জীবন সম্পর্কে আমার স্ত্রীর অপরিমেয় অজ্ঞতা ও চূড়ান্ত যুক্তিহীনতা আমাকে নিরন্তর বিস্মিত করে।
একবার আমাকে অফিস থেকে ওম্স্ক নামের শহরে বিজনেস ট্রিপে পাঠানো হয়েছিল। সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি বুঝে নেওয়ার জন্য। যাওয়ার আগে স্ত্রী বলল, ‘খুব ভালো হলো। ওখানে গিয়ে তুমি হোটেলে থাকতে না চাইলে কেশার বাসায় উঠতে পারবে।’
‘শোনো, আমি যাচ্ছি ওমেস্ক, আর তোমার ভাই কেশা থাকে তোমেস্ক। আমি কীভাবে তার বাসায় গিয়ে উঠব? নাকি তোমার ধারণা, ওম্স্ক আর তোম্স্ক একই শহর?’
‘রাগ করছ কেন!’ সে বলল। ‘আমি স্রেফ মনে করিয়ে দিলাম। যদি কাজে লাগে!’
আমি নীরবে কাঁধ ঝাঁকালাম।
ওমেস্ক পৌঁছানোর পর আমাকে জানানো হলো, আমাদের অর্ডার অনুয়ায়ী যন্ত্রপাতি সব প্রস্তুত, তবে ডিরেক্টরের স্বাক্ষর ছাড়া সেসব আমার হাতে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। আর ডিরেক্টর এখন নভোসিবিরস্কে। দুই সপ্তাহের সেমিনারে। একটু ভেবে নিয়ে আমি নিজেই রওনা দিলাম নভোসিবিরস্কের উদ্দেশে। ওখানে গিয়ে জানা গেল, সেমিনারের স্থান পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তোমেস্কর অত্যন্ত অগ্রসর এক কারখানায়। এভাবেই কেশার বাসায় অতিথি হতে হলো আমাকে।
‘দেখলে তো,’ স্ত্রী বলল তৃপ্তির সুরে, ‘অথচ তুমি বলেছিলে ওম্স্ক নাকি তোম্স্ক নয়। তুমি শুধু তর্ক করার সুযোগ খোঁজো!’
কিছুদিন আগে ফ্রান্সে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার, টুরিস্ট হিসেবে।
‘ইশ্! কী যে ঈর্ষা হচ্ছে আমার!’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আমার স্ত্রী। ‘ফ্রান্সে যাওয়ার কী যে স্বপ্ন আমার! একটা অনুরোধ করি, পিসার বিখ্যাত সেই হেলানো টাওয়ারের সামনে অবশ্যই একটা ছবি তুলো।’
‘তুমি মনে হয় আইফেল টাওয়ারের কথা বলতে চেয়েছিলে, তাই না?’ নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলাম তাকে।
‘আইফেলের টাওয়ারও হেলানো নাকি?’ ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল সে।
‘না। হেলানো টাওয়ার আছে পিসায়। আর পিসা ইতালিতে। এবং আমি যাচ্ছি ফ্রান্সে। তাহলে পিসায় কী করে ছবি তুলব, বলো?’
‘তোমাকে কোনো অনুরোধও করা যায় না!’
আমি নীরবে কাঁধ ঝাঁকালাম।
আমাদের প্লেন যখন ফ্রান্সের আকাশে, তখন স্টুয়ার্ডেস হঠাৎ ঘোষণা করল, ফ্রান্সের সব এয়ারপোর্টের কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করছে, অতএব আমাদের ল্যান্ড করতে হবে প্রতিবেশী দেশে, যেখানে ধর্মঘট সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এভাবেই আমি পড়লাম গিয়ে ইতালিতে।
পিসার হেলানো টাওয়ারের সামনে তোলা ছবিটা পরে স্ত্রীকে যখন দেখালাম, সে আমাকে চুমু খেয়ে বলল, ‘দেখলে তো! অথচ তুমি বলছিলে, আইফেল টাওয়ার হেলানো নয়!’
(ঈষৎ সংক্ষেপিত)
মূললেখাঃ ভ্লাদলেন বাখনোভ
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৪৫