বিশ্ব মা দিবসে হঠাৎ করে এক জন মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। হয়তো আজ আর তিনি বেঁচে নেই । বেঁচে থাকলে যেন ভালো থাকেন আর যদি
মারা যান তাহলে আল্লাহ্ যেন তাকে বেহেস্ত নছিব করেন।
তিন সন্তানের গর্বীত মা । তার অনেক গর্ব কারন সাত সমুদ্র তের নদী পার করে বিদেশের মাটিতে তিন ছেলে যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত । মায়ের কত স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের সংসারে নাতি-নাতনীদের সাথে শেষ জীবনটা কাটাবেন। তাছাড়া যে দেশে তার জানের টুকরা গুলো থাকে সেখানকার মানুষ গুলো কেমন তাও দেখার ইচ্ছা। ছেলেদের কত বলেছে নিয়ে যেতে কিন্ত তাদের সময় হয়না। অবশেষে বৃদ্ধ মায়ের আশা পুরন হল। বড় ছেলে মায়ের জন্য ভিসা পাঠিয়েছে ।তাও আবার মাত্র ২মাসের জন্য । ২মাসের ভিসা শুনে মায়ের মনটা খারাপ হলেও যেতে পারছে তাতেই খুশি । কিছু দিনের জন্য হলেও তো সবাই এক সাথে থাকতে পারবে।
অনেক অপেক্ষার পর মা এসে পৌঁছালেন ছেলেদের কাছে । সবাইকে এক সংগে পেয়ে খুশিতে মায়ের চোখে পানি আর বাধঁ মানে না। প্রথম মাস মা বড় ছেলের কাছে থাকবেন সাব্যস্ত হলো। মনে মনে মা ও ঠিক করেছেন ১মাস বড় ছেলে আর আরেক মাস মেজ ছেলের কাছেই থাকবেন। ছোট ছেলের কাছে তো আর থাকা হবে না ।কারন ছোট ছেলে বিদেশী মেয়ে বিয়ে করেছে । বিদেশী মেয়ে বিয়ে করার জন্য মা একটু অখুশি তার উপর। ভাবলেন বিদেশী বউ কি আর বৃদ্ধ মায়ের কদর বুঝবে । তার থেকে বরং ছোট ছেলে মাঝে মাঝে এসে মাকে দেখে যাবে।
বড় ছেলে চাকরি করে , সব সময় ব্যস্ত থাকে । সকালে বেরিয়ে যায় ফিরে সেই রাতে ।শুধু রবিবার দেখা হয়। বউমা কমিউনিটির সেবা মুলোক কাজে সারা দিন বাহিরে থাকে। তাদের একমাত্র ছেলে অন্য সিটিতে থেকে পড়াশুনা করে। কয় দিন পরেই মা বুঝতে পারেন কি নি:সংগ জীবন এখানে। খাওয়ার সময় কাউকে পাননা। মা আবার ঘন ঘন চা পান করেন।কে বানিয়ে দিবে ? একদিন মা কিচেনে যান চা করতে । অনাভ্যসের কারনে চুলায় চা ফেলে । তার জন্য বউমার কাছে কথা শুনতে হয়। অন্য একদিন প্রচন্ড ক্ষুধার জালা সইতে না পেরে ভাত রান্না করতে গিয়ে পাতিল পুড়ায় । এবার বড় বউমার মুখঝামটা সহ অনেক কথা শুনতে হয়। সে বলে "যেহেতু এখানে চা করে দেওয়ার জন্য কেউ নেই সেহেতু চায়ের নেশা ছাড়তে হবে। আর যতই ক্ষুধা লাগুক আমি না আসা পর্যন্ত ভাত খাওয়া নেই । কারন আমার কিচেনে কেউ হাত দিক বা এলোমেলো করুক আমি তা চাইনা।" টয়লেট অপরিস্কার নিয়ে এক রবিবারে স্বামীর সাথে বউয়ের রাগারাগী মাকে শুনতে হয়। তারপর থেকে মা টয়লেট সেরে নিজের কাপড় দিয়ে কমড মুছে বের হন । এখন মা চা খান না , ক্ষুধা লাগলেও ভাত খান না। শুধু নিরবে চোখের পানি ফেলেন । বড় ছেলে একদিন বলেই বসলো " মা একা বাসায় তোমার অনেক কষ্ট হয় , তুমি বরং কয়দিন মেজোর ওখানে থেকে আসো । ছেলের কথা মত মা মেজ ছেলের বাসায় যেতে রাজি হন ।
মা এখন মেজ ছেলের বাসায় । মেজ ছেলের এক ছেলে ও এক মেয়ে । প্রথম দিন ভালই কাটলো । কয়দিন যেতে না যেতেই মেজ বউমার কাছে মা বোঝা হয়ে দাঁড়ালো । ছেলে মেয়ে দেখাশুনার পাশাপাশি বৃদ্ধ শ্বাশুড়ীকে দেখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা । তাছাড়া ছোট বাসা একসাথে থাকতেও সমস্যা । মা বুঝতে পারেন আসলে তার এখানে আসাটাই ঠিক হয়নি। বৃদ্ধ মায়ের লালিত স্বপন দিনে দিনে ফিকে হতে থাকে। তার যেন আর দিন কাটে না । ২মাস হতে আর কত দেরি ???????
মা চুপ চাপ সারা দিন বাসায় বসে থাকেন । শরীরটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে ।
ছোট ছেলে বার বার মার কাছে জানতে চায় তার কনো সমস্যা হচ্ছে কিনা । মা কিছুই বলেন না। বলে আর কি হবে। যেখানে দেশী মেয়েরা বৃদ্ধ শ্বাশুড়ীর কষ্ট বুঝলো না সেখানে বিদেশী মেয়ে কি বুঝবে । মা নিরব থাকেন আর মনে মনে কষ্ট পান।
কোন মতে একমাস পার করে মা দেশে ফিরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন । ছোট ছেলে এইবার মাকে জোর করে " মা তোমার কি হয়েছে আমাকে বল ।" ছেলের কথা শুনে মা হু হু করে কেঁদে উঠেন । সব বলেন । ছোট ছেলে আর কোন বাধাঁই মানে না । মাকে নিয়ে আসে নিজের ফ্লাটে । ছেলে নিজ হাতে মায়ের সেবা করে ।আর বিদেশী বউয়ের সেবা পেয়ে মা কয়দিনের মধ্যে সেরে উঠেন । ছোট বউমা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া, ঘুম সব দায়িত্ব নিজে পালন করে। যদিও ছোট ছেলে এবং বউমা দুজনেই চাকরি করে। তবু বাহিরে যাওয়ার আগে শ্বাশুড়ীর জন্য খাবার রেডি করে রাখে, ফ্লাক্স ভর্তি করে চা করে রাখে সব কিছু হাতের কাছে দিয়েই সে বাহিরে যায়। ঘুমাতে যাবার আগে ৩জন মিলে বিভিন্ন গল্প করে । সারা দিনের একাকিত্ব এই সময়টুকুতে ম্লান হয়ে যায়। ছুটির দিন গুলোতে ৩জন মিলে ঘুরতে যায় । বিদেশী মেয়ে বিয়ে করার জন্য ছোট ছেলের প্রতি মায়ের যে অভিমান কষ্ট ছিল তা দুর হয়ে যায় ।
দুইমাস শেষে মা দেশে ফিরে আসেন ।
শোনা কিন্ত বাস্তব ঘটনা ।