পাঠকবৃন্দ ক্ষমা করবেন নিজ নিজ গুনে। ব্যর্থ কবি তার কবিত্বের খোলস ছেড়ে দিয়ে হঠাৎ এক অনুগল্প লেখার প্রয়াস করেছে ।
আচ্ছা দুঃখ কি ? কোথা থেকে আসে ? জন্ম কোথায় তার ??
বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ছাত্রজীবনে যত প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার খাতায় লিখেছিলাম তার নিরানব্বই ভাগই উদাহরন সহকারে উপস্থাপন করতে হত । তার সাথে প্রমাণ । ভূলি নাই সেই সব দিন । যাই হোক পাঠক বিরক্ত হওয়ার আগেই এক প্রকার দুঃখের কথার বর্ণনায় আসি ।
জন্মের ক্ষণ থেকে শুরু করে বয়স বাড়তে বাড়তে কিশোরী হঠাৎ একদিন সাবালিকায় রূপান্তরিত হল । সাবালিকা হয়েই তার যত বিপত্তি । যুগের সন্ধিক্ষনে সময়ের বিশ্বাসঘাতকতায় সাবালিকার দুয়ারে প্রেম উপস্থিত হল । অদ্ভুত আশ্চর্যময় সে প্রেম ! বালকের কোন যোগ্যতাই ছিল না । না ছিল চেহারাসুরত, না ছিল টাকাপয়সা, না ছিল তার গোছানো জীবন । কিন্তু বালিকার নিষ্কলুষ পণ । সে বালক কে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলবেই । কিছুকাল রাস্তায় বসে, পার্কের গাছতলায় বসে বাদামের খোসা ছাড়ানোর পর তারা পবিত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে দিনানিপাত করার ইচ্ছেটা দুজনের মনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঠিক উঁকি দিত । সাবালিকা এরুপ কথাও দিয়েছিল বৈকি ।
কিন্তু সন্মানিত পাঠক, সেই যুধিষ্ঠিরের যুগ কি আর আছে ? এখন তো আপাদের, ম্যাডামদের যুগ ! কথা দিয়ে কথা রাখতে হবে কিংবা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে হবে এরকম কোন সংবিধান নাই ।
যাই হোক, বালক-বালিকা যতদিন বাল্যবয়সের সীমারেখায় আবদ্ধ ছিল, ততদিন তাদের প্রেমটা খুব ভালই চলছিল। আবার সেই সময়ের বিশ্বাসঘাতকতায় যখন সাবালিকা যুবতীতে পরিবর্তিত হল এবং বালক যুবকে তখনই বিপত্তি আপনা আপনি উপস্থিত হল। যুবক তার অনার্স ডিগ্রীর মূল সার্টিফিকেট পকেটে নিয়া চাকরিদাতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে জুতার সুকতলার ক্ষয় করতে থাকল ।
ততদিনে যুবতী সত্যিকারের বুদ্ধিমতী হয়ে উঠল । তার মন এবং হৃদয়ের গভীরে জন্ম নেয়া প্রেম, মস্তিষ্কের নিউরনে গিয়া ধাক্কা দিতে লাগল। সম্ভবত ধাক্কার জোর খুব বেশীই ছিল। মুহুর্তেই হৃদয়ের টান উবে গিয়ে, বুদ্ধিসত্তা জাগ্রত হল এবং ভালভাবেই তার সমস্ত পৃথিবী নাড়িয়ে দিল । যুবতী চিন্তা করে দেখল, তার এই বর্তমান প্রেমিকের গলায় মালা দিলে, নিজেকে বহুদিন পর্যন্ত অনাহার, অর্ধাহার এবং বাঁচার জন্য ব্যাপক যুদ্ধ করতে হবে ।
দীর্ঘ দিবসে তিল তিল করে বাড়তে থাকা প্রেম জলাঞ্জলি দিয়া যুবতী সুদূর ভবিষ্যতের সুন্দর জীবনের পরিকল্পনা গ্রহন করল। যুবক এর কাছে সবকিছু গোপন থাকল। অবশেষে উচ্চপদস্থ পয়সাওয়ালা, টাকমাথা বৃদ্ধের গলায় পিতা-মাতার ইচ্ছার নাম দিয়া মালা পরিয়ে দিল ।
যুবক বহুত কষ্ট অর্জন করে উড়নচণ্ডী হয়ে দুনিয়া ভূলে পথে পথে কিছুদিন দিনানিপাত করল । সে নিজের দিকে হঠাৎ নজর করে দেখল আর কিছুই অবশিষ্ট নাই ! সে ভোল পাল্টে অতীত ভূলে আবার নিজের জীবন সাজাতে বসল। এবার সে একা, আর একাই যুদ্ধ করে এই প্রতারনার যুগে নিজেকে সাফল্যের চুড়ায় পৌছানোর ধনুক ভাংগা পণ করল ।
অপরদিকে যুবতী বিবাহ পরবর্তী জীবনে কৃপণ স্বামীর পাল্লায় না পেল মহিলা সংশ্লিষ্ট কোন সুখ । বৃদ্ধ পুরুষের পাল্লায় না হল দাম্পত্যে সুখী ।
পাঠকবৃন্দ সম্ভবত উপরের উদাহরন প্রয়োগ করে আমি (এক প্রকার দুঃখ) দুঃখ কেন, কোথা থেকে, কিভাবে আসে বুঝাতে পারছি । ভূল-ত্রুটির জন্য আবার ক্ষমা প্রার্থী ।
প্রেমের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, "প্রেমের জন্ম এবং বৃদ্ধি দুটোই হৃদয়ে । যতক্ষন প্রেমের বসত হৃদয়ে ততক্ষন সেটা প্রেম। হৃদয় থেকে স্থানান্তরিত হয়ে মস্তিষ্ক বা অন্য কোথাও গেলে সেটা আর যা কিছুই হোক, প্রেম নয়" ।
মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, উচ্চাশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা , স্বপ্ন, চাহিদা, ইচ্ছাগুলো অপুর্ণ থাকলেই দুঃখ আসে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৩