আজ এই চৈত্রের দুপুরের প্রচন্ড দাবদাহে চানখাঁরপুল থেকে হলে ফিরে আসছিলাম। রিক্সা না পেয়ে হেঁটে আসছি ঢাকা মেডিক্যালের সামনে দিয়ে। প্রচন্ড গরমে অবস্থা কাহিল। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মনে হচ্ছিলো গরম তাওয়ার উপর দিয়ে আসছি। আর্টসেলের নতুন আঙ্গিকে গাওয়া কান্ডারী হুশিয়ার গানটা মোবাইল ফোনে নতুন ঢুকিয়েছি, তাই কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কান্ডারী হুশিয়ার গানটা আমার অতি প্রিয় গানের তালিকার একটি গান। হঠাৎ ১৯৭১ এর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে পড়লো। কী কষ্টই না করেছে ওঁরা যুদ্ধের সময়! প্রচন্ড গরমে মাঠেগঘাটে খালে বিলে ওঁরা ভারী অস্ত্র নিয়ে মাইলের পর মাইল হেটেছে, আহত সঙ্গীর দেহ কাধে নিয়ে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাইলের পর মাইল ছোটেছে, তাও আবার এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তাঁদের সেই নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়েই আজ আমি এভাবে স্বাধীন ভাবে হাটতে পারছি রাস্তায়। নিজের কাছেই নিজে লজ্জ্বিত হলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসে মাইলের পর মাইল ভারী অস্ত্র নিয়ে হেঁটেছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মাথায় নিয়ে, আর আমার কিনা এই স্বাধীন দেশে আধা কিলোমিটার হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে! হলে ফিরেই আমি ফ্যানের বাতাস পাচ্ছি, মুক্তিযোদ্ধারা তো সেই সুবিধাটাও পায়নি। নিজের উপর মিজাজ খারাপ হয়ে গেলো। শুরু করলাম একমনে হাঁটা! সাথে কান্ডারী হুশিয়ার! এই প্রচন্ড গরমেও দেখি গা শিরশির করে উঠলো হঠাৎ! তারপর কীভাবে হলে আসলাম কিছুই টের পাইনি। গরম তো দূরের কথা! মনে হলো হলে উড়ে আসলাম! মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আরো একবার শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে গেলো। ধন্যবাদ কাজী নজরুল ইসলাম কে, এমন দুর্দান্ত একটি গান আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। আর্টসেল কেও ধন্যবাদ, এতো সুন্দর ও আবেগ দিয়ে গানটা গাওয়ার জন্য।
গানটার লিঙ্ক এখানে দিয়ে দিলাম।