আমাদের নিজস্ব আত্মপরিচয়ের বিধৃত রূপই হচ্ছে সংস্কৃতি। জীবনের প্রয়াসই হলো জীবনকে সহজ ও সুন্দর করার জন্য বিরূপ পরিপার্শ্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম- এরই নাম সংস্কৃতি। জীবন সংগ্রামের বাস্তব উপকরণ সমাজ যাত্রার বাস্তব ব্যবস্থা ও নীজ আচার, ব্যবহার, ধ্যান-ধারণা, সাহিত্য, সংগীত, কলা ও ঐতিহ্যের লালন এসব নিয়েই আমাদের সংস্কৃতি । বিশ্বায়নের প্রভাবে আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য কী আজ বিপন্ন । এ প্রশ্নটিই মনে বাজে অহরহ । বিশ্বায়নযুক্ত পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে করছে গতিময় তাতে সন্দেহ নাই । আমাদের অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সামাজিক কোন কিছুই বিশ্বায়নের প্রভাবমুক্ত নয়। এই সবকিছুর সঙ্গেই আমাদের সংস্কৃতির রয়েছে সম্পর্ক তাই আমাদে সংস্কৃতিও বিশ্বায়নে প্রভাবিত। তাই বলে আমাদের নিজস্ব বাংগালী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কখনও ভেঙ্গে পড়ার নয় বরং এটা প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠার। এই চলমানতা থাকবেই। আমরা কী গ্রহণ করব, কী বর্জন করব কিংবা কী প্রদান করব, তা অনেকাংশে নির্ভর করে আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের ভিত্তির ওপরে। কবি গুরুর ভাষায় বলতে হয় ‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিয়ে যাবে না ফিরে। সংস্কৃতি এখন পণ্য ভোগবাদের শিকার। পণ্যায়নের আগ্রাসন থেকে মুক্ত নয় আমাদের খোদ বাংলা নববর্ষও। বছরে এক দিন পান্তা-ইলিশের আস্বাদনের মধ্যেই থাকবেনা নববর্ষপ্রীতি সীমাবদ্ধ। আমাদের লোকায়ত গ্রামীণ সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে শহুরে নাগরিক সংস্কৃতির মধ্যে বাংলা নববর্ষকে আটকে রেখে নববর্ষের প্রকৃত তাৎপর্য করবনা উপলব্ধি, করা তা সম্ভবও নয়। একদিকে সীমাহীন ভোগবাদ অন্যদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন জঙ্গীবাদ- এ দুটিই আজ আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির খাঁটিত্বের জন্য হুমকি । তারপরও আমরা আশাবাদী আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে ।
বাংলা নববর্ষে সকলের জন্য অফুরন্ত প্রাণ-প্রাচুর্যের কামনা থাকল ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৩