somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়াস পোস্ট- আমার দুঃখনামাঃ মন খারাপ করে আমার সাথে একটু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদুন পিলিচ |-) |-)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক গবেষণা করে বুঝেছি যে মানুষের দুঃখ জিনিসটা বেশিরভাগ সময় আর্টিফিসাল। কোন কারণ থাকে না। বেহুদা মন খারাপ করে বসে থাকে। বিড়ি ফুঁকে আর বলে, “ধুর বাল, ভালো লাগে না”। আর বেশিরভাগ সময় এর প্রভাব পড়ে ফেসবুকে। যে ছেলেটা জীবনেও প্রেম করে নাই সেও ছ্যাকা খাওয়া মুভি দেখে কিংবা গান শুনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, “মন খারাপ। তুমি বুঝলা না”।
আসলে বাঙালি জাতিটাই হাফসোল খাওয়া জাতি। আমার খেয়াল আছে, আমার বয়স যখন মাত্র এগারো, প্রেম কী না বূঝেই শুধুমাত্র আসিফের গান শুনে ‘কান্নার লোনা জলে ঢেউ’ ভেঙেছিল চোখের নদীতে। ‘অন্যের হাত ধরে চলে গেছ দূরে’ এই জায়গাটুকু শুনে সেই বয়সেই আমার ছ্যাকা খাওয়া অনুভূতি হয়েছিলো। আমার মতো কতো নাবালক, নালায়েক, নিষ্পাপ ছেলের কাল্পনিক ‘প্রিয়া’ যে অন্যের হাত ধরে চলে গিয়েছিলো দূরে আর কতো ছেলের ‘অ(ও) প্রিয়া অ প্রিয়া’ আহাজারিতে কতো মধুর রাত যে বিষণ্ণ হয়েছিল, তার কথা লেখা নেই ইতিহাসে পাতায়। ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সেকথাই আপনাদের বলতে এসেছি। আপনারা জানেন এবং বোঝেন। বাংলার ছেলেদের ইতিহাস, হুদাহুদি বালিশ ভিজানোর ইতিহাস, বাংলার ছেলেদের ইতিহাস, ‘তুমি বুঝলা না’ টাইপ স্ট্যাটাস দেয়ার ইতিহাস। .........কাম ডাউন, আরণ্যক। কাম ডাউন। এতো অল্পতেই খাড়ায়া যাওয়া থুড়ি উত্তেজিত হওয়া ঠিক না।
মূল প্রসঙ্গে আসি।
একবার কোন এক কারণে দশ দিনের মতো মেসে ছিলাম। চাচার সাথে। স্বাভাবিকভাবেই সবাই চাকরিজীবী এবং বুদ্ধিজীবী। সকালে কোনরকমে লাইন দিয়ে টয়লেট সেরে, আলুর ভর্তা কিংবা ডাইল দিয়ে কিছু খেয়ে অফিস দৌড়ায় আর বিকেলে ফিরে এসে চা খেতে খেতে দেশ, রাজনীতি, যুবসমাজ থেকে শুরু করে দেব, শাহরুখ খান, শাকিব খান, সিরিয়াল, বৌ-বাচ্চা ইত্যাদি নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। তাদের প্রত্যেকেই বিবাহিত শুধু আমার চাচা ছাড়া।
প্রথম দিনেই রাতের বেলা রীতিমত টাস্কি খেলাম। আমার পাশের বেডের লোকটা কেন জানি কাঁদে! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। আমি ভাবি, এই ব্যাটার প্রবলেমটা কী! ভালো বেতনের চাকরি করে। সেই রকম বৌ আছে (আমি দেখি নাই; ধরে নিন), শুনেছি বাচ্চাও পয়দা হয়েছে একটা কয়েকদিন আগে। এর দুঃখ কিসের?
দিন দুইতিন পর বুঝেছিলাম, তার কান্নার রহস্য। তিনি ফেসবুকের বিভিন্ন পেজের গল্প পড়ে কাঁদেন! (দুঃখের ইমো হবে) অবশ্য সেসব গল্পে দুঃখ পেয়ে কান্নার অনক কিছু আছে। রোমান্স আছে, বন্ধুত্ব আছে, স্যাক্রিফাইস আছে আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার সেখানে গল্পের শেষে মৃত্যু আছে! সুতরাং সে গল্প পড়ে না কাঁদলে আপনি মানুষই নন!
এইরকম মাঝেমাঝে আমিও দুঃখ টুঃখ পাই। আমার দুঃখের কারণগুলো আপনাদের বলছি। আপনারাও আমার দুঃখে মন খারাপ করুন একটু।

