বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُواْ أَيْدِيَهُمَا جَزَاء بِمَا كَسَبَا نَكَالاً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
"যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। "
"As to the thief, Male or female, cut off his or her hands: a punishment by way of example, from Allah, for their crime: and Allah is Exalted in power."
( আল কোরআন, সূরাহ মায়িদাহ্ ০৫:৩৮)
পয়েন্ট ওয়ানঃ
“সারাকাহ” বা চুরির আভিধানিক ও পারিভাষিক সংজ্ঞা কি? এখানে এ প্রশ্নটিও প্রণিধানযোগ্য। ‘কামুসে’ বলা হয়েছেঃ অন্যের মাল তার অনুমতি ব্যতিরেকে পেফাযতের জায়গা থেকে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে চুরি বলা হয়। শরীয়তের পরিভাষায়ও একেই চুরি বলা হয়। এ সংজ্ঞাদৃষ্টে চুরি প্রমাণের জন্য কয়েকটি বিষয় জরুরীঃ
প্রথমত, মালটি কোন ব্যাক্তি অথবা ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হতে হবে, তাতে চোরের মালিকানা অথবা মালিকানার সন্দেহও থাকবেনা এবং এমন বস্তুও না হওয়া উচিৎ, যাতে জনগণের অধিকার সমান; যেমন- জনহিতকর প্রতিষ্ঠান ও তার বিষয়-সম্পত্তি। এতে বোঝা গেল যে, যে বস্তুতে চোরের মালিকানা অথবা মালিকানার সন্দেহ আছে কিংবা যে বস্তুতে জনগণের কম অধিকার আছে; যেমন জনকল্যানমুলক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও তার বস্তুসমূহ; তা চুরি করলে চুরির হদ প্রজোয্য হবে না এবং চোরের হাত কাটা যাবেনা, এবং বিচারক তাঁর বিবেচনা অনুযায়ী তাকে অন্য কোন সাজা দিবেন।
দ্বিতীয়ত, মালটি হিফাজতের জায়গায় থাকতে হবে অর্থাৎ তালাবদ্ধ গৃহে অথবা চৌকিদারের প্রহরায় থাকতে হবে । অরক্ষিত স্হান থেকে কোন কিছু নিয়ে গেলে তদ্দরুন হাত কাটা যাবে না এবং মাল সুরক্ষিত হওয়ার সন্দেহ থাকলেও হাত কাটা যাবে না। তবে গোনাহ এবং অন্য কোন শাস্তির যোগ্য হবে।
তৃতীয়ত, বিনা অনুমতিতে নিতে হবে। যে মাল নেওয়ার অথবা নিয়ে ব্যবহার করার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়, সে যদি তা একেবারেই নিয়ে যায়, তবে চুরির হদ জারি হবে না এবং অনুমতির সন্দেহ পাওয়া গেলেও হদ প্রযোজ্য হবে না।
চতুর্থত, মালটি গোপনে নিতে হবে। কেননা, অপরের মাল প্রকাশ্যেই লুট করলে তা চুরি নয়- ডাকাতি।
উপরোক্ত শর্তাবলী থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, মাল কেবল মাত্র চুরির অপরাধে হাত কাটা যাবে। অন্যথায় সন্দেহ বা পূর্ণঙ্গ প্রমানাদি ছাড়া কিছুতেই চোরের হাত কাটা যাবে না। এবং কেউ চুরি করলো আর আপনি ধরেই তার হাত কেটে দিতে পারবেন না, তার জন্য আপনাকে রাষ্ট্রিয় আইনে যেতে হবে। অথবা যাবেন গ্রামের কাজী বা বিচারকদের কাছে। তখন তারা বিশ্লেষণ করবে যে চোর কি পরিমান সম্পদ চুরি করেছে। আর এই পরিমান সম্পদ চুরির দ্বায়ে চোরের হাত কাটা যাবে কি না? তথাপী, রাষ্ট্রিয় আইন বা কাজী যে রায় দেবে তাই গ্রহণযোগ্য বলে গন্য হবে। এটাও বর্ণিত যে, সম্পদের পরিমান এরূপ হতে হবে যাতে করে মালিক আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পয়েন্ট টুঃ
ইসলামে হত্যার বিধান - أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعً-
"যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।"
" if any one slew a person - unless it be for murder or for spreading mischief in the land - it would be as if he slew the whole people: and if any one saved a life, it would be as if he saved the life of the whole people. "
এবং মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) হত্যা প্রসঙ্গে বলেন- হযরত সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা ইরশাদ করেছেন ‘কোন ব্যক্তি (হত্যাযোগ্য অপরাধ না করা সত্যেও) নিজের গোলামকেও যদি হত্যা করে আমরা তাকে হত্যা করব । আর কোন ব্যক্তি তার নিজের (অনুগত) গোলামের কোন অঙ্গ কেটে ফেললে , আমরাও তার অঙ্গ কেটে ফেলব....।...’ (তিরমিজী শরীফ-১৩৫৪)
ইসলামে হত্যাযোগ্য অপরাধ বলতে প্রথমত কেসাসকেই বুঝানো হয়ে থাকে। আপাদত বিস্তরিত না গিয়ে সংক্ষেপে বলি, যদি কেহ বিনা অপরাধে অথবা কোন ব্যক্তির অপরাধ পাওয়া সত্বেও রাষ্ট্রিয় আইন বা কাজীর বিচার ব্যাতিত কাউকে হত্যা করে তবে তাকে রাষ্ট্রিয় আইন বা কাজির বিচারের মাধ্যমে হত্যা করা জায়েজ। অথবা কেহ জুলুম করতে গিয়ে কাউকে হত্যা করলো, তবে হত্যাকারীকে বিচারের আওতায় এনে হত্যা করা জায়েজ। অথবা কেহ ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা করলো,, এবং ডাকাত ধরা পড়লে বিচার ব্যতিত তাকে হত্যা করা হারাম। তথাপী, বর্তমানে আমাদের দেশে তথাকথিত ক্রসফায়ার নাটকে যে সকল হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে সেগুলোও হারাম(!) তবে এখানে আরেকটা ব্যাপার স্পষ্ট হওয়া উচিত, তা হলো- রাষ্ট্রিয় সৈনিক নিজে প্রাণ রক্ষার্থে আক্রমনকারী হত্যা করতে পারবে অন্যাথায়, তার হত্যা করার অনুমতি নেই, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রিয় সৈনিক আগে আক্রমন করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, সিলেট-কিশোরগঞ্জ "সামিউল আলম রাজন" হত্যাকাণ্ডটি যে একটি হত্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। এবং চুরির দ্বায়ে হত্যা বৈধ নয়। যদিও এটা চুরির দ্বায় নাকি চুরির অপবাদ তা এখনো স্পষ্ট হয় নি। কেননা এটি সম্পূর্ণভাবে বিচার বহিঃর্ভূত।
আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি। এবং হত্যাকারীদের ফাঁসির জোর দাবি জানাচ্ছি।
একটি হাদিস দিয়ে শেষ করছি- “হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা ইরশাদ করেন, রোজ কিয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে । ... তিরমিজী শরীফ - ১৩৪৫
যদি এর ন্যায় বিচার না হয় তবে আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা কাউকেই ছাড় দিবেন না সেদিন। আজ যারা ক্ষমতার আসনে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এর বিচার কেন হলো না। আর যারা সাধারণ প্রজা তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সেদিন কেন তোমরা তার বিচারের দাবি জানাও নি???