একটি হটাৎ ভ্রমন বিছনাকান্দি,সিলেট।
বলা হয়ে থাকে সিলেটের সব থেকে আকর্ষনীয় স্থান বিছনাকান্দি। অনেকের কাছে এটির রেটিং ৮.৫।
কিছু কথা: আপত দৃষ্টিতে আমার কাছে সিলেটের মেয়েরা অত্যন্ত সুন্দরী,পর্দাশীল।এমন ভাবে রোরকা আর হিজাব পরে যে চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।দেখলেই প্রেমে পরতে মন চায়।সজিদগুলো আর বাড়িগুলো অনেক সৌখিন।প্রায় সকল বাড়িতেই ত্রিভূজ আকারের কোন না কোন স্থানে একটি গঠন থাকবেই।শহরে স্কুল কলেজের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমান মাদরাসাও আছে।শহরের ভেতর অনেক সময় একটু বৃষ্টি অথবা রাত হলেই সিএনজি ভাড়া বৃদ্ধিও পেতে পারে।
যাত্রা বর্ননা: যাত্রার শুরু সিলেট শহরের তেমুখী বাজার থেকে আম্বরখানা ১৫ টাকার সিএনজি ভাড়া দিয়ে।এখানকার রাস্তাগুলো সুন্দর চার লেনের।রাস্তার পাশে দেখা যায় সীমান্তে স্পন্দন বিজিবি ক্যাম্প ও হযরত শাহ্ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।আম্বখানা পৌছানোর পর সেখান থেকে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে আবারও সিএনজি। গন্তব্য হাদারপাড়।
সিএনজি চলার ২ মিনিটের মাথায় অর্তকিত আক্রমন।প্রথমে ১৫-২০ জন উঠতি বয়সী ছেলেরা সিএনজি থামানোর চেষ্টা করে।তারপর সিএনজি না থামলে হলিউড মুভিতে স্পাইডার ম্যান অথবা টারমেনেটর এ ভিলেন যেভাবে গাড়িতে ঝাপিয়ে পরে সেভাবে সেভাবে সিএনজির ওপর দুজন ঝাঁপিয়ে পড়ে ঝুলতে থাকে।যেহেতু আমি সামনে ড্রইভারের পাশে ছিলাম তাই তারা দুজন আমার পাশেই ঝুলতে ঝুলতে গাড়ি থামাতে বলে।হটাৎ একজন বলে ওঠে চাবি খুলে নিতে এবং আমাদের সাথে অনেক ধস্তাধস্তির পর চাবিটা সত্যি সত্যি খুলে নিয়ে চলে গেল।আর ড্রাইভার হতাশ ভাবে হ্যানডেল ধরে থাকল।তারপর বাইরে এসে কিছু দাপট আর আগ্রসী পদক্ষেপ দেখার পর বুঝলাম দোষ আমাদের সিএনজি ড্রাইভারের।আর যাদের আতাতায়ী (দূর্বিত্ত) ভাবছিলাম তারা প্রতিবদী ড্রাইভার। সমিতির সিরিয়াল ভঙ্গ করা অপরাধী ধরতে তারা আজ ঢালিউড স্পাইডার ম্যান।তারপর তারা আমাদের নতুন একটা সিএনজিতে তুলে দিয়ে আগের ড্রাইভারকে রিমান্ডে নিয়ে যায়।পরবর্তীতে ড্রইভারের কাছে জানতে পারি তাকে নিয়ম ভঙ্গের দোষে ১০ দিনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
ভেজাল শেষ।এখন এ্যাডভেন্চার টাইম। সুন্দর রাস্তার শুরু।কিছুদূর যেতেই চা বাগান শুরু।একটু পর দেখা মিলল সিলেট জতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও এয়ার পোর্ট।চা বাগান ও সুন্দর রাস্তা শেষ করে শুরু হল দোলনা যুক্ত রাস্তা।ড্রাইভারদের মতাদর্শে পাথরবাহী ট্রাকের নির্যাতনের শিকার এই রাস্তা।ভাগ্য ভালো ছিল যে সকালে বৃষ্টি হয়েছিল।তাই প্রাকৃতিক আটা চোখে মুখে যায় নি। অবস্থা এমনই বেগতিক যে সিটে বসে থাকতেও সংগ্রাম করতে হয়।৩০ মিনিট দোলনা খাওয়ার পর কিছুটা ভালো রাস্তার দেখা মিলল।