রাষ্ট্রে কন্সপিরেসী নিয়া একটা সিরিজ শুরু করছিলাম সেইটা আসলে এতোই রিপিটেটিভ মনে হইতে লাগলো যে একসময় মনে হইতে লাগলো এই লেখা অর্থহীন...একই কন্সপিরেসী যখন একটা জায়গায় ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা হইতে থাকে, আর তা ফলপ্রসু হইতে থাকে তখন কি সেইটা আর কন্সপিরেসী থাকে? আমার এই প্রশ্ন আমারে নিজের চিন্তার জায়গা থেইকাই খানিকটা সরাইয়া দিলো...মনে হইলো এই জাতিরে যা'ই কই জটিলতাপূর্ণ কইতে পারি না। সরলতার পরাকাষ্ঠা পইরা বাঙালী জাতি তার স্বমহিমায় আছে...আর যেই কারনে শাসকেরা যারা আসলে অন্য জাতীয়তার বা অন্য সংস্কৃতির ছোঁয়া পাইয়া নিজেগো খানিকটা আলাদা কইরা ফেলেন...যারা আর্থ-সামাজিক কারনে নিজেগো শাসক ভাবতে শিখে তারা এই মানবগোষ্ঠীরে ভুংভাং বুঝাইয়া ফেলতে পারে।
শাসকেরা যা করে সেইটাই এই অঞ্চলের সবধরণের ক্ষমতার চর্চ্চাকারী প্রতিষ্ঠানের আচরন হয়। যেই কারনে কন্সপিরেসী তার চরিত্র হারাইতে শুরু করে। কন্সপিরেসী ক্রমশঃ নিয়মের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হইতে শুরু করে। আর তার প্রতিফলন আমরা সরকারী কর্মচারীগো মধ্যে দেখি, কর্পোরেইট ম্যানেজমেন্ট কাঠামোয় দেখি, মহল্লার বড় ভাই টাইপ মাস্তানগো মধ্যে দেখি, ক্লাব-সমিতি-সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সবধরনের hierarchical গঠন কাঠামো আছে এমন সংগঠনেই এই আচরন দেখা যায়...কোন জায়গা ওপেন শুনলে আমাগো জাতিগত সরলতায় প্রত্যাশা নির্মান করি...আর কিছু দিন গেলে শাসক শ্রেণীর প্রতিষ্ঠিত নিয়মানুগ কন্সপিরেসী দেখি।
ধরা যাক একটা ব্লগ সাইট তৈরী হইলো, নাম দিলাম কোন একখানে ব্লগ...। তারা ঘোষণা দিলো এই জায়গায় সকল কন্ঠস্বর উন্মুক্ত হইবো। সমাজে অবস্থিত সকল স্বর, যার অবমুক্তি হয়না সামাজিক বিভিন্ন stigma-র কারনে...তারেও এই খানে অনায়াস করতে হইবো। তো এই কোন একখানে ব্লগ... কর্তৃপক্ষ কইলো, তারা মনে করে independence war নিয়া যেহেতু জাতিগত উন্মাদনা আছে। এই war-এর বিরুদ্ধে কিছু কইলে যেহেতু সাধারন মানুষ তাগো বুদ্ধি কাঠামোর চাইতে আবেগরে গুরুত্ব দ্যায় বেশি তাই এই আবেগাক্রান্ত ভূমিরে শিক্ষিত করতে হইবো। সমাজে এখনো যেই independence war বিরোধী ছোটখাটো কন্ঠস্বরগুলি রইয়া গেছে তারে বাইর কইরা আনতে হইবো। এইসব স্বরেও আসলে উন্নয়নের ধারা সমাহিত থাকে(!?)
কোন একখানে ব্লগ... কর্তৃপক্ষ আসলে কি কন্সপিরেসীতে আছে মনে হয়? কে জানে? কিন্তু তারা এক্কেরে নিয়মের চেহারা দিয়া বিষয়টারে সামনে আইনা ফেলতে পারে... আর এই নিয়মের চেহারাটা আদৌ কি কন্সপিরেসী ঠেকে? যারা war বিরোধী ছিলো তারা যেই মতাদর্শে লড়ছে সেইটা যদি এই জাতির স্বপ্ন বিরোধী হয় তাইলে সেই স্বপ্নের কি উন্নয়নকামী ভূমিকা থাকে? ওপেন হওয়ার মানে যদি হয় সকল মতরে সুযোগ দেওয়া, তাইলে সেইটা সম্পূর্ণ করাটাই যৌক্তিক। কিন্তু কোন একখানে ব্লগ যদি এখন রাষ্ট্রের আইন মাননের অজুহাতে রাষ্ট্রবিরোধী (!) বিশেষ খবর ছাপনের সম্ভাবনা নাকচ করে, অনুভূতিতে আঘাত করনের নামে কোন পোস্ট মুইছা দেওনের নিয়ম করে তখন আসলে কি ধইরা নিতে হয়? মানুষ আসলে চাইলেও ওপেন হইতে পারে না...এখন কোন একখানে ব্লগের ক্ষেত্রে কওনটা সম্ভব না যে তারা ঐ independence war-এর মাধ্যমে জন্ম নেওয়া দেশরে belong করেনা-তারা কেবল ভাষাভিত্তিক একটা ব্লগ সাইট, কারন তারা ঐ দেশের আইন মাননের ঘোষণা দিতে চায়, ঐ দেশের শ্লীলতার গন্ডী মাইনা চলতে চায়...কারন সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তারা যাইবো না, সেই ঘোষণা তারা দ্যায়।
তারমানে আসলে তারা এইসব নীতিমালা আর ওপেননেসের ঘোষণা দিয়া যা করতে চায় সেইটা একটা কন্সপিরেসী'র অংশ হইতেই পারে। আর এই কন্সপিরেসী যে নতুন হইবো তাতো না...এই দেশে এই টাইপ কন্সপিরেসী অতীতেও হইছে। মুক্তিযুদ্ধ বেইচা আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় গিয়া ভুইলা গেছে যুদ্ধাপরাধীগো বিচার করনের কথা, বিএনপি'তো যুদ্ধাপরাধীগো লগে জোট কইরাও স্বাধীনতার চেতনা নিয়া বাগাড়ম্বর করছে বিশেষ দিবস আইলেই...
এইভাবেই আসলে কন্সপিরেসীগুলি সাংগঠনিক নিয়মে পরিনত হইতেছে এই দেশে, যারা প্রয়োগ করে তারা ঐটারে হয়তো কন্সপিরেসী কইয়া ধরতে পারে, কিন্তু সাধারন মানুষ-যারা শাসকের শোষণরে প্রতিনিয়তঃ উপলব্ধ করে, তারা এইসবরে শোষকের-শাসকের আচরন-স্বভাব বইলাই ধইরা নেয়।
কেবল একটা ক্ষেত্রেই শাসক তার চিরাচরিত আচরনে যায়...যখন এই সব সাধারন মানুষ সর্বতো আন্দোলনে যায়...যখন প্রতিবাদী মানুষ শাসকের মসনদ কাঁপাইয়া দ্যায়...তখন এই সব শাসকেরা, সাংগঠনিক ক্ষমতার শাসকেরা সরাসরি নির্যাতনমূলকতায় যায়। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যা হয় জেলবন্দীকরন, মহল্লায় হয় চর থাপ্পর, ক্লাব টাইপ সংগঠনে হয় অপমান আর ব্লগ সাইটে সেইটা হইতে পারে ব্যানমূলক...