একটি বাংলা কবিতা বুঝতে হলে কত বড় বোধ্যা ও দার্শনিক হতে হবে তা ক্ষুদ্র মাথায় প্রবেশ করেনা। কত যুগ ধরে যে বাংলা কবিতা পাঠের তালিম নিয়ে তার অর্থ বুঝতে হবে তা ভেবে নীজেই শিউরে উঠতে হয় । ভুরী ভুরী উদাহরণ আছে উদাহরণ দিতে গেলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে । হাতের কাছে থাকা সাম্প্রতিক একটি কবিতার কয়েকটি লাইন এখানে তুলে ধরে তার পাঠ উদ্ধার দিয়েই শুরু করা যায় ।
কবিতাটির রচয়িতা কবিকে যথাযথ সন্মান পুর্বক বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি যে কবিতার অংগ সজ্জায় এটি অপুর্ব হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এ জন্য অবশ্যই সাধুবাদ জানাই । তবে অর্থ বুঝতে বেশ কষ্টকর বিবেচনায় ( শুধু আমার বিবেচনায় নয় পাঠকের মন্তব্যেও তাই প্রতীয়মান হওয়ায় ) এ কবিতাটির কয়েকটি চরণ এখানে নিছক উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ।
কবিতার উদ্ধৃত চরণ কটি নিম্মরূপ :
“তোমার শূন্যতায় তোমায় পাইনি বলে
ইচ্ছেগুলো সব অবিনশ্বর হয়ে গেছে!
যেমন তোমার নশ্বর মন থেকে
উড়ে আসা, অনুভূতির আগুনে
পুড়ে যাওয়া শব্দগুলো একের সাথে
অপরের মিথস্ক্রিয়ায় হয়ে গেল
কবিতার আবরণে এক অমর উপাখ্যান”।
এখন এই অতি সুন্দর কথামালায় সজ্জিত কবিতাটির পাঠ উদ্ধার একটু বিশ্লেষণ করা যাক ।
কবিতার লাইন
তোমার শূন্যতায় তোমায় পাইনি বলে
পাঠকের মন্তব্য
( শুন্যতায় খুজলে পাওয়া যাবেনা বৈজ্ঞানিক ভাবে সত্য এটা বুজতে কোন অসুবিধা হয়নি তবে যত বিপত্তি ঘটল পরের লাইন গুলি বুঝতে গিয়ে )
কবিতার লাইন
ইচ্ছেগুলো সব অবিনশ্বর হয়ে গেছে!
পাঠকের মন্তব্য
( শুন্যে কিছু না পেয়ে অবিনশ্বর হলো কি ভিত্তিমূলে শুন্যে কি আদৌ অবিনশ্বর হওয়া যায় ? না শুধুই একটি অবাস্তব কাব্য কথা )
কবিতার লাইন
যেমন তোমার নশ্বর মন থেকে
পাঠকের মন্তব্য
( শুন্যে যাকে পাওয়া যায়নি তাহলে অস্তিত্বহীন থেকে নশ্বর কিভাবে হলো , কোন তত্ব মূলে এটা সম্ভব তা কোন মতেই মিলাতে পারছিনা , নাকি কবিতা হতে হলে এমনই হতে হবে, এটাই যদি কবিতা হয় তাহলে বলার কিছু নেই , তাই বাংলা কবিতাকে দুর্বোধ্য হতে হতে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেখানে গিয়ে অনুভব করব কয়েকটি দুর্বোধ্য অপ্রাসংগিক কথামালায় রচিত চরণ দিয়া লিখা কবিতাই হবে অসাধারণ পদবী তুল্য )
কবিতার লাইন
উড়ে আসা, অনুভূতির আগুনে
পুড়ে যাওয়া শব্দগুলো একের সাথে
অপরের মিথস্ক্রিয়ায় হয়ে গেল
কবিতার আবরণে এক অমর উপাখ্যান।
পাঠকের মন্তব্য
( অস্তিত্বহীন অবিনশ্বর দেহে একটি মন কিভাবে পয়দা হলো, আর সেখানে আগুনে পুড়ার মত অনুভুতিই বা কিভাবে পয়দা হল ? আর যদি হয়েও থাকে তবে তা আগুনে পুরে ছাই হলো অর্থাৎ একইরূপ ছাই দিয়ে মাত্র একটি অথবা একই রূপ/ অর্থবোধক শব্দ সম্ভার হলেও হতে পারে । সমধর্মী একই ছাই এর সাথে অপরের কি মিথস্ক্রিয়া হতে পারে সেটা খুবই আশ্চর্যের বিষয়ই বটে , মিথক্রিয়া হতে হলে বিপরিত ধর্মী দুই বা ততোধিক বস্তু লাগে বলেই জানি !
এতগুলি আশ্চর্যের বিষয় ও একেবারে অবাস্তব বৈপরিত্ব নিয়ে একটি অমর কবিতার উপাক্ষান সৃস্টি হল !!
