somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাঙ্গাইলের বধ্যভূমি ও গণহত্যার ইতিহাসঃ ‘‘ আর্টিজেন বিলডিং-এর অন্ধকূপে অবস্থিত অজ্ঞাত বদ্ধভূমি ’’

০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ ! সারা দেশে মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন । স্বাধীনতা... স্বাধীনতা... স্বাধীনতা চাই । চাই মুক্ত পাখির মত উড়তে...। আর নয় বেনিয়া শাসকের জুলুম ; অত্যাচার ; নিপীড়ন । প্রায় দুইশত বছরের শাসন-শোষণের অবসানের জন্য বাঙালী জাতি মরিয়া হয়ে উঠে । এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম... এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম !

২৫ মার্চ , ১৯৭১ ! সেদিন রাতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম ও জঘন্য হত্যাকান্ড চালায় । ২৬ মার্চ , ১৯৭১ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়া হয় । তারপর সারা দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ ! মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয় । টাঙ্গাইল জেলায়ও চলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ । এখানেও ন’মাসের যুদ্ধে শহীদ হন অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ !

যেখানে মানুষকে ধরে এনে বধ করা হত সে স্থান কে বলা হয় বধ্যভূমি । টাঙ্গাইলেও রয়েছে বেশ কিছু বধ্যভূমি ও গণহত্যা কবলিত স্থান । ধারাবাহিকভাবে আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানব । আজ জানব-
পাকুটিয়া /আর্টিজেন বিলডিং-এ অবস্থিত বধ্যভূমির অজানা কিছু কথা ।

টাঙ্গাইল শহরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত প্যারাডাইস পাড়া ও কলেজ পাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে পাকুটিয়া বিলডিংটির অবস্থান । এর বর্তমান নাম আর্টিজেন বিলডিং । এটি পাকুটিয়া জমিদারদের জমিদারীর একটি অংশ ছিল । পরে এটি বিক্রি হয়ে যায় অর্টিজেনদের কাছে । কথিত আছে এই বাড়ির ভেতরে একটি কূপ ছিল । জমিদারী আমলে কূপটি বাড়ির নানা কাজে ব্যবহৃত হত ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই বাড়িটি ছিল বদর বাহিনীর ক্যাম্প । আল-বদর বাহিনীর লোকজন সদর্পে তাদের কার্যক্রম চালাত এই বাড়িটিতে বসে । যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা শহর এবং আশপাশ থেকে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় লোকজন কে ধরে এনে এখানে বন্দী করে রাখত । পরে তাদেরকে হত্যা করে সেই গভীর কূপে ফেলে দিত ! হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে , গুলি করে , আবার কখনোবা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হত তাঁদেরকে ! এভাবে মুক্তিযুদ্ধের
সময়ে বদর বাহিনীর সদস্যরা অসংখ্য সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে কূপে ফেলত !

আল-বদর বাহিনীর সেই নিষ্ঠুর , নির্বিচার হত্যাকান্ডের সাক্ষি হয়ে আছে বর্তমান আর্টিজেন বিলডিং-এর এই কূপ । কিন্তু ক’পটি তৎকালীন সময়ে ভরাট করে বন্ধ করে দেয়া হয় । যার ফলে এখন এটি আর বদ্ধভূমি হিসেবে পরিচিত নয় । ইতিহাসের সাক্ষি এই বদ্ধভূমিটি আজ মানুষ ভুলে গিয়েছে । বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এটি অজানা । কিন্তু সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী কিছু সংখ্যক মানুষ আজও ভুলতে পারেনি পাকুটিয়া বিলডিং-এর অন্ধকূপের বদ্ধভূমি ! যেখানে ঘুমিয়ে আছে ’৭১-এ শহীদ হওয়া কোন পিতা , ভাই , বন্ধু... !
মাটি আর কংক্রিটে ভরাট হওয়া এই বদ্ধভূমিটি আজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে !
এখানে নেই কোন সংস্কার । সংস্কার হবে কিভাবে ! এটাতো মানুষের কাছে অজানা । এছাড়া তৎকালীন সরকারও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ।
এখানে নেই কোন স্মৃতিফলক । অতএব সংস্কার না হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয় । ঘুমিয়ে থাকা ওই শহীদেরা কি ভাবছে আমাদের কে ? তাঁরা কি আমাদের ধীক্কার দিচ্ছে ? নাকি ধীক্কার দিতেও আমাদের প্রতি তাদের করুণা হয় !?
‘‘ হে শহীদ ! তোমরা আমাদের ক্ষমা কর । আমরা তোমাদের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারিনি ! আমরা রক্ষা করতে পারিনি তোমাদের রক্তের দান । শোধ করতে পারিনি তোমাদের ঋণ !
হ্যাঁ ! আমরা শুধু এই কথা বলেই বার বার পার পেয়ে যাই । কিন্তু কেন আমরা শহীদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারিনি ? কেন রক্তের ঋণ শোধ করতে পারিনি ? ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে দেশটিকে পেলাম কেন সেই দেশটিকে দুর্নিতীগ্রস্থ দেশে পরিণত করলাম?

না...একটি স্মৃতিসৌধ তৈরী করা আর স্বাধীনতা / বিজয় দিবসে ফুল দেয়াটাই শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করা নয় । এটুকু করা মানেই কর্তব্য আর ভালোবাসা প্রকাশ করা নয় । আমরা যদি আমাদের দেশে যেটুকু সম্পদ আছে সেটুকু সততার সাথে সমবন্টন করতাম , দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতাম তাহলেই এই ৩৯ বছরে শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করার ধাপে আমরা কিছুটা এগিয়ে যেতে পারতাম !
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×