M1 Garand
========
প্রথম দিকের অন্যতম সেরা সেমিঅটোমেটিক রাইফেল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ম্যাচ উইনার ওয়েপন । এর কার্যকারিতার জন্য এর টাইটেল হয়ে যায় , " M1 Grand" । আসলেই একে গ্র্যান্ড বলার যোগ্যতা এর আছে ।
========
এর ডিজাইনার John C. Garand । যতদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস সঞ্চিত থাকবে ততদিন এই লোকের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে । ১৯৩৬ সালে এর প্রোডাকশন শুরু হয় । সেসময় অন্য যেসব রাইফেল ছিলো , তার প্রায় সব বোল্ট অ্যাকশান , অর্থাৎ প্রতিটা গুলির পর পরের রাউন্ডটা নিজ হাতে লোড করা লাগতো । যেসব সেমিঅটোমেটিক রাইফেল ছিলো সেগুলোও খুব একটা সুবিধার না । হয়ত খরচ বেশি , বা জ্যাম হয়ে যায় বা ব্যবহার করা কঠিন । যেমন তখন ছিলো , জার্মান Gewehr 43 ও রাশিয়ান SVT-40 ।
এটা কাজ করার নীতিটার অফিসিয়াল নামটা হলো - Gas Operated , Rotating Bolt ।
=========
এতে ব্যবহার হতো 7.62 X 63 mm রাউন্ড । তখনকার হিসেবে বুলেটের ক্ষমতা বেশ ভালো বলা যায় । পেনিট্রেট করার ক্ষমতা তো সেই সময়ে শত্রুর ময়দানে ত্রাশ সৃষ্টি করে দিত । কারনটা উদাহরন দিয়ে বলি , জাপানের গিরিপথগুলোতে এক সারিতে চলতে থাকা জাপানিদের অ্যামবুশ করার সময় ১ গুলিতে ৩ জনকে ঘায়েল করা ছিলো মোটামুটি স্বাভাবিক ঘটনা ।
এর গুলির ক্ষমতা ব্যালিস্টিক জেল টেস্ট রেজাল্ট - Click This Link
==========
এই অস্ত্রের উদ্ভট কোন বৈশিষ্ট্য নাই । তবে পুরোপুরি সতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য আছে ।
তার প্রধানটা হলো , এর ম্যাগাজিন বা ক্লিপ । এই অস্ত্রের গুলির যোগান দিতো ৮ রাউন্ড এন-ব্লক ক্লিপ । মানে , আপনার এই খুন করার যন্ত্রে গুলি শেষ হয়ে গেলে আগের ক্লিপ বের করা লাগবে না । শেষের গুলিটা করার পর এটা ছিটকে বের হয়ে যায় । আর এখানেই পাওয়া যায় এর লেজেন্ডারি "পিং" শব্দটা । মানে গুলি শেষ হবার পর যে পিং করে গুলির ক্লিপটা ছিটকে যায় সেটা এই অস্ত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত বৈশিষ্ট্য ।
আর রিলোড করতে যদি কারো ১ সেকেন্ডের বেশি সময় লাগে , বুঝতে হবে হয় সে আগে এই অস্ত্র ব্যবহার করে নাই ।
মোটামুটি ভাবে ৬২,৫০,০০০ কপি এম-১ গ্যারান্ড তৈরি হয়েছে ।
==========
এই জিনিসটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর সহজ রিলোডিং সিস্টেম ও এটি সেমিঅটোমেটিক । যার কারনে অন্য যোদ্ধারা একটা গুলি করার পরে আবার পরের গুলি লোড করতে করতে এর তিনটা থেকে চারটা গুলি করা হয়ে যাবে । মানে , আপনি প্রথম গুলিতে না মারতে পারলে এই অস্ত্রের মুখে আপনি পর মুহুর্তে শহীদ হয়ে যাবেন । আর বোল্ট অ্যাকশান না দেখে এর অ্যাকুরেসিও খুব ভালো , আপনার এইম নষ্ট হবে না ।
