somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকর-৪

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় যতই যেতে লাগল অভিজ্ঞতাও তত বাড়তে লাগল। কিন্তু প্লে গ্রুপের বাচচাগুলোকে যতই দেখছিলাম ততই অবাক হচ্ছিলাম। এইটুকুনিই তো মানুষ অথচ প্রত্যেকেই কত আলাদা। ওদের প্রত্যেকেরই আচার, প্রকৃতি,ব্যবহার, চিন্তাভাবনা একে অপর থেকে কত ভিন্ন। তাই আমাকেও ওদের নেচার অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে হয় স্কুলটাকে ওদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলতে। আর তা করতে গিয়ে যত কান্ড।

এই প্লে গ্রুপেরই এক বিচ্ছু। খুবই স্মার্ট বয়। ওকে ক্লাসে আনতেও তেমন কোন কষ্ট করতে হয়নি আমায়। কিন্তু সমস্যাটা হলো কি এক দূর্বোধ্য কারণে নারীজাতির প্রতি তার চরম বিতৃষ্ণা। এর প্রমাণ, তার টেবিলে সে কখনোই কোন অবস্হাতেই কোন মেয়েকে বসতে দেবেনা। যদি কখনো কেউ বসেছে তো হয়েছে। তার চিল চিৎকারে কান পাতা দায়।
মেয়েরাও এটা বুঝতে পেরে ওর কাছে বসেনা। এমন কি অন্য টেবিলে জায়গা না থাকলেও ব্যাগ নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকবে কিন্তু ওর পাশে বসার সাহস করেনা কেউ। আমার অশেষ ভাগ্য যে আমাকে সে তার সেই বিতৃষ্ণার লিষ্ট থেকে বাইরে রেখেছে। কিন্তু এভাবে কতদিন। ওর এই ধারনা ভাঙ্গা দরকার এই উদ্দেশ্য নিয়ে একদিন ওর টেবিলে একটি মেয়েকে বসাতেই তার গগণ বিদারী চিৎকার। ওকে কাছে নিয়ে বুঝাচ্ছি এমন সময় পাশ থেকে আরেক বিচ্ছু বলে উঠে-"মিছ্‌ একটা থেলে আল মেয়ে কি ফ্রেনদ হতে পালে?" আমি থতমত খেয়ে যাই এমন প্রশ্নে, বলি "কেন হবেনা বাবা? এখানে তো আমরা সবাই ফ্রেন্ড।" "না হয়না" তার গম্ভীর উত্তর। তারপর সে যোগ করল "তুমি কিথ্‌থু জাননা। আমি আলও অনেক কিথু জানি।" ততদিনে আমি অনেক অভিগ্গ। আর তাই ও আর কি জানে সেটা জানতে চেয়ে আরেকবার কোন ভয়াবহ অভিগ্গতার সম্মুখীন হতে চাইলাম না। আমি আবার সেই প্রথম বিচ্ছুটার দিকে ফিরলাম। বুঝাতে লাগলাম ওকে। কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অটল। কোন নারীজাতিকে সে তার কাছে ঘেঁসতে দেবেনা। শেষমেষ সে আমাকে হুমকি দিল "টুমি দটি ওকে না সলাও তাইলে কিনটু টোমাকে কাল বুট ঢলায়ে ডিবো"(এই বাচ্চাটি আবার সব কথা ট আর ড দিয়ে বলে।)।
অতঃপর আমাকে ওর 'কাল বুটের' (কাল ভুত) ভয়ে অগ্গান হওয়ার মত এক ভঙ্গি করে সরে আসতে হল। কিন্তু হাল ছাড়লাম না। অবশেষে অনেক ভাবে বোঝানোর পর পরের দিকে তার মেয়েদের প্রতি এহেন অনিহা অনেকটাই কমে যায়। যার ফলস্বরুপ পরবর্তিতে প্রায়ই ওকে মেয়েদের মাথার ব্যান্ড সংগ্রহ করতে দেখা যেত এবং এই ব্যান্ডগুলো যে তাদের চুল থেকে খুলে নেয়া সে ব্যাপারে সন্দেহ ছিলনা কারও। মেয়েদের গলাফাটা চিৎকারই এর বড় প্রমাণ।

