STEN
========
এটি এমন একটা সাব-মেশিনগান যা আপনার না চেনার কোন কারনই নেই । এর মূল কারন আমাদের দেশে এর ব্যবহার , মুক্তিযুদ্ধে এটা ব্যবহার হয়েছে আর এখন এর মডেলের ব্যবহার হচ্ছে আমাদের বিখ্যাত এফডিসিতে ... বাংলা সিনেমা গুলোতে ভিলেনের জঙ্গিবাহিনী নায়কের দিকে যেসব অস্ত্র তাক করে থাকে তার বেশিরভাগ স্টেনের মডেল ...
যাই হোক আমি এসব না দেখারই উপদেশ দিবো । মূল কথা হলো , এটি সারা বিশ্বব্যাপী অসম্ভব জনপ্রিয় একটি অস্ত্র । কিন্তু কেন এবং কিভাবে ??
কি গুনের কারনে এটা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ থেকে শুরু করে নর্দান আয়ারল্যান্ড কনফ্লিক্ট-এও ব্যবহার হয়েছে ??
========
প্রথমেই অস্ত্রের নামকরনে আসি ... এর ডিজাইন রেগিনাল্ড ভি. শেফার্ড ও হ্যারোল্ড টার্পিন করেছিলেন । তাদের নামের অদ্যক্ষর S এবং T ব্যবহার করা হয় অস্ত্রের নামের প্রথম দুই অক্ষর হিসেবে । পরের দুই অক্ষর EN আসে এর নির্মাতা কোম্পানি এনফিল্ড থেকে , যা বর্তমানে 'রয়াল স্মল আর্মস ফ্যাক্টরি' নামে পরিচিত ।
এবার আসি আমার ব্লগের নামকরনে ... 'ব্যাটল অব ডানকার্ক' এ ব্রিটিশরা তাদের বড় সংখ্যার অস্ত্র হারায় যখন তারা একই সাথে ইভ্যাকুয়েশন এবং এক্সপ্যানশনে নজর দিয়েছিলো । তখন তারা অ্যামেরিকা হতে থমসন কিনতে শুরু করে , কিন্তু তা তাদের চাহিদা মিটাতে পারলো না , তাই বাধ্য হয়ে তারা বাধ্য হয় এমন অস্ত্র ডিজাইনে মনোনিবেশ করতে যা হবে একই সাথে সস্তা , সহজ ও যুদ্ধক্ষেত্রে সাবলীল ।
সত্যই এই অস্ত্র সস্তা ছিলো ... তৎকালীন সময়ে এর প্রতি ইউনিটের দাম ছিলো মাত্র ১০ ডলার বা ২.৫ পাউন্ডের চেয়েও কম । আর এর ডিজাইন ?? পুরো অস্ত্রটাকে মোটামুটিভাবে মাত্র ১১ ভাগে ভাগ করা যেত । এতটাই সহজ ছিলো এর ডিজাইন ।
কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে এর পার্ফরমেন্স কোনভাবেই এর দাম বা ডিজাইন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় নি বরং তৎকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে দিয়েছে ।
১৯৪০ সালে এর ডিজাইন শেষ হয় । চাহিদা মেটাবার জন্য এটি ব্যবহার শুরু হয়ে পড়ে ১৯৪১ সালেই । একাধারে ষাঠের দশক পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয় ব্রিটিশ বাহিনীতে , তারপর স্টার্লিং এসএমজি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় ।
এর কার্যনীতি : ব্লো ব্যাক , ওপেন বোল্ট
সব ভ্যারিয়েন্ট সহ ৪৫ লক্ষেরও বেশী এই অস্ত্র উৎপাদন হয়েছে ।
========
এতে কার্ট্রিজ হিসেবে ব্যবহার হতো 9X19mm Parabellum । এতে ফিডিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার হতো ৩২ রাউন্ড ক্লিপ ম্যাগাজিন । এই ক্লিপ ম্যাগাজিনের ডিজাইনও ছিলো খুব সরল ধরনের ডাবল কলাম । মজার ব্যাপার হলো অন্য অস্ত্রের সাথে এর তফাৎ হলো , এর ম্যাগাজিন লাগাতে হয় সাইড থেকে , নিচ থেকে না ।
