পর্ব-০১
স্বপ্ন দেখতাম বড় বড়। (জেগে দেখা স্বপ্ন)। স্বপ্নগুলো সময় পেলে সাথে সাথে লিখতাম ও ডায়েরীতে। কলেজে ভর্তি হয়েছি। মস্ত বড় এক এরিয়া। শত রংয়ের ড্রেস পরিহিত মানুষজন ঘুরাঘুরি করতো। কলেজের ছেলে মেয়েদের কথা আর না বললেই চলে। আমি যাই দেখছি তাতেই অবাক হচ্ছি। গ্রাম থেকে এসেছি তো। গ্রামে যখন পড়ালেখা করতাম তখন খুব সাদামাটা ছিল দিন সেই গুলো। এমন কি একি ক্লাসের মেয়েদের সাথে ছেলে রা ভালো করে কথা বলতো না। আর স্কুল জীবনের প্রেম , মাথা খারাপ।
কিন্তু কলেজের পরিবেশ টা কেমন যেন। সবাই আলাদা করে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করছে। মেয়ে দের যত দেখছি তত বেশি অবাক হচ্ছি । কথা গুলো কেমন যেন। সত্যি আমি অবাক হচ্ছি, অবাক হচ্ছি এবং অবাক হচ্ছি। ক্লাসে ম্যাডাম আসেন, উনার হাঁটা-চলাটা আমাকে আরো বেশি ভাবিয়ে তুলে। সব কিছুই যেন পর পর লাগছে। এত অসহায় হয়ে পরেছি আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। একটা বন্ধু পাচ্ছিলাম না। না আল্লাহ হয়তো আমার দিকে চোখ ফিরে তাকালেন। একদিন পাশে বসা একজনের সাথে পরিচয় হয়ে গেল। আজিজ, মাদ্রাসা এস এস সি পাশ করে এসেছে। একটা সুন্দর জানশোনায় এগুতে লাগলাম। তারপর একাউন্টিং এর দেব স্যার, উর্মি, মিনা, মুন্না, জেনি, জুলি দের সাথে ভাল একটা টিম গঠন হয়ে গেল। আমি জানি না কেমন করে যেন আমি ও ওদের সাথে মানিয়ে চলতে পারছিলাম। তাছাড়া আমাদের ফ্যামিলি ও মফস্বলে স্থানান্তরিত হয়ে ছিল। এদের সাথে পরিচিত ঘটার পর অনেক ভালো লাগতে লাগলো কলেজ জীবন। বেশ একটা উপভোগ করতে লাগলাম।
অফ ফিরিয়ডে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি মিনা, উর্মি সাথে রনি (মেয়ে)। তখন কে কি করে দেখাতে পারবে তার একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলতো। আমি কি কম যাই নাকি। ওদের বললাম দেখ তোদের আজ অপরিচিত মেয়ের সাথে কথা বলে দেখাবো। ওরা জানে আমি সাহসি তবে বিড়াল দৌড়ানোর মত। সবাই ভিন্নভাবে বোঝাবার চেষ্টা করলো --- হানিফ চাপা একটু কম মার। আমি ও লজ্জ্বা পাবার পাত্র নই। শেষমেষ সবাই বলে উঠলো যদি না পারি তবে আমি প্রত্যেককে যেন ক্যান্টিন এ নাস্তা খাওয়াই। আমি রাজি।
উর্মি কে বললাম - ঠিক আছে তুই গিয়ে ঐ মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে আয়। সে মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে এলো। ফার্ষ্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হয়েছে। তারপর শুরু হলো মেয়েটির সাথে আমার কথোপকথন।
-আরে রিনা তুই?
