমাদের রাতের খাবারে ।
খাবার সেরে যে যার মতো আড্ডা দিতে লাগলো। রাত বাড়তে থাকলে আস্তে আস্তে সবাই চলে যেতে লাগলো যার যার কেবিনে। ১১ টার মধ্যে পুরো ডেক ফাঁকা হয়ে গেল। আমরাও শুয়ে পরলাম ডেকে পাতা তাঁবুতে।
চলবে......................
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৪২