অনেকের মনে হতে পারে অটোমেটিক ওয়েপন থাকতে এর বেল দেওয়ার কি কোন কারন আছে ? এর উত্তরটা হলো - এটা রাইফেল । মানে , তখনতো অটোমেটিক ওয়েপন ছিলো , আমেরিকান Thompson SMG ( Tommy Gun ) , রাশিয়ান PPSh , ব্রিটিশ Sten । আসলে , এর ভেদন ক্ষমতার দিকেই এই জবাব যাবে । মানে এর ফায়ার রেট ছিলো তখনকার রাইফেলের থেকে অনেক বেশি , মিনিটে ৪০-৫০টা । আবার ভেদন ক্ষমতায় একেবারে ১০০% রাইফেল । ফলে এই ২ বৈশিষ্ট্য এক করায় এর গুরুত্ব বেড়ে যায় । তাছাড়া এটা বেশ সস্তা ।
----------------
তবে এই জবাবেরও একটা কিন্তু আছে । তখন এই ক্ষেত্রে জার্মানরা এগিয়ে ছিলো । তারা ফুল অটোমেটিক রাইফেল বের করেছিলো , STG-44 বা Sturmgewehr 44 ।
==========
এই অস্ত্র কিন্তু সুপেরিওর না । মানে এরও এক আধটা ঘাপলা আছে । যেমন , এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কাদা । কাদার ব্যাপারে এই জিনিস খুব সেনসেটিভ , এমনকি মেয়েদের জামাকাপড় বা বয়ফ্রেন্ডের থেকেও । মানে , বয়ফ্রেন্ড যেমন অন্য মেয়ের দিকে একবার তাকালেই ব্রেক-আপ । তেমনি সামান্য কাদা এর ভিতরে গেলেই সেও তার কাজ বন্ধ করে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে । তখন এটা মোটামুটি খুলে কাদা পরিষ্কার করে আবার জুড়ে দিতে হয় । বলা বাহুল্য তার অনেক আগেই আপনি খতম । শুধু মাত্র এই কারনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই অস্ত্র ব্রিটিশরা ব্যবহার করে নাই । যদিও পরে তা চরম ভুল হিসেবেই প্রকাশ পায় ।
===========
এই অস্ত্রের ব্যাপারে অনেকে অভিযোগ করেছে , এর ক্লিপ ডিটাচিং এর পিং শব্দটা শত্রুকে সতর্ক করে দিত ও গোপনীয়তা ভঙ্গ করতো কিন্তু তা পুরপুরি ভুল । কারন রনাঙ্গন একটা কোলাহল মুখর এলাকা , এখানে কেউ আলাদাভাবে সেই পিং শব্দ শুনতে পাবে না । আর যেহেতু গুলি না করা পর্যন্ত পিং শব্দ হচ্ছে না , তাহলে ভয় কি ?
===========
মার্কিন সেনাপতি জর্জ এস প্যাট্টন এই অস্ত্র নিয়ে বলেছেন , "the greatest battle implement ever devised" । অন্তত সেসময় এই কথা ফলে গেছে ।
মোটামুটি ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এই অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে ।
এর ভ্যারিয়েন্ট তেমন নাই , যা আছে তার বেশিরভাগ হলো বিভিন্ন প্রোটোটাইপ ।
==============
বর্তমানে এর ব্যবহার বিভিন্ন সামরিক অনুষ্ঠানগুলো ও কুচকাওয়াজগুলোতে আর ক্ষেত্র বিশেষে আমেরিকার মানুষদের শিকারে যাবার সঙ্গ হিসেবে ।
=============
এই হলো আজকের অস্ত্র পরিচিতি ।
এর পরে আসছে - Desert Eagle / Remington 870 ( এখনো সিদ্ধান্ত নেই নাই )
পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ
আমার এই সিরিজের আগের পোস্ট - একে-৪৭ - Click This Link
=============