এবার আরেক ছোট্ট পরির কথা বলছি। ওকে দেখলে মনে হবে ওই বুঝি রুপকথার সেই সিনডারেলা। কিংবা স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন ছোট্ট এনজেল। চোখগুলো তার ঘন কাল টানা টানা, একমাথা ঘন চুল কোমর পর্যন্ত। এই পরি টি প্রথম দুইদিন অনেক কান্না করল। কিছুতেই মামনি ছাড়া ক্লাসে থাকবেনা। তিনদিনের দিন ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু এ কি! ক্লাসে ঢুকেই সে আমার ওড়নার একপ্রান্ত শক্ত মুঠিতে ধরে নিয়েছে। কিছুতেই ছাড়বেনা। চেয়ারে তো বসবেনা কিছুতেই। আমি হেঁটে হেঁটে ক্লাস নেই ও আমার ওড়না ধরে পিছ পিছ হাঁটছে। আমি ঘুরে দাঁড়াচ্ছি তো ও ওড়না ধরে ঘুরে যাচ্ছে আমার সাথে সথে। ওড়না সরাতে গেলেই কান্না। বুঝলাম এই প্রথম মায়ের কোল ছেড়ে সে এসেছে সম্পূর্ণ অচেনা এক পরিবেশে। এখানে এসে মিসকেই তার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে হয়েছে। আর তাই ওড়না সরালেই নিরাপত্তাটুকু হারানোর ভয় বুঝি বাসা বাঁধে ওই ছোট্ট বুকে।

ওর চেয়ার রাখলাম আমার চেয়ারের পাশেই। আমি যখন বসি ও বসে পরে ওর ছোট্ট চেয়ারে ।কিন্তু হাতের মুঠোয় ধরা ওড়নাটা আগের মতই আছে। এভাবেই কাটছে সময়।
আমি দাঁড়ালে ও দাঁড়ায়, আমি বসলে ও বসে, আমি অন্য ক্লাসে গেলে ও গুটগুট করে যায় আমার পিছুপিছু। এভাবে প্রায় এক মাস।

এর মাঝে স্কুলে ইন্সপেকসন হবে তাই উপর থেকে নির্দেশ হয়েছে সব মিস দের শাড়ি পড়তে হবে। কাজেই সেদিন শাড়ি পরে গেলাম ক্লাসে। সেদিন সব বাচ্চাই কেমন অবাক হয়ে তাকাচ্ছে আমার দিকে। বুঝলাম এই শাড়ি পরে সাজুগুজু করা মিস এর মধ্যে তারা তাদের প্রতিদিনের সেই চেনা আটপৌড়ে মিসটাকে খুঁজে পাচ্ছেনা কিছুতেই। আমার মজাই লাগছিল। হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার সেই ছোট্ট পরি টি দরজা ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে আমাকে দেখছে। সবাই ডাকছে কিন্তু সে কিছুতেই ক্লাসে ঢুকবেনা। আমিও চুপ করে মজা দেখছি। কথা বলছিনা। ও দাড়িয়েই আছে। আর পারলাম না। ওর দিকে তাকিয়ে হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিতেই......এক ছুটে দৌড়ে এসেছে আমার কাছে। তারপর আমার আঁচল টা হাতে নিয়ে আমার কানে কানে বলে-
"মিছ্‌ আল কক্ষনো তুমি শালি পব্বানা"
আমি ওর নাকটা টেনে দিয়ে বলি-
কক্ষনো না, কোনদিনও না।

আমি সত্যিই আর কখনোই শাড়ি পড়িনি। শুধু কি তাই? মিছ্‌ তুমি চুল বেঁধেছ কেন চুল ছেলে আছবে....মিছ্‌ তোমার এই জামাটা পচা এতা পলবেনা.......এই কানেল দুলটা সুন্দল এটা ছবছময় পলবে......আজ টিপ পলনি কেন পচা লাগছে.. এমনি কত কথা। আমিও ওদের কথা শুনি , মেনে চলি প্রতিটি আদেশ। কেননা আমাকে তো ওদের কাছে অনন্যা হতেই হবে। তবেই না ওরা গুটি গুটি পায়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরবে আমাকে। তারপর মিস্টি করে গালে চুমু খেয়ে আমাকে বলবে......মিছ্‌ তুমি এত ভাল তেন ?

আমার মত অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষের কাছে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪০
৯৯টি মন্তব্য ৯০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×