আলভীর করা ব্লগ পোস্ট দেইখা আমি উৎসাহিত হইলাম....
অন্তর্যাত্রা দেখতে গেছিলাম আমার আর মৌসুমের প্রেমের প্রথমদিককার একটা সময়ে। ঠিক যেমন আমেরিকান পোলাপাইনেরা চিক ফ্লিক্স দেখতে যায়। আমাগো দুইজনই ফিল্ম দেখতে ভালোবাসি,,,যদিও মৌসুম হলিউড ড্রামা টাইপ আর আমি ইউরোপিয়ান ফিকশনের ভক্ত তারপরও স্ক্রীনে ভিন্নরম বাস্তবতারে দেখতে ভালোবাসি দুইজনেই। অন্তর্যাত্রা যেই দিন দেখলাম তার দুই দিন আগেই দেখছিলাম এমআই থ্রি। ছবির ভাষা আমাগো প্রেমের উপজীব্য হইয়া উঠে...আর সেইটারে বেশ উপভোগও করতেছিলাম আমরা। যাই হোক, তারেক ভাইয়ের ছবিতে নিটোল একটা গল্প পাওন যাইবো, যেইটা দেইখা আমরাও মোহিত হইয়া কথা বলার নতুন বিষয় পামু এইরম উদ্দেশ্য আমাগো ছিলো। এইটা খুব ভালো উদ্দেশ্য না একটা ভালো ফিল্ম দেখনের লেইগা, এইটা আগেই বইলা নিতেছি।
পোস্টারে লেখা দেখলাম বাংলাদেশে এই প্রথম ডিভি মাধ্যমে চিত্রায়িত চলচ্চিত্র। ক্যামেরা কি ছিল সেইটা জানতাম। কিন্তু এইটারে বিজ্ঞাপণের মতো কইরা যেহেতু ব্যবহার করা হইছে সেইটা দেইখা আমার একটু খারাপই লাগলো...ভিম ভেন্ডার্স যখন করেন তখন এইটারে সনি কোম্পানী ব্যবহার করে তাগো ক্যামেরা বিক্রী বাট্টায়, সেইটা তা'ও মাইনা লওয়া যায়, কিন্তু ভেন্ডার্সরে কখনো এইটা সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর ছাড়া কইতে শুনি নাই, পড়ি নাই। ছবি যেই মিডিয়ামেই বানানো হউক তাতে আসলে কি হয়? ভিডিওতে ছবি বানানো মানে টেকনোলজী আপনের হাতের নাগালে...ইচ্ছামতো রঙ বানাইতে পারেন...লাইট ব্যবহার কমাইয়া দিতে পারেন...কিছুক্ষণ পর পর রোল চেঞ্জ করনের ঝক্কি থেইকা বাঁইচা যাওন যায়। কিন্তু তাতে এইটার বাজার তো আরো কম হওনের কথা! যাউগ্গা গরীবের দেশে এইটাও ইউনিক সেলস পয়েন্ট(!), বিজ্ঞাপণের নির্ভরতা হলিউডে বহুত চলে কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে!?
ছবির শুরুতেই লন্ডনের একটা ঘর...যেইখানে মা আর ছেলের কথোপকথন। তারেকভাইয়ের এই মাস্টারীটা বেশ লাগে, ডায়লগ দিয়া চরিত্রের একটা কাঠামো দাঁড় করাইয়া দ্যান। এইটা ভালো গুণ। কিন্তু অতীতে দেখছি এইবারো মনে হইলো তিনি ছবির ডায়ালগেই বেশি মনোযোগী, ইমেজ নিয়া ভাবনার জায়গাটা কম। ঐখানে পোলাটারে দিয়া চ্যাট করানটারে একটু দেখাইলেন, কিন্তু ঐটা এস্টাবলিশ হওনের আগেই তারা ঢাকাতে। সারা যাকেরের চাইতে পোলাটা ভালো অভিনয় করতেছিলো বইলা আমার মনে হইছে। ঢাকায় আইসা আরেকটা চরিত্র সামনে আসলো, হ্যারলড রশীদ অভিনয় বেশ করলেন, কিন্তু এই চরিত্র যেই সারা যাকেরের পূর্বতন স্বামীর বাড়িতে ধরাইয়া দিয়া গেলেন, গল্পে তার গুরুত্ব অলমোস্ট নাই হইয়া গেলো। মাঝখানে আবার আনুশে আর বুনো আসলো, যারা লক্ষণ দাশের দুঃখের গান গায় হাসিমুখে। লক্ষণ দাশ চরিত্রটাও ঠিক কেরম হঠাৎ চরিত্রমতোই রইয়া গেলো। তার দরদ, তার অতীত মূখীনতা স্পষ্ট হওনের আগেই তারা গল্পে আর নাই...