-মানে, আপনি আমাকে বলছেন? (বেচারি একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল)
- আরে ফাজলামি রাখ। তা তুই এখানে ভর্তি হলি আমাকে বললি না তো। আর তোর ভাইয়া ও তো কিছু বললো না। রাখ রোহান রে আজ পাইছি।
-ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন আমার মাথায় তো কিছু ডুকছে না। আমি আপনাকে চিনি না।
-দেখ রিনা ফাজলামি সব সময় ভালো না। কাল ও তোর ভাইয়া কে ফোন করলাম, আর ফোন ধরে বললি .. স্যরি আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন। আবার খিক খিক করে হাসলি ও । আচ্ছা আমি তো বিপদে পরে ও ফোন করতে পারি।
-ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে সত্যি চিনতে পারছি না। আপনার কোন একটা ভুল হচ্ছে।
-আবার ও। আমার বন্ধুরা কি মনে করছে। দেখ এদের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিই।
-ভাইয়া আপনি কি করলে বিশ্বাস করবেন যে আমি সে নই।
-ওকে তোর কোন পরিচয় পত্র দেখা।
ওর একটা পরিচয় পত্র আমাকে দিল। আমি হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠলাম। খুব অপরাধ করে ফেলেছি এই রকম একটা চেহেরা নিয়ে ও কে বললাম-- বোন আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে। আমি আসলে তোমাকে ... আমি সত্যি স্যরি।
ও বলল না আমি বুঝতে পেরেছি। আমি শেষমেষ সুন্দর একটি ক্ষমা চেয়ে বিদায় দিলাম। আর ঐ মেয়ে টি যাওয়ার সাথে সাথে সবাই সে কি হাসি। রনি বললো--- আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না। তুই ক্যামনে এরকম করতে পারলি। ছাড় এসব, চল নাস্তা করে আসি।
তার পরের দিনের ঘটনা। আমি ক্লাসে বসে আছি। দৌড়ে মুন্না এসে বললো হানিফ একটু বাইরে চল। বাইরে নিয়ে গিয়ে সে আমাকে বললো- কাল তুই দেখলাম একটা মেয়ের সাথে কথা বললি, তাকে কি তুই চিনিস? আমি বললাম নাতো। মুন্না বললো- দোস্ত কাল ঐ মেয়ের ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো তুই ঐ মেয়ের সাথে কি কথা বলছিলি। দেখ ওই মেয়ের ভাই ভালো না।
আমি তো প্রচুর ভয় পেয়েগেছিলাম। আমি বাবা তারপর কোন মেয়ে তো দূরের কথা মিনা রনিদের সাথে ও কথা বলার সময় ভয়ে ভয়ে লক্ষ্য করতাম কেউ তাকাচ্ছে কিনা। ৫-৬ দিন বাদে হঠাৎ ঐ মেয়ে কে মুন্নার সাথে দেখলাম। শালার আমার মাথায় ব্যাপার টা খটকা লাগলো। আমিও একদিন বাদে ডেকে বললাম। দোস্ত ঐ মেয়ের ভাইটা আমার কাছে কাল এসেছিল। সে বলল আমি নাকি ওর বোনের সাথে আবার কথা বলেছি। মুন্না তো একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সে বললো রাখ ব্যাটা ফাজলামি। আসলে ঐ মেয়েকে আমার দেখার পর ভালো লেগেছিল। তারপর দেখলাম তুই ঐ মেয়ের সাথে কথা বললি। তাই একটু ভয় দেখিয়ে ছিলাম। এরপরে সে আমাকে খুলে বললো - সে খুব চেষ্টায় আছে ঐ মেয়ের সাথে লাইন লাগাবার জন্য। সে নাকি অলরেডি চিঠি ও দিয়েছে। বোন ডেকে। আমি যত শুনছি তত অবাক হচ্ছি। সে আমাকে খুব করে ধরলো তাকে হেল্প করার জন্য। যা হোক প্রায় মাসখানেক পরে আমাদের দুজনের প্রচেষ্টা সফল হতে চললো। কিভাবে---
মুন্নাকে বললাম তুই বোন ডেকেছিস সমস্যা নাই, চালিয়ে যেতে থাক। পরের টা আমি দেখছি। এবার ফাইনাল এ্যাকশান এ যাব। প্ল্যান মোতাবেক মুন্না হাতে ব্যান্ডেজ করে কলেজ থেকে একটু দূরে বসে আছিল। ফোন দিয়ে আরবি কে ডেকে আনলাম। ভূলে গেছি- মেয়েটার নাম ছিল আরবি। কিছুক্ষন কুশল বিনিময় করার পর আমি বললাম-
-আরবি তুমি আমার ছোট বোনের মত। কিনতু তুমি আমাকে বাচাঁও।
-কেন কি হয়েছে ভাইয়া?
-আরবি তোমাকে তো ছোট বোন-ই বললাম। আমার বোন কে হয়তো আমি এভাবে বলতে পারতাম না। কিন্তু আমি আর পারছি না আরবি। প্লিজ আমাকে কিছু একটা হেলপ করো।
-ভাইয়া আমি ও আমার বড় ভাইয়ের মত আপনাকে দেখি। বলুন না কি হইছে। আমি পারলে সত্যি আপনাকে হেল্প করবো।
-আরবি মুন্নার অবস্থা খুব খারাপ। আমি কাল রাত ওর সাথে মেডিক্যাল ছিলাম।
-কেন কেন ভাইয়া কি হয়েছে? মুন্না ভাই তো কাল ও কলেজে এসেছিলো।
-আমি বললাম আরবি তোমাকে আমি কি ভাবে বলব? (আমি অনেক চেষ্টা করছিলাম চোখে দু-ফোটা জল আনার জন্য, পারছিলাম না) তারপর ও যতদূর পারলাম করুন করে ও কে বললাম- তোমাকে ও তো চিঠি দিতো। তখন থেকে ও আমাকে বলতো তোমাকে কি ভাবে বলবে ও তোমাকে ভালবাসে। আড়চোখে দেখলাম ও হঠাৎ শক খাওয়ার নড়ে উঠলো। আমি বলে যেতে লাগলাম- আমাকে সব সময়ের জন্য ও অনুরোধ করতো তোমাকে যেন বলি ওর ভালবাসার নয় , তোমাকে নিয়ে কষ্টের কথা। আরবি আমি ওকে বারবার বুঝাতাম যে মেয়ে তোকে ভাইয়ের চোখে দেখেছে সে কিভাবে তোকে ভালবাসার পাত্র হিসেবে গ্রহন করবে। কিন্তু কার কথা কে শুনে? ও দিন দিন বেপরোয়া হতে লাগলো। গত পরশুদিন শুনলাম ওর মায়ের কাছে ঘুমের ওষুধ খাচ্ছে ৫-৬ দিন ধরে। (হয়তো আরবির কানে আমার কথা গুলো ডুকছিল না) আমি আর কথা বাড়ালাম নাম । চলে যাচ্ছি ধীরে ধীরে সমাপ্তির পথে। বললাম- কাল ও নিজের শরীরে নিজে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করেছে যন্ত্রনা ভূলে থাকার জন্য।
না আরবি আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। তুমি যদি কিছু পার কর নয়তো আমি ওকে বলছি মদ খেয়ে যেন তোমাকে ভূলে থাকার চেষ্টা করে। আমি আর কিছু বলছি না।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মুন্না কে মিস কল দিলাম। প্ল্যান ছিল এরকম যখন তাকে মিস দেবো সে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকবে। দেখলাম সে আসছে-- আমি আর দেরি না করে তার অলক্ষ্য হাতে পানি নিয়ে চোখে লাগালাম। তারপর সোজা বিল দিয়ে চলে এলাম। বিদায় ও নিলাম না। দৌড়ে মুন্নার কাছে চলে এলাম। ওর সাথে এমন ভাবে কথা বললাম-- আরবি যেন দূর থেকে দেখে বুঝে আমি ওর সাথে খুব বকাবকি করে কথা বলছি।
তারপর দেখলাম আরবি আমাদের সামনে হেটে চলে গেল। দুজনের সাথে একটু কথাও বললো না। মুন্নাকে বললাম দোস্ত যা তোর কাজ হয়ে গেছে। ঐ হালা তো আমার পিছু ছাড়ছে না। বললো দোস্ত ক্যামনে বুঝলি কাজ হয়ে গেছে? বলনা। আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। আমাকে প্লিজ বুