সাম্প্রতিক হুমায়ুন ঘটনাবলী পড়ে আমার একটা গল্প লিখতে ইচ্ছে হলো, পাঠকদের বলছি এটা একটা গল্প কোনভাবেই এটা ইতিহাস নয়।
১.
২০১২ সাল, আলাউদ্দিন সাহেবের কাছে একটা পান্ডুলিপি আসলো। পান্ডুলিপির নাম 'দেয়াল'। আলাউদ্দিন সাহেব বিরক্তিভরা মুখ নিয়ে তার পিএস কে বললেন, রাখ তোমার পান্ডুলিপি, আমি প্রাইম মিনিস্টারের উপদেস্টা আমার কি পান্ডুলিপি পড়ার টাইম আছে? আর এটার যে সাইজ দেখতে পাচ্ছি তাতে তো মনে হচ্ছে মহা ভারত। এটা পড়লে তো সরকারের যে বাকি তিনটি বছর আছে তাই চলে যাবে। বানিজ্য করবো কখন??
- স্যার এটা হুমায়ন আহমেদ লিখেছেন।
- হুমায়ন, গাধাটাতো মারা গেছে শুনলাম।
- না স্যার ইনি হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের ভাই।
- ও আচ্চা জাফরতো খুব ভালো। জননেত্রীর কথা শুনে। কিন্তু ওর ভাইতো গোঁয়ার প্রকৃতির।
পিএস এবার খুব সমঝদার ভাব নিয়ে বললো, এজন্যই এটা পড়তে হবে স্যার। কারন তিনি পান্ডুলিপির সাথে যে চিরকুট পাঠিয়েছেন সেখানে লিখেছেন ৭৫ এর ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা তার এই উপন্যাস পড়ে যেনো একটা ফিডব্যাক দেওয়া হয়। বোল্ড করে লিখেছেন, এটা একটি উপন্যাস, কোন ভাবেই এটা ইতিহাস গ্রন্থ নয়।
আলাউদ্দিন সাহেব ঘামছেন, খুব রাগ হচ্ছে তার। তার মনে হচ্ছে সরকারী বা ফ্রি কোন জিনিসই ভালো নয়। শালার মার্সিডিজ বলে হালকা একটা গালি দিলেন। মনে মনে বলছেন দেরকোটি টাকার মার্সিডিজেও ঠান্ডা বাতাস বের না হলে কি আর করা। দরদর করে ঘামছেন। ঘেমে গোসল হয়ে গেছেন।
পাশে বসা পিএস জিজ্ঞেস করলো, স্যার আপনি কি ঘামছেন??
আলাউদ্দিন সাহেব বাঁকা চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, না, আমি তো গোসল করছি।
গাড়িটি পিএম অফিসে পৌঁছা মাত্র কোন প্রশ্ন ছাড়াই গেট খুলে গেলো। গাড়ি থামলে আলাউদ্দিন সাহেব নামলেন। নেমে তার মনে হলো বাইরে দোজখের আগুন। আচ্ছা দোজখ কথাটা ক্যানো মনে পড়লো। দোজখ তো বলবে জামাতিরা। আমরা বলবো নরক। আজকাল প্রায়ই তার এরকম মিস্টেক হয়। ঘুনাক্ষরেও এরকম মিস্টেক করা যাবে না। জননেত্রীর সামনে এরকম আরবী, উর্দু শব্দ উচ্চারন করলে মরন দশা হবে। আলাউদ্দিন সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তিনি নরক, নরক, নরক জপতে জপতে ভেতরে ঢুকলেন।
২.