সিলেট গেলো এই প্রবাসী মা আর ছেলে। ছেলেতো তার বাপের বাড়ির প্রকৃতি আর বিভিন্ন বাঙালী মুসলমানী সংস্কৃতি দেইখা অভিভুত! মা'য়ের ব্যপারটা বুঝনের আগেই তারা দুইজন আবার পারিবারিক বিশ্লেষণে জাড়াইলো...যেইখানে জয়ন্তদা আসলেন একধরনের দ্্বৈত চরিত্র নিয়া, যারে ঠিক বোঝা যায় না। তিনি কি স্যাটায়ার? নাকি জাক্সটাপোজ সত্ত্বেও তিনি ভালো? এই দুই অবস্থানের কোন প্রশ্নের জবাবই ছবিতে ঠিক স্পষ্ট হয় না। একজন জ্যাঠাইশের চরিত্র আসে...যে আবার বীতশ্রদ্ধ দেশ আর বাঙালীগো উপরে কিন্তু তিনিও ধোঁয়াটে থাকেন।
এইরম অসংখ্য ধোঁয়া ধোঁয়া চরিত্র নিয়া অন্তর্যাত্রা অবশ্যম্ভাবী ভাবেই এক মা-ছেলের ছবি হয়। যাদের পারস্পরিক দ্্বন্দ্ব থাকে। বোঝা, নাবোঝা থাকে। ছেলেটা হঠাৎ মনে করে তার লন্ডন যাত্রা আসলে নিজের থেইকা দূরে যাত্রা...আর মা পড়ে দোটানায়। ছবির গল্প এইরম।
গল্প হিসাবে খুবই সাধারণ একটা ছবির ইনার মোরালিটি বড় হইবো এইটাই আসলে স্বাভাবিক...অন্ততঃ যেই ছবি বাজারের কথা ভাইবা বানানো হয়, পশ্চিমের পুরস্কারের কথা মাথায় রাইখা বানানো হয়। কিন্তু তারপরেও বড় ছবি হইয়া উঠনের সম্ভাবণা থাকে এইরম ছবির...তার জন্য চাই অন্তদ্র্্বন্দ্ব আর তার উপাখ্যাণ। কিন্তু এইসব তৈরী হওনের আগেই অন্তর্যাত্রা একটু অন্তজর্্বালার গল্প হইয়া উঠে। জ্বালা আমারেও জ্বালায়...অন্তর্যাত্রা ছবি হিসাবে আমারে যতোটা না আকর্ষণ করে, তার চাইতে এইটার ট্রাইলিঙ্গুয়ালিটির চরিত্রটা আমারে বেশি ভাবায়।
ক্যামেরা চালাইছিলো একজন বিদেশী...কিন্তু খুব ভালো ফটোগ্রাফির নমূনা চোখে পরে নাই। ভিডিও'র লাইট ডিজাইনেই কাজ কইরা যাওয়া হইছে। বরং সিলেট এলাকার সবুজরে ভিডিওর রেজোলুশানে অনেক ম্যাটম্যাটাই লাগছে। ছবির এডিটিং ভালো লাগছে...ক্যাথরিন(?)। ডায়ালগ শুইনা মনে হইছে, অধিকাংশই অ্যাক্টিং করতেছিলো...চরিত্র কারো কাছেই খুব বেশি স্পষ্ট হয় নাই। কিরোস্তামি কিংবা মাখমালবাফের মিনিমালিজম এইখানে নিশ্চিত ভুল বোঝা হইছে। আমার কাছে বোঁঝাবৎ লাগছে।
তারেক ভাইরে এর আগে একবার মধ্যবিত্তের বাতাবহ কইয়া সম্পর্ক খারাপ বানাইছিলাম, এইবার তার ঐ রোগটারেই চোখে পরছে...এখন আরো কটকটাইয়া তাকায় তার ঐ চরিত্র। তয় প্রোটাগনিস্ট চরিত্র সকলেই ভালো করছে। প্রাচীদির অতিঅভিনয় আমার অনেক সময় ভালোই লাগে। হ্যারলড রশীদ তার চরিত্রটারে অভিনয় দিয়া গুরুত্বপূর্ণ বানাইয়া ফেলতে পারতেছিলেন। ছবির আর্ট ডিরেকশন ভালো হইতে হইতে খারাপ হইয়া গেছে। তয় এই ছবির একটা জিনিষ ভালো লাগছে, তা হইলো কাস্টিং!
যাই হোক, তারেক ভাইরে আমরা তার আদমসুরতের লেইগা পছন্দ করি। সেই ছবিতে তার প্যাশনটা বল্কাইয়া বল্কাইয়া বাইর হইতেছিলো। কিন্তু গত বেশ কয়েকটা ছবিতেই আর ঐ প্যাশনের উপস্থিতি না দেইখা...আমি আসলেই মুষরাইয়া পরি। তারেক মাসুদের ভালো ছবি আসলেই প্রয়োজন...