আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ যখন নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে তখন অবাক লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু না। কোন কোনদিন দেখতে ভালো লাগে, কোন কোনদিন আবার বিদ্ধস্ত। কোন কোনদিন ম্লান, কোন কোনদিন আবার উৎফুল্ল।
আগেরকালে যখন আয়না ছিল না তখন না হয় মানুষ পানি কিংবা অন্যান্য তরল পদার্থে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতো। কিন্তু এতো ভালো করে কি নিজের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়তো?
মানুষ নিজের চেহারা নিজে কখনও দেখতে পায় না। একটা প্রতিফলকের তার খুব দরকার। আগে ছোট থাকতে এলোপাথাড়ি ছোটাছুটির অন্যতম কারণ হল নিজের চেহারা দেখতে চেষ্টা করা। আমার এখনও মনে আছে, চোখ দুটা বন বন করে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াতো আর আমিও পুরা বাড়ি অস্থির হয়ে ছুটাছুটি করতাম নিজের চেহারা দেখার জন্যে, এক পলকের জন্যে দেখলেও হত। খুব কষ্ট করে হলে নিজের নাকের একটু অংশ আর মুখ থেকে বের করা জিহ্বাটা দেখা যেত। কিন্তু তাতে তো বোঝা যায় না মুখের ভাব-ভঙ্গি।
আকাশ আর গিরগিটির মতোই মানুষের মন ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায়। কখনও কারণে আবার কখনও অকারণে।কখনও নিজ থেকে, বার কখনও কেউ বদলে দেয়। মন বদলের সাথে সাথে মানুষ নিজেও বদলে যেতে থাকে। সে নিজে থেকে বুঝতে পারে না। কেউ বলে দেয় বদলে যাবার কথা। এই কেউ হতে পারে আয়না, কিংবা মানুষ। কারণ এই বদলানো তা আর চেহারায়ও প্রভাব ফেলে। মন খারাপ হলে কখনও কখনও নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। আবার সময়টা ভালো কাটলে কত মানুষই তো আনমনে হেসে উঠে। আবার মুখ দেখে কিছু বোঝা না গেলে কথা কিংবা কাজে তখন বদলটা ধরা পড়ে যায়।
খুব কম মানুষই পারে নিজেকে আড়াল করে রাখতে। নিজেকে আড়াল করে রাখা খুব সহজ না। যে এই কাজটা করতে পারে সেও সাধারণ কেউ না। কারণ তাদের আর নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার প্রয়োজন হয় না। একসময় তাদের প্রতিচ্ছবিগুলি হারিয়ে যেতে থাকে। তখন সে হয় রূপ নেয় মহামানবে, নতুবা নিকৃষ্টতম হিসেবে। মহামানব আর নিকৃষ্টতম মানবের কথা একসাথেই পাশাপাশি লিখলাম। কারণ, এদের মধ্যে খুব অদ্ভুত একটা গুনের মিল থেকে যায়, নিজেদের আড়াল করে রাখা।
ছোটকালের এলোপাথাড়ি ছোটাছুটি এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। নানী প্রায় বলতে থাকেন, "এইভাবে অকারণে ছোটাছুটি করতে কতবার মানা করেছি, বল তো!! তোর কি মাথা ঘুরায় না নাকি!!! তোকে দেখলে আমারই তো মাথা ঘুরতে থাকে।"
ছোটবেলায় জানতাম না, কিন্তু এখন জানি যে নিজের প্রতিচ্ছবি নিজে দেখা যায় না। কিন্তু তারপরও ছুটে চলছি নিরন্তর ক্ষয়ে যাওয়া সত্ত্বা নিয়ে।