পিএম অফিসে গুরুত্ব পূর্ন ব্যাক্তিদের জন্য বসার স্থানে গিয়ে দ্যাখলেন গওহর রিজভি নামে একটা লোক বসা। এই লোকটাকে খুবই অপছন্দ আলাউদ্দিন সাহেবের। পত্রিকায় খালি তার নাম আসে। তাছাড়া প্রনবদা, মনমোহন দা, সোনিয়া দিদি খুব ভালোবাসেন বলেও তার রাগ হয় এই লোকের উপর। মনে মনে আলাউদ্দিন সাহেব বললেন, গে হোর, হারামজাদাটা আসলেই গে'র মতো।
রাগ চেপে হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তারপর বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলেন তিস্তা চুক্তি জিনিসটা কি, গেহোর ভাই। গওহর রিজবি একটু স্বভাব সুলভ মেয়েলি কন্ঠে বললেন, তু নেহি সামজ গে। আলাউদ্দিন সাহেব চুপ মেরে বসে থাকলেন।
জননেত্রী হঠাৎ করে ঘরে ঢুকলেন। আলাউদ্দিন সাহেব সালাম দিতে যাচ্ছিলেন তার আগেই গেহোর রিজভি বলে উঠলো, শুভ সকাল জননেত্রী। আলাউদ্দিন সাহেব আর সালাম না দিয়ে তিনিও বললেন, শুভ সকাল জননেত্রী।
জননেত্রী কোন কথা বলছেন না। চুপচাপ বসে আছেন। মনে হচ্ছে তিনি কোন কারনে রাগান্বিত। আলাউদ্দিন সাহেবও সাহস পাচ্ছেন না কোন কথা বলার। মনে মনে ভাবছেন এইচ টি ইমাম থাকলে খুব ভালো হতো। বিড়ালের মতো ঠিকই কিছু না কিছু বলে শুরু করে দিতো। এটাকে বলে আইস ব্রেকিং। স্তব্ধ পরিবেশে বা অচেনা পরিবেশে কোন কিছু বলে বা কোন কিছু করে শুরু করার নাম হচ্ছে আইস ব্রেকিং। আলাউদ্দিন সাহেবের বেশ লাগলো এটা স্মরন করতে পেরে। তিনি খুশি। আজকাল ইংরেজি টার্ম গুলো ব্যাবহার না করলে স্মার্ট হওয়া যায়না। জননেত্রী একটা শব্দ দিয়ে বাজিমাত করে দিলেন। ডিজিটাল। বাঙালীকে বাংলা দিলে খায় না, ইংরেজি দিলে খেয়ে একদম মাতাল হয়ে যায়। আচ্ছা শব্দটা ডিজিটাল ক্যানো হলো, ডিজিমাল বা ডিজিবাল হলে কি হতো??
জননেত্রী এবার স্বগোতক্তির মতো করে বললেন, আমি চাই তোমরা এটার সমাধান করো। আলাউদ্দিন সহেব কিছুই বুঝলেন না। কিসের সমাধান? গেহোর সাহেব বললেন জননেত্রী আপনি কোন টেনশান করবেন না। এমন ব্যবাস্থা করবো যাতে সাপ মরে বাট লগিও না ভাংগে। জননেত্রী বললেন, শোন জাফরকে কিন্তু আমি খুব পছন্দ করি। তার গোঁফ দেখলে আমার বাবার কথা মনে পড়ে। আর হুমায়ুন কে বুঝাও।
এবার আলাউদ্দিন সাহেবের রাগ হলো। ঘটনা তাহলে এতো দূর। জননেত্রীও জানেন বিষয়টা।
জননেত্রী উঠতে উঠতে বললেম আমাকে যেতে হবে, আমি ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট জিম করবো এখন, প্রধানমন্ত্রী হলেই আমার স্বাস্থ্য বেড়ে যায়। হিলারীকে দেখছো কি দারুন ফিগার এ বয়সেও। ও হ্যাঁ, হুমায়ুনকে বেশী ঘাটিওনা। কারন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। পরে সে তার বাবার ব্যাপারটা নিয়ে নাক গলানো শুরু করে দিলে সাঈদিকে বেশীদিন আটকে রাখতে পারবো না।
গেহোর এবার আলাউদ্দিন সাহেবের দিকে ঘুরে বললেন দ্বায়িত্বটা কিন্তু আপনার উপর। আমি অলরেডি, 'র' এর বাংলাদেশ ইউনিট হেড মেজর জেনারেল আমিত সিং এর সাথে ডিসকাস করেছি। তিনি সাজেস্ট করেছেন, আপনিই সরাসরি হুমায়ুনের সাথে কথা বলে পুরা প্লানটা জানাবেন। আমিত সিং এনসিওর করেছেন। এমন ডিল এ হুমায়ুন সাহেব ডেফিনিটলি এগ্রি করবেন। আই বিলিভ সো।
আলাউদ্দিন সাহেব গাড়িতে বসে ভাবতে থাকলেন গেহোর রিজভির সাথে কম্পিটিশান করা যাবে না। বাপরে বাপরে ২ মিনিটের কথোপকথনে কত্তগুলো ইংরেজি বললো। পিএইচডিটা জাপানে না করে ইউকে বা আমারিকায় না করায় আফসোস হতে লাগলো।
৩.
