কথায় বলে, মানুষের বাসযোগ্য এই পৃথিবী। বইয়ের পাতায় আর মানুষের মুখে এই কথাটি শুধু কথাই থেকে যায়। কিন্তু বাস্তবতার চাবুক এই কথা থেকে অনেক দূরে। আজ কয়েকদিন ধরে বিশাল সাগরবক্ষে ভেসে বেড়াচ্ছে। কোনো রাষ্ট্রই এই ভাগ্যপীড়িত মানুষদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন আসে, আজ যাদের অভিবাসী বলে আমাদের সামনে উপস্থাপিত করা হচ্ছে তারা কি আসলেই ভাগ্যপীড়িত নাকি তথাকথিত ভাগ্যবানদের খামখেয়ালির শিকার এই মানুষগুলো। এখন পর্যন্ত যত আভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই এমন সব দেশ থেকে আসা, যে দেশগুলোতে দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতার লড়াইয়ের এই যুদ্ধে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহন নেই। অথচ যুদ্ধের নির্মম বলি হতে হয় এই সাধারণ মানুষগুলোকেই। তেমনি একজন নাইজেরিয় নাগরিক প্রমিজ(২৬)। দেশ থেকে দেশে ঘুরতে ঘুরতে আজ আর তার নেই কোনো দেশ। এখন উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায় কাটে তার দিন। তার মুখেই শোনা যাক বীভৎস কিছু অভিজ্ঞতার কথা।
“নাইজেরিয়ায় অনেক বছর ধরেই যুদ্ধ চলছে। আমি আমার মা, বাবা, বোন এবং ভাইদের হারিয়েছি। যুদ্ধের সময় আমরা সবাই জীবন নিয়ে পালিয়ে গেছি। আমি এখন জানি না যে তারা কোথায় আছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এক ব্যাক্তি আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়, কিন্তু তার স্ত্রী ভেবেছিল যে তার সঙ্গে আমার যৌনসম্পর্ক আছে। তখন সেই ব্যাক্তি আমাকে কিছু টাকা দেয় এবং লিবিয়ায় পালিয়ে যেতে বলে। কিন্তু আমি যখন সেখানে পৌছাই, তখন সেখানেও যুদ্ধের ভেতর আটকে যাই। নিজেকে আবিষ্কার করি ত্রিপোলিতে। চারিদিকেই শুধু যুদ্ধ আর লাশ। সবাই যুদ্ধ করছিল এবং একজন আরেকজনকে হত্যা করছিল। লিবিয়া একটি মুসলিম দেশ। সেখানকার মানুষ আমার মতো খ্রিষ্টানকে পছন্দ করে না।
সেখানে একজন আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং থাকতে বলে। আমাকে বলা হয় যে, তারা আমাকে ইতালি যেতে সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু সেই বাড়িটি ঠিক সুবিধার ছিল না। বাড়িটি অনেক বড় ছিল আর সেখানে অনেক মানুষ একত্রে বাস করতো। ওই বাড়িতেই আমি দীর্ঘদিন ছিলাম, তবে ঠিক কতদিন ছিলাম তা বলতে পারবো না। ওখানেই কেউ একজন আমার হয়ে নৌকা ভাড়া দিয়েছিল এখানে আসার জন্য।
নৌকা যাত্রাটি ছিল অনেক দীর্ঘ। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো আমি মারা যাচ্ছি। আর সমুদ্রটা ছিল অনেক বিশাল আর অন্ধকার। নৌকার ভেতর বসে কাঁদছিলাম আর ঈশ্বরের সাহায্য চাচ্ছিলাম। নৌকার আরও অনেক নারীদের সঙ্গে আমিও প্রার্থনা করছিলাম, অথচ আমরা একে অপরকে চিনতাম না। শেষমেষ একদিন আমরা একটি জাহাজকে আসতে দেখলাম। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম যে ওটা একটা মাছ ধরা নৌকা কিন্তু ওটা ছিল আসলে উদ্ধারকারী জাহাজ। আমরা সবাই ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার ও কান্না করছিলাম। জাহাজের একটি মানুষ আমার হাত ধরেছিল এবং বলছিল ‘তাড়াহুড়ো করো না’। আমার এখনও তার কথা মনে আছে। তিনি ছিলেন খুবই পাতলা এবং তার মাথায় একটা টুপি ছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমি এখন সুখী, কিন্তু অনেক বেশি একাকী।”
লেখাটি সংগৃহীত, ভাল লাগলো শেয়ার করলাম।