কবিতাটি পাঠে দারুন উপলব্ধি হল যে কোন কবিতার জম্ম বৃত্যান্ত নিয়ে। ধারনা হলো বিভিন্ন শব্দ ভান্ডার হতে টুকরো টুকরো শব্দ নিয়ে অতি সযত্নে একটি একটি করে চরণে বসিয় অথবা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত হতে বোদ্ধ দুর্বোদ্ধ শব্দ চয়ন করে অন্তমিল গোজা মিল যত আছে সব দিয়ে কবিতার আকৃতি দেয়া যায় । তারপর আকৃতি গঠন করে যখন বুঝা যাবে এটা হয়েছে জটিল তখন বুঝতে হবে কবিতাটি হয়েছে একটি উচ্চ মার্গের কবিতা । এই কবিতা পাঠ করে কেও বলবে বা : বা: ভারী চমৎকার হয়েছে আবার কেও বলবে বুঝিনি কিছুই । জবাবে লিখক বলবেন কোথায় আপনি বুঝলেন না , সবকিছু জলের মত পরিস্কার অতি বাস্তব , আপনার বুঝারই ক্ষমতা নাই । অতি হক কথা ।মেনে নেয়া ছাড়া উপাই নাই । কারণ কবিতা পাঠের যোগ্যতাই যে নেই । তবে পাঠক হিসাবে যে কোন বিষয়তো সে পাঠ করতেই পারে ।
যাহোক, বোধ্য দুর্বোধ্য, জটিল সরল , ছন্দময় , মিত্রাক্ষর অমৃত্রাক্ষর আকৃতি নিয়ে বাংলা কবিতা এগিয়ে যাক এ কামনা করি । তবে কবি কুলে অনুরোধ সাধারণ পাঠক হিসাবে যেন আমরা একটু অতি সহজে এর অর্থ বুঝতে পারি সে দিকে একটু দৃষ্টি দিলে কৃতার্থ হই । যত বিমুর্তই হোক না কেন প্রথম লাইনটি থেকে দ্বিতীয় লাইনে গমনের যেন একটি যৌক্তিক সুত্র থাকে । কারণ কবি যতখানি সময় ও মনযোগ নিয়ে কবিতাটি লিখেন পাঠকের কাছে ততটুকু সময় নাও থাকতে পারে । অল্প সময়ের মধ্যেই সে তার মর্ম বুঝে কবিতার স্বাদ অনুভব করতে চায় । কবি তার মনের ভাব মিশিয়ে যেভাবে খুশী সে ভাবেই লিখতে পারেন এটা তার স্বাধিনতা । কবির লিখাকে যেমন বিনা বাক্যব্যয়ে কোন রকম বিরুপ মন্তব্য না করে পাঠককে নীজের মনের মাধুরী মিশিয়ে বুঝে নিতে হবে সে বাস্তব কিংবা অবাস্তব যাই হোক না কেন । ঠিক তেমনি ভাবে কবিতা সম্পর্কে পাঠকের চিন্তা চেতনা অনুভুতি ভাবপ্রকাশ সে মুর্ত অমুর্ত, বাস্তব অবাস্তব , যাই হোক না কেন কবিকেও তা সানন্দ চিত্তেই তা মেনে নিতে হবে । কবির লিখার মুর্ত বিমুর্ত লিখা পাঠককে যেমন গিলতে হয় তেমনি পাঠকের মুর্ত অমুর্ত বাস্তব আবাস্তব লিখাকেও অকুন্ঠচিত্তে কবিকে গলাধবরণ করাটাই হবে শুভনীয়। কিন্ত বাস্তবে কি তা হয় , কবি কি তা মেনে নেন । তিনি তো উঠে পরে লেগে যান পাঠককে খন্ডাতে এমন কি ক্ষেত্র বিশেষে কঠিন সুরে। নিজের বেলায় যা খাটেনা তা পাঠকের বেলায় খাটানোর একটি প্রবনতা দেখা যায় । পাঠকতো কবিতা পাঠের সাথে সাথে কবিতার সমালোচনা করতেও এখন পিছপা হবে ।
এখানে উল্লৈখ্য করা যায় যে, বিশ্ব কবি বরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসিম উদ্দীন, আধুনিক বাংলা কবিতার পুরোধা জীবনানন্দ দাসের কবিতা বুঝতে কোন বেগ পেতে হয়না , সাধারণ পাঠক হিসাবেই তার পাঠ উদ্ধার করা যায় । কবিতাটি বুঝতে হলে কোন উচ্চ মার্গের দার্শনিক হতে হয়না । তাদের কবিতার মধ্যে মুর্ত অমুর্ত আনেক কথাই আছে তবে তা এতই প্রাসংগিক এবং সহজ শব্দ প্রয়োগে লিখা যে তা বিমুর্ত হলেও মহুর্তেই মুর্ত হয়ে আসে কবিতায় । তাদের কবিতায় সহজেই একাত্ব হয়ে যাওয়া যায় ।
আর একটি কথা কবিতা পাঠান্তে অনেক বিজ্ঞ পাঠক মুল্যবান মন্তব্য রেখে যান কবিতাটি অসাধারণ হয়েছে । ।একটি অতি দুর্বোধ্য কবিতা শুধুমাত্র অপ্রাসংগীক কিছু কথামালার সমাহারে দেখতে কবিতার আকৃতি বিশিষ্ট হওয়ার পরেও কি ভাবে অসামান্য অসাধারণ কবিতার তকমা পায় তাও বোধগম্য হয়না তবে একটি কথাই মনে হয় রতনে রতন চিনে অন্যে চিনে ..,,, । কবিতা পাঠ সকলের জন্য নয় । এটা সার্বজনীন নয়!! এটা শুধু মাত্র বোধ্যা গুটি কতক আধুনিক বাংলা কবিতা পাঠকের জন্যই বটে !!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:০৫