রাস্তার পাশে মাঝে মাঝেই চলছিল পাথর ভাঙার কাজ।মেশিনটা কিছুটা ইট ভাঙা মেশিনের আধুনিক ভার্ষন।চলছিলাম কিছুটা ভালো রাস্তা দিয়ে কিন্তু মাঝে মাঝে এমন গর্ত আসতে লাগল যে লাইফ ইজ বিউটিফুল।বৃষ্টির পানি জমার কারনে মনে হচ্ছিল যে রাস্তায় মাছ চাষ করা যাবে।হটাৎ একটি অপরুপ সৌন্দর্য দেখলাম।মাঠের একটি গর্তের ঘোলা লাল পানিতে ১৫-২০ টি মহিষ গোসল করছে।আর সবগুলোরই মাথা ছাড়া সবকিছু পানির ভেতর। হটাৎ দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তারা গোসলে ব্যাস্ত।
নির্জন রাস্তা পার করে কিছুটা গ্রামে চলে আসলাম।দেখতে পেলাম সামনের আকাশের কোনে ঘন কালো ভয়ংকার মেঘ।তাই আমার মেজাজ কিছুটা গরম হল।কিন্তু তার ১০-১৫ মিনিট পর চরম অবাক হলাম আর আমার মুখ হা হয়ে গেল।যেগুলোকে মেঘ ভেবে গালি দিচ্ছিলাম তা মূলত ছিল বিছনাকান্দির পাহাড়।যা সাদা মেঘের ভেতর ঢুকে গেছে।নিজের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হল।চোখ ডগর ডগর করে তাকিয়ে থাকলাম।সিএনজি থামল হাদারপাড়।লক্ষবস্তু থেকে অনুমানিক ২ কি:মি:।এত দূর পর্যন্ত আমাদের সহযাত্রী হিসেবে এক চাচা,তার মেয়ে আমাদের ভাতিজি এবং নাতি( আমাদেরও নাতি)।তাদের সাহায্যই আমরা কথিত নদী (যা মূলত ৫ লাফে পার হওয়া সম্ভব) ৫ টাকায় পার হলাম।এর পর কোপায়া হাটা শুরু করলাম আর পাহাড়ের ডাকে সারা দিলাম।পথে কিছু নৌকা ব্যাবসায়ী পিছু লেগেও সুবিধা করতে পারে নি।মন চাচ্ছিল তাড়াতাড়ি পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ইন্ডিয়ার দিকে মুতে দেব(ফারাক্কা বাঁধের প্রতিশোধ)।কাছাকাছি যেয়ে দেখি পাথর আর পাথর তার ভেতর পানির প্রবাহ।নারী পুরুষ নির্বিশেষে হাটু পানিতে চুবাচুবি খেলার প্রচেষ্টা। কিছুক্ষন ফটো সেশন চালালাম।তারপর সামনে আগাতেই দেখি সাইন বোর্ড।যাওয়া নিষেধ। মেজাজ গরম হয়ে মূএ বিসর্জন থেমে গেল।জাতি এখানেই হতাশ। পাহাড় গুলো কলা ঝোলার মত আমার সামনে ঝুলে থাকল। আর উপায় না পেয়ে আমিও ঝাপিয়ে পড়লাম হাটু পানিতে চুবানি খেতে।ওররে পানির যে স্রোত তাতে একবার উস্টানিও খেলাম।তবে চুবানি বন্ধ হয়নি।এক ঘন্টার মত নিজে চুবেছি এবং অন্য কপোত কপোতির চুবানি দেখেছি।মাঝখানে সুযোগ বুঝে পানি ছেরে পাহারে ওঠার চান্স নিতে গিয়েছিলাম কিন্ত সিকিউরিটি গার্ড আগেই বাঁশি বাজিয়ে ডিসকলিফাই করে দিল।সন্ধার আগেই এবার নৌকায় ২০ টাকা ভাড়া করে হাদারপাড় নামলাম।কপাল জোরে সিএনজিও পেয়ে গেলাম।দুই ঘন্টয় ড্রাইভারের নিজস্ব নারী কেলেংকারি ও পরবর্তী ঘটনা শিরোনামের গল্প শুনতে শুনতে আম্বরখানা চলে আসলাম।তারপর যথারিতী নিজ রুমে।
বিদ্র: সবকিছু বিচারে আমার কাছে বিছনাকান্দির রেটিং ৬.৫। সহজ বাংলায় চলে আর কি।তবে পাহাড়ে উঠতে পারলে ১০/১০ হত।
পরবর্তী আকর্ষন শ্রীমঙ্গল ও হোটেল গ্রান্ড সুলতান,লাউয়াছরা উদ্দ্যান(to be continue................)