যুদ্ধ নিয়ে এধরণের ছবি সম্ভবত এর আগে কেউ তৈরী করেন নি। হিংস্র-নসৃংশ এবং রক্তপিপাষু এই নির্মাতা (অন্তত: তাঁর ছবিগুলোর ক্ষেত্রে ) তার বিগত ছবিগুলোর { Reservoir Dogs, Pulp Fiction, Sin City, Kill Bill (Vol-1&2) } ধারা এই ছবিতেও বজায় রেখেছেন।
ধন্যবাদ জানাই বন্ধু আরিফ এবং IMDB কে। শুধুমাত্র IMDB রেটিং ( 8.7 ) Brad pitt এবং Quentin Tarantino এই তিনটি জিনিসের উপর ভরসা করেই টিকেট কেটে থিয়েটারে ঢুকলাম। কোন ছবি দেখতে গিয়ে এতবড় তাজ্জব এর আগে কোনওদিন হইনি। ঢুকে দেখি, পুরো থিয়েটার ভোঁ-ভোঁ ! আমি একমাত্র দর্শক । কয়েকমিনিটের জন্য নিজেকে গাধা মনে হল। অবশ্য আমি গিয়েছিও একটু Odd সময়ে। সকাল ১১:৩০ এর শো তে। কিন্তু, তাইবলে পুরোপুরি একা ?
যাহোক, ছবি শুরু হওয়ার পরে নিমিষেই সব অশংকা কেটে গেল। ছবির প্রথম দৃশ্য দেখেই বিমোহিত হয়ে গেলাম! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে করুণ বিপর্যয়। কিন্তু, Quentin Tarantino এর ভিতর থেকেও মজার-মজার সব অদ্ভুত কান্ড-কারখানা তুলে এনেছেন। ছবিটিকে ঐতিহাসিক চলচিত্রের ক্যটেগরিতে ঠিক ফেলা যায় না। তারচেয়ে বরং এটাকে Quentin Tarantino'র একটি "মাষ্টারপিস্" বা "আর্টের" সাথে তুলনা করা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস সবারই মোটামুটি জানা। ইতিহাসের বিস্তারিত ঘটনা যারা না জানেন, তাদেরও আমার মত ছবিটির রস আস্মাদনে কোনও সমস্যা হবে না।পুরো ছবির গল্প বলা হয়েছে তিনটি খন্ড-কাহিনীতে । লে: অ্যল্ডো ( Brad Pitt ) আট জনের একটি দল নিয়ে Nazi (নৎসি) দখলকৃত ফ্রান্সে একটি মিশনে যায়। আমেরিকান এই গুপ্ত দলটির সদস্যরা ছদ্মনামে বাষ্টার্ডস বলে পরিচিত। তাদের মিশন, গোপনে Nazi (নৎসি) দেরকে হত্যা করা।
ছবিটির বিপরীত চরিত্র কর্ণেল হ্যন্স ল্যান্ডা (Christoph Waltz) ছবিটির অন্যতম মূল আকর্ষণ। ফ্রান্সে'র মানুষ গোপনে তাকে "Jew Hunter" বলে ডাকে। তার কাজ হল গোপনে লুকিয়ে থাকা ইহুদীদের খুজে বের করে হত্যা করা। শেয়ালে মত ধুর্ত, শকুনের মত ধারাল চোখ আর কুকুরের মত প্রখর ঘ্রাণশক্তিধারী এই ভদ্রলোক পুরো ছবি জুড়ে দর্শকদেরকে উৎকণ্ঠায় রাখেন।
ছবিটির তৃতীয় খন্ডকাহিনী একটি ইহুদী রিফিউজি মেয়েকে (Shosanna Dreyfus) নিয়ে। তার চেখের সামনে পরিবারের বাকি সবাইকে মেরে ফেলা হয়। আর তাই, সেই জার্মনদের উপর প্রতিশোধের আগুণ সে বাকি জীবন ধরে পুষে রাখে। ছবিটির তিনটি খন্ডগল্পই একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি যুদ্ধের ছবির খুব বেশি একটা ভক্ত না। কিন্তু, এই ছবিতে আট স্ফূর্তিবাজ "বাষ্টার্ডের" মজার সব কান্ডখানা দেখেই মনটা ভরে গেল। কখনও কল্পনাও করিনি যুদ্ধ এত মজার হতে পারে । Quentin Tarantino'র এই "Dark comedy" র উপস্থিতি অবশ্য তার অন্যান্য ছবিগুলোতেও দেখা যায়। এছাড়া, Brad pitt এর মজার উচ্চারণভঙ্গি আর কৌতুপূর্ণ অভিনয় পুরো ছবিজুড়ে মাতিয়ে রাখে।
সবমিলিয়ে Inglourious Basterds ছবিটি প্রচন্ড মজার একটি ছবি! এটি কোনও তথ্যবহুল ডকুমেন্টারী নয়। Tarantino তার নিজস্ব ভঙ্গিমায় খুব মজা করে এই ছবিটি বানিয়েছেন। যারা সেই মজা নিতে চান.. তাদের জন্য ছবিটি এক বাটি মধুর মতই অমৃত ! ছবিটির "সিনেমাটোগ্রাফী" এবং মিউজিকের কথা আর না-ই বা বললাম.. প্রায় ৩ ঘন্টা দীর্ঘ ছবিটি দেখে তৃপ্তি'র ঢেঁকুর তুলে থিয়েটার থেকে বের হলাম।