========
এই অস্ত্র বেশ কিছু গুনের জন্য বিখ্যাত । তার প্রথমটিই হলো এটার আকার । অস্ত্রটা এতো ছোট ও সরল লম্বাটে ডিজাইনের যে এটা লুকিয়ে রাখা খুবই সহজ । আর এটির ভাজ করার সুবিধা থাকায় এর আকার প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলা সম্ভব হতো তাই অতর্কিত হামলার জন্য এর তেমন কোন বিকল্প নেই ।
এর গুলির ভর কম হওয়ায় রিকয়েল খুবই কম এবং অ্যাকুরেসি দুর্দান্ত ছিলো । এর ইফ্যাক্টিভিটি ১০০ মিটার পর্যন্ত অক্ষত থাকে ।
এর মডারেট রেট অব ফায়ার অর্থাৎ ৫০০-৬০০ রাউন্ড পার মিনিট হওয়ায় গুলির অপচয়ের কোন সম্ভাবনা থাকতো না ... আর কাঠামোটাই এমন যে ব্রাশফায়ারের জন্য হিপফায়ার করার কোন প্রয়োজনই নেই ।
এক কথায় এর সবকিছুই সস্তা সস্তা ... তৈরিতে খরচ কম , ব্যবহারে খরচ কম । সেরা মানের ইনসার্জেন্সি ওয়েপন বলতে যা বুঝায় ।
========
যেহেতু এটা বেশ আগের অস্ত্র , সেই হিসেবে এর তেমন কোন ত্রুটি বা সমস্যা নেই । জ্যাম হয়ে যাবার ব্যাপারেও কিছু বলার নেই । সরল ডিজাইনের কারনে তা রিপেয়ার করাও সহজ ।
========
এর ভ্যারিয়েন্টের অভাব নেই ।
ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টগুলোর মাঝে আছে Mark-2 , Mark-3 , Mark-4 , Rofsten ইত্যাদি ।
সাপ্রেসড ভ্যারিয়েন্ট আছে Mark-IIS , Mark-6 ।
অন্য দেশের ভ্যারিয়েন্ট ... অজস্ত্র সংখ্যাক আছে ... আর্জেন্টাইন স্টেন , ড্যানিশ স্টেন , জার্মান এমপি-৩০০৮ , স্পুটার গান , হ্যালকন এমএল ৫৭ , প্লেটার ৯১ , সাস্কস্টেন ইত্যাদি ...
পরীক্ষামূলক মডেলগুলার কথা ভুলে যান ।
========
গ্যাজেটের ক্ষেত্রে আপনি এতে ব্যবহার করতে পারবেন -
সাইলেন্সার - কাজে দিতে পারে । তবে এর মাজল ভেলোসিটি কম আর সাইলেন্সার তা আরো কমিয়ে দেয় । তাই সেটা আপনার অস্ত্রের রেঞ্জ ও আঘাত করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে ।
বেয়োনেট - তখনকার সময় বেয়োনেটের ব্যবহার জনপ্রিয় ছিলো , কিন্তু কতটুকু কাজের ছিলো তা বলতে পারছি না ।
# এতে আর কিছু বসানো যায় বলে আমার জানা নেই ।
==========
এই ছিলো আমাদের আজকের মারণাস্ত্র সিরিজের অস্ত্র বিবরণী। পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ।
পড়াশোনা নিয়ে বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এই সিরিজ টেনে নিতে পারি নাই ।
পরবর্তিতে আসছে - MG-42 ( দুর্গরক্ষকের রণহুংকার )
==========
১। একে-৪৭ - Click This Link
২। এম১ গ্যারান্ড - Click This Link
৩। ডেজার্ট ঈগল - Click This Link
৪। রেমিংটন ৮৭০ - Click This Link
৫। স্করপিয়ন ভিযি-৬১ - Click This Link
৬। থমসন এসএমজি - Click This Link
======================================