আলাউদ্দিন সাহেবে ফোন করলেন, হুমায়ুন আহমেদের কাছে। ও প্রান্তে উত্তর এলো মেয়েলি কন্ঠে। তিনি ভাবলেন একি মেয়ে ক্যানো। হুমায়ুন কি মেয়ে নিয়ে ফুর্তিও করে আজকাল। পরে ভাবলেন, না শুধু শুধু খারাপ চিন্তা। আর এটা তো খারাপ কিছু না। সাহিত্যিক মানুষ একটু আধটু হুয়াইট ওয়াইন সাথে স্যান্ডউইচ তো থাকতেই পারে। আচ্ছা আশরাফ কি স্যান্ডইউচ বলে নারীসংগ বুঝালো। মনে হয় নারী সংগই বুঝিয়েছে। জিজ্ঞেস করতে হবে। আবার ভাবলেন, না জিজ্ঞেস করা যাবে না, কারন এলাকার ছেলে, বয়সেও ছোট। ফ্রি হওয়া যাবে না।
যাই হোক আলাউদ্দিন সাহেব খুব ভদ্র ভাষায় নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন। খুকি তোমার বাবাকে দাও।
-আমি শাওন। আর হুমায়ুন আমার স্বামী। শাওন খুব ঝাঁঝের সংগে উত্তর দিলেন। এবারে শাওন হুমায়ুনকে ডাকলেন, এই লক্ষী তোমার ফোন, সরকারের কি না কে যেনো ফোন করেছে।
শাওন ফোনটা হুমায়ুন কে দেয়ার আগে আলাউদ্দিন সাহেবকে খুব কড়া গলায় বললেন, শুনেন আমি মোটেও খুকী নই, আমার আর হুমায়ুনের দুটি বাচ্চা আছে।
আলাউদ্দিন সাহেব এই অপমান সহ্য করলেন। মনে মনে নিজেকে বলছেন, জননেত্রীর কনসার্ন না হলে আজ রাতেই গুম করার বন্দোবস্ত করতাম। আরে কনসার্ন তো খুব ভালো ইংরেজি শব্দ। তাহলে আমার মধ্যেও ইংরেজি আসে। কিন্তু বন্দোবস্ত এর ইংরেজি কি??
- হ্যালো। হুমায়ুন আহমেদ বলছি। আপনি কে বলছেন।
আলাউদ্দিন সাহেব তার সমস্থ ভালোবাসা উজাড় করে ব্যাকুল কন্ঠে বলছেন, হুমায়ুন শোন এটা জাতির পিতার ম্যাটার। এখানে জননেত্রী কোন ছাড় দিবেন না। প্লিজ আমার রিকোয়েস্ট টা রাখ।
-জি স্যার ভেবে দেখি।
হুমায়ুন ভাবছেন। এই লোকটাকে কি স্যার বলা উচিত?? না লিডার বলতে হবে। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়লেন, শিক্ষকদের আমাদের দেশে স্যার বলে, বাট যিনি শিক্ষকতার মতো মহান পেশা ছেড়ে পোষা কুকুরের মতো দলবাজি করেন তাকে কি বলা উচিত?? মনে হয় ভাই, না, ভাই বলবে দলের কর্মীরা। তাহলে আমি একজন সাবেক শিক্ষক হয়ে আরেকজন সাবেক শিক্ষককে কি বলবো, স্যার..?? খারাপ না, স্যার ই ভালো....
হুমায়ুন এটা ভেবে দেখার বিষয় না.. সব রেডি করা, তুমি শুধু মতিউরকে তোমার ৪ ও ১০ নং পর্ব ছাপাতে বলো বাদ বাকি ব্যাবস্থা মাহবুব ও শামছু করবে।
এছাড়া আর কোন উপায় নেই...।
হুমায়ুন বললেন ঠিক আছে আমি আপনার প্রস্থাবে রাজি তবে একটা শর্তে।
- শর্ত! কোন সমস্যা নেই। কত টাকা দিতে হবে তোমাকে। আমি আজই ২০ লাখ টাকার একটা চেক প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে তোমার আ্যাকাউন্টে পাঠানোর ব্যাবস্থা করছি।
না। আমার শর্তটা একটু ভিন্ন রকমের।
আলাউদ্দিন সাহেব একটু আশ্চর্য হয়ে বললেন, ভিন্নরকমের!! ঠিক আছে, তাহলে বলো কি শর্ত??
হুমায়ন আহমেদ খুব ঠান্ডা এবং অবিচল কন্ঠে বললেন,
- আপনি এখন ফোন রেখে আবার ফোন দিবেন আমাকে, তরপর শাওন সেই ফোন আবারো রিসিভ করবে। আপনি তাকে সালাম দিয়ে। জিজ্ঞেস করবেন সে ক্যামন আছে? তারপর বলবেন ভাবি সাহেবা আমি কি হুমায়ুন আহমেদ সাহেবের সংগে কথা বলতে পারি.............???
হুমায়ুন আহমেদ ফোনটা ছেড়ে দিলেন। মনের ভেতর খচ খচ করছে, আমিওতো তাহলে শিক্ষকতার মতো একটি মহান পেশা ছেড়ে দিয়েছি......
(অ.ট: আমার ধারনা পুরো ঘটনা সাজানো। সত্যও হতে পারে, মিথ্যাও হতে পারে)