ব্যাপারটা নিয়ে দেশে হুলুস্থুল লেগে গেছে। ঢাকা শহরে সিটিং সার্ভিস বাস থাকবে কি থাকবেনা । এর বিপক্ষে যেমন মানুষের মতামত ব্যাপক , তেমনি সপক্ষের মানুষের সংখ্যাও নগন্য নয় মোটেই।
কিন্তু কেন জানি আসল জায়গাটার দিকে কেউ নজর দিচ্ছেননা। সিটিং সার্ভিস থাকা তা আমার কাছে খারাপ কিছু বলে কখনই মনে হয়নি। যেটা খারাপ মনে হয়েছে সেটা হলো, সিটিং সার্ভিস এর নাম চিটিং বাজি করা। আমরা সেই চিটিং বাজি বন্ধের দাবি না তুলে সিটিং সার্ভিস বন্ধের দাবিতে সোচ্চার, এ যেন মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার অন্য রূপ।
আমি জানিনা আমাদের জ্ঞানী বুদ্ধিজীবিরা কি মতামত দিবেন, আমার বুদ্ধি একটু কম। আমার সেই স্বল্প বুদ্ধিতে যেটা মনে হয় সিটিং সার্ভিস যেমন থাকা দরকার, তেমনি স্বল্প দুরত্বে যাওয়ার যাত্রীদের জন্য লোকাল বাস ও থাকতে হবে। যারা স্বল্প দুরত্বে যাতায়াত করবেন তারা কেন সিটিং বাস এ উঠবেন? আবার যার দুরের গন্তব্যে যাবেন অফিস করতে তাদের জন্য তো গরমে ঠাসাঠাসি করে অফিস এ গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। তেমনি লোকাল বাস অ মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীদের উঠবার নিশ্চয়তাও নেই।
সুতরাং আমার স্বল্প বুদ্ধির মানুষের মাথায় যা আসে সেইরকম কিছু কথা বলবার চেষ্টা করছি :
১. সিটিং সার্ভিস বাস অবশ্যই থাকা উচিত, পাশা পাশি সেই সিটিং সার্ভিস এর নামে যেন চিটিং সার্ভিস না হয় সেটা সরকার এর কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে। বাস এ BRTA অনুমোদিত আসন সংখ্যা এবং ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে হবে, নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া গাড়ি থামানো যাবেনা, সেটা যাত্রী উঠা বা নামা কোনো ক্ষেত্রেই করা যাবেনা, ফিটনেস বিহীন কোনো বাস থাকা যাবেনা।
২. প্রতিটা স্টপেজ এর জন্য যাত্রী সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে । যাত্রীদের কে সারিবদ্ধ ভাবে গাড়িতে উঠতে হবে।
৩. সিটিং বাস এর পাশা পাশি লোকাল বাস ও থাকতে হবে পর্যাপ্ত সংখ্যক, যাতে করে স্বল্প দুরত্বে যাওয়া মানুষ গুলো গাড়ির সংকটে না ভুগেন , কিংবা তাদেরকে যেন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে না হয়।
৪. সিটিং সার্ভিস এবং লোকাল বাস এর ভাড়া নির্দিষ্টি করে দিয়ে বাস এ তা ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. বাস এ অভিযোগ বাক্স রাখতে হবে যে বাক্স এর অভিযোগ গুলো মালিক পক্ষ নয়, দেখতে হবে BRTA কর্তৃপক্ষ কে. বরং মালিক এর উপস্থিতিতে সেটা করা যেতে পারে, এবং কোনো অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে. আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে যে আমরা সাধারণ মানুষ কখনই অভিযোগ বাক্স এ অভিযোগ দাখিল করিনা যতক্ষণ পর্যন্ত তা সহনীয় পর্যায় থাকে. যখন মানুষ এর সহ্য ক্ষমতার বাইরে যায় তখন মানুষ ওই বাক্স এ অভিযোগ দাখিল করে। সুতরাং প্রথম বার বলে সতর্ক করা হলো, দিতীয়বার বেশি সতর্ক করা হলো এইসব বলার যেন কোনো সুযোগ না থাকে, বরং প্রথমবার ঘটলেই কঠোর ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই , মানুষ এর যদি সেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে বাস মালিকরা তাদের যাত্রী সেবা পরিচালনা করতেন (যেটা তারা বলে থাকেন) তাহলে সব সমস্যা সমাধান করা যায় , কিন্তু যদি সেই মানসিকতা না থাকে, যদি সাধারণ মানুষকে ঠকানোর প্রবণতা আমাদের ভেতরে শেকর গেড়ে বসে থাকে তাহলে কোনো কিছু দিয়েই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।
আসুন আমরা আমাদেরকে ভালবাসি, ভালবাসি আমাদের দেশটাকে আর দেশের মানুষকে। একজন আরেক্জনেক শত্রু না ভেবে আমার মতই আরেকজন ভুক্তভোগী মানুষ চিন্তা করি। তার কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করি. ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:৪২