দুঃখ নাম্বার ওয়ান
প্লে থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমি কোনোদিন সেকেন্ড হই নাই। সবসময় ২০/২৫ রোল হতো। মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়ার জন্য আমি যতোটা না পরিশ্রম করেছি, তার চেয়ে বেশি করেছেন আমার বাবা। কিন্তু আফসোস, তার সাধ পূরণ হয়নি।
কেমনে কেমনে যেন ক্লাস টেনে ফার্স্ট হয়ে গেলাম। আসলে, আমাদের ফার্স্ট বয় আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। সে আমার দুঃখ সহ্য করতে না পেরে অন্যস্কুলে ট্রান্সফার নিয়ে নিল। ফলে আমি ফার্স্ট হয়ে গেলাম।
সে যাই হোক, ক্লাসের একটা আঁতেলকে আমার মোটেও ভালো লাগতো না। ব্যাটা আমাকে প্রায়ই মনে করিয়ে দিত, “ও স্কুল থেকে চলে না গেলে, তুই আজীবন ফার্স্ট হইতে পারতি না!” কথাটা যদিও ষোলআনা সত্য কিন্তু প্রতিবার আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যেত।
আমার লক্ষ্যই ছিল ওকে কোন না কোন ভাবে প্যারা দেয়া।
একদিন ইংরেজি ক্লাসে ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “দোস্ত, ফুঁক মানে কী?”
আমি বললাম, “বানান বল”।
ও বলল, “f u c k”
আমি বললাম, পাইলি কই?”
“আমার খাতার উপর কে যেন লিখছে ‘ফুক ইউ’ ”
আমি মনে মনে কই, ও ইয়েস, পাইছি এবার। তোরে ফাক-ফুঁক সব শিখিয়ে দেব।
আমি বললাম, “দোস্ত, আমি তো জানি না। তুই বরং ম্যামকে জিজ্ঞেস কর!” B-) B-) B-)
বেচারা চরম রকম আবাল ছিল। সে আনায়াসেই ম্যামকে জিজ্ঞেস করেছিল।
কিন্তু দুঃখের ব্যাপার এই যে, ম্যাম আমাকেই ক্লাস থেকে বের করে দেন। আমাকে কান ধরে পুরো ক্লাস বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো!
পরে অবশ্য সেই বন্ধুকে আমি ফাকফুক সব বুঝিয়ে দিয়েছি। এবং যাতে ভালভাবে বুঝতে পারে, কোন ডাউট না থাকে, তাই দায়িত্ববান শিক্ষকের মতো ভিডিও দেখিয়েছি। সে ছিল(এখনো) হুজুর টাইপের। দেখে টস্কি খেয়ে বলেছে, “ও মাই গড!” আর “ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা। তুই এগুলাও দেখিস! সব নষ্ট! ছিঃ ছিঃ” ইত্যাদি বলতে বলতে পুরো ত্রিশ মিনিটের ভিডিওটা দেখেছে।
এটা ভেবে আমার মাঝেমাঝে মন খারাপ হয় যে তাকে আমি প্যারা দিতে পারলাম না। আজ পর্যন্ত না! :-<

দুঃখ নাম্বার টু


সেদিন একজন ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাস দেখে দুঃখ পেয়েছিলাম।
ও লিখেছে-
“সকালে জগিং করতে বেড়িয়েছি। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে দৌড়চ্ছি। হঠাত বিপরীত দিক থেকে একটা মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, “সরি। আমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দেইনি”। সেও আমার মতো জগিং করছিল।
আমি ইয়ারফোন খুলে, বিগলিত হাসি দিয়ে বললাম, “না না, ঠিক আছে। ইচ্ছা করে যেহেতু দেননি, এবারে ইচ্ছা করে একবার দিন! আমার ভালই লেগেছে!””
আমার মাঝেমাঝে মন খারাপ হয় এটা ভেবে যে, আমি কোনোদিন কোন মেয়ের সাথে ধাক্কা খাইনি। দুঃখ! :||

দুঃখ নাম্বার থ্রি



আফসোস, আমার কোন আইফোন নেই। এই দুঃখ কোথায় রাখি। ভাবছি মটোরলার একটা আইফোন কিনে নেব। আচ্ছা, মটোরলা ভালো হবে না সিম্ফনি? যারা জানেন তারা বলবেন পিলিচ।

দুঃখ নাম্বার ফোর

মাঝেমাঝে কিছুকিছু বই পড়ার চরম পিনিক ওঠে। বিশেষ করে রিভিউগুলো পড়ার পর। এমনভাবে রিভিউ লিখে যেন বইটা একটা মাস্টারপিস। না পড়লে গুহামানবই থেকে যাবেন। মানুষ হতে পারবেন না। তখন ভাবি, “ধুর শালা, পড়লাম কী জীবনে!”
আবার নিজের সংগ্রহের দিকে তাকালেও মন খারাপ হয়ে যায়। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, বন্ধু থেকে শুরু করে স্যার পর্যন্ত- সবার কাছ থেকে দুইদিনের জন্য নিয়ে আর ফেরত না দিয়ে, এমনকি ব্র্যাক লাইব্রেরির শকুনচোখা লাইব্রেরিয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেসব বই সংগ্রহ করেছি, সেগুলোও পড়া হয়নি।
আর যখনই কিছু পড়া শুরু করি, তখনই মনে হয়, “এই সময়টা তো পাঠ্য বই পড়লেও পারি। আমার অন্যান্য বন্ধুরা তো তাই করছে!” পড়া আর হয় না!
কয়েকদিন আগে, একটা থ্রিলার- ‘ভার্টিকাল রান’ পড়া শুরু করলাম। কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর খেয়াল হলো, কাল ক্লাসে পরীক্ষা আছে! ভার্টিকাল রান বাদ দিয়ে ভার্টিকালি পতনশীল বস্তুর বেগের অংক করা শুরু করলাম!
দুঃখ! :(

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, লেফট সাইট ইকুয়াল টু রাইট সাইড। মনটন খারাপ করে লিখলাম। একটা গল্প লিখছি গত দশদিন ধরে। শালা মাঝে গিয়ে এমন প্যাঁচ লাগল! তাই এমন আবাল পোস্ট দিলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৭
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×