প্লান টা অনেকদিন আগেই ছিল। সময় আর সুযোগ এর যুগলবন্ধি হতে তিন বছর লেগে গেল। গত ৩০ এপ্রিল হামহাম ঝর্ণা দেখতে বেড়িয়েছিলাম। চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল এর কমলগঞ্জ – আদমপুর- নইনারপাড়- কলাপাড়া পেড়িয়ে হাম হামের পথ। ছোট টিলা, বড় টিলা, বুনো জঙ্গল, বাঁশ বন, ঝিরি, কাদা-পানি মাথায় নিয়ে যখন ঝর্ণার কাছে পৌছুলাম তখন মাথার উপর সূর্য্য। আমি এক ক্লান্ত পথিক, তৃষ্ণায় গলা কাঠ হয়ে আছে। আর কতো দূর?? হঠাত কানে এল সূরেলা এক নিক্কন, বনের নিস্তন্ধতা ভেঙে ঝর্ণার রিমঝিম শব্দ, বড় আবেদন তার। চোখ তুলে তাকালাম বাঁশ বনের ফাঁক দিয়ে। আমি কি দেখছি, আমি কী দেখছি?? বর্ণনা ব্যার্থ আমি কী আর বলব, আমি কী বলতে পারি? মুহুর্র্তে রাজ্যের মুগ্ধতা, আমার চোখ ভরে গেল, ঝর্ণার কলতানে আমার কানে সুরের মূর্ছনা- আমি নির্বাক হয়ে গেলাম.. সুবহানআল্লাহ..
হাম হাম যেতে আসতে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছি। গিয়েছি টিলা পথে এসেছি ঝিরি পথে। ছবি তুলেছি অনেক। ৩০ টা ছবির একটা এ্যালবাম আপনাদের ভার্চুয়াল হাম হাম ডিসকভারিতে নিয়ে যাবে।
কলাপাড়া। হাতের লাঠি ১০ টাকা পিস। আর গাইড ২০০-৩০০ টাকা / ট্রিপ
খুব ভাব নিয়ে যাত্রা শুরু। ফিরে আসতে ফুল প্যান্ট আর ফুল ছিলনা। কোনো এক টিলা থেকে নামতে নামতে হঠাত পা স্লিপ করে পরে গেলাম.. কি সে ভয়ঙ্কর পতন। দুই পাক খেয়ে আঁটকে গেলাম এক গাছের গোড়ায়। আমি অক্ষত। কিন্তু আমার শখের গেবাডিন প্যান্ট টা ফরাত করে ছিড়ে গেল। আহা’ বুঝলাম, ট্রভেলে এত ভাব চলে না রে মমিন।
ভুল পথে আড়াই ঘন্টা; মনে হইছিল গাইড শালারে নীল ডাওন করায়া বসায়া রাখি।
ভুল পথের ক্লান্তি
হাম হামের ঠিক পথের জন্য নতুন গাইড
নামঃ ভাগ্য নতুন গাইড
দুর্গম পথ
তৃষ্ণার সাম্রাজ্যে মানুষ আর কুকুরের পার্থক্য খুব সামান্য
অবশেষে, শীতল জলের ছোঁয়া। মনে হচ্ছিল কিছক্ষন সুয়ে থাকি। পানি এতো আদরণীয় কিভাবে হয়!!!
আমার স্ত্রী বলে, আমি আর আমার মত পাগল যারা আছে, তারাই বনে বাদারে ঘুরে বেড়ায়।
বিএসএফ ক্যাম্প- ভারত; ওখানে কি লুকিয়ে আছে কোন খুনির চোখ??
গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া
তোর জন্য আমি বন্য আর মাতাল অনুভব
সঙ্কুচে জানাই আজ। একবার মুগ্ধ হতে চাই... এতোদিন সাহস ছিল না কোন ঝর্না জলে লুন্ঠিত হবার। এই ছবিতে আমি আছি কিন্তু!! খুঁজে বের করুন তো!
হ্যালো হামহাম
জলজ পথে ফেরা
ক্লান্তি মুছে ফেলা
ফেরাঃ ঝিরি পথ
ফেরাঃ জঙ্গল
বাঁশবন
হারিয়ে যাওয়া
পথের বৈচিত্র
জোঁকের রক্তিম শুভেচ্ছা।
ঝিরি পথ
পিচ্ছিল, সম্ভাব্য আছাড় এর অপেক্ষা
দারুন একটা খাড়ি
দারুন একটা খাড়ি
চারিদিকে পাখির কুজন আর বনের বুনো গন্ধ; বড় অদ্ভুদ
জংগল পথ
দ্যা লোনলি ট্রাভেলার
শেষ রক্ষা হল না; ধুর... সব ভিজে গেল।
হাম হাম ঝর্না দেখে যখন বাসায় ফিরি তখন রাত ৩:৩০। আমার পরনে সাদা লুঙ্গী, আর টিশার্ট। লুঙ্গীর যথানে স্থানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলল আমার প্রিয়তমা স্ত্রী। তার বিস্ফোরিত চোখের আশঙ্কা আতঙ্ক ফেরাতে আমার একটু সময় লেগেছিল বৈকি!