মিরাজের ঘটনা কুরআন ও সহীহ হাদীছের মাধ্যমে প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
(سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّه هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ)
“পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীর কিয়দাংশে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে আমি করেছিলাম বরকতময়। তাঁকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্যে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোত, সর্বদ্রষ্টা।
(সূরা বাণী ইস্রাঈলঃ ১)
ইমাম ইবনুল কায়্যেম (রঃ) বলেনঃ বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে মিরাজ হয়েছিল স্বশরীরে। তিনি প্রথমে বুরাকে আরোহন করে মাসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত ভ্রমণ করলেন। জিবরীল ফেরেশতা সাথেই ছিলেন। মসজিদের দরজার হাতলের সাথে বুরাক বেঁধে সেখানে নেমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবীদের ইমাম হয়ে নামায পড়লেন। মাসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত ভ্রমণকে ‘ইসরা অর্থাৎ রাত্রির ভ্রমণ বলা হয়। সেরাত্রেই বায়তুল মাকদিস হতে উর্ধাকাশ পর্যন্ত মিরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়।
আনাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি একদা কাবাঘরের নিকট ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় হিকমত (জ্ঞান) ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের পেয়ালা আনয়ন করা হলো। আমার বক্ষ হতে পেট পর্যন্ত ফেঁড়ে যমযমের পানি দিয়ে পেটের ভিতরের অংশ ধৌত করে তা ঈমান ও হিকমতের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো।
তারপর আমার নিকট খচ্চরের চেয়ে একটু ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় একটি সাদা রঙ্গের বুরাক নামক একটি বাহন আনয়ন করা হল। তিনি প্রথমে বুরাকে আরোহন করে মাসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত ভ্রমণ করলেন।
জিবরীল ফেরেশতা সাথেই ছিলেন। মসজিদের দরজার হাতলের সাথে বুরাক বেঁধে সেখানে নেমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবীদের ইমাম হয়ে নামায পড়লেন।
মাসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত ভ্রমণকে ‘ইসরা অর্থাৎ রাত্রির ভ্রমণ বলা হয়।
অতঃপর তিনি সিঁড়ির মাধ্যমে উর্ধাকাশে ভ্রমণ শুরু করলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ দুনিয়ার আকাশের নিকটবর্তী হলাম। জিবরীল ফেরেশতা আমার সাথেই ছিল। উপর থেকে আগমণকারীর পরিচয় জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, কে?
উত্তরে জিবরীল বললঃ আমি জিবরীল।
আবার জিজ্ঞেস করা হলোঃ আপনার সাথের লোকটি কে?
তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ।
বলা হলোঃ তাকে কি আসতে বলা হয়েছে?
জিবরীল বললেনঃ হ্যাঁ।
আকাশের ফেরেশতাগণ বললেনঃ স্বাগতম, শুভ হোক তাঁর আগমণ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
প্রথম আকাশে আমি আদম (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি আমাকে স্বাগতম জানিয়ে বললেনঃ আমার ছেলে ও নবীর আগমণ শুভ হোক।
দ্বিতীয় আকাশে যাওয়ার সময় আমাদেরকে একই প্রশ্ন করা হল। সেখানে গিয়ে আমি ঈসা এবং ইয়াহইয়া (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তাঁরা উভয়ই আমাকে সমাদর করলেন এবং স্বাগতম জানালেন।
তৃতীয় আকাশে ইউসূফ (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও আমাকে স্বাতম জানিয়ে বললেনঃ আমার ভাই ও নবীর আগমণ শুভ হোক।
এমনিভাবে চতুর্থ আকাশে গিয়ে ইদরীস (আঃ)।
পঞ্চম আকাশে হারুন (আঃ)।
ষষ্ঠ আকাশে মূসা (আঃ)এর সাথে দেখা করলাম। মূসা (আঃ)কে সালাম দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসার সময় তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। তাঁকে ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! এই ছেলেটিকে আমার অনেক পরে নবী হয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে কিন্তু আমার চেয়ে অধিক সংখ্যক উম্মাত নিয়ে আমার পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
পরিশেষে সপ্তম আকাশে গমণ করলাম। উপর থেকে আগমণকারীর পরিচয় জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করা হলঃ কে?
উত্তরে জিবরীল বললেনঃ আমি জিবরীল।
আবার জিজ্ঞেস করা হলোঃ আপনার সাথের লোকটি কে?
তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ।
বলা হলোঃ তাকে কি আসতে বলা হয়েছে?
জিবরীল বললেনঃ হ্যাঁ।
আকাশের ফেরেশতাগণ বললেনঃ স্বাগতম, শুভ হোক তাঁর আগমণ।
সপ্তম আকাশে গিয়ে ইবরাহীম (আঃ)এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম।
তিনি বললেনঃ আমার সন্তান ও নবীকে স্বাগতম।
মেরাজের সত্যতা অস্বীকার কারী অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে। এই মেরাজের রজনীতেই রাসূল (স.) তার উম্মতের জন্য পঞ্চওয়াক্ত নামায ইবাদত হিসাবে উপহার স্বরূপ গ্রহণ করেছেন মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে। জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায-ই প্রত্যেক মুমিনদের জন্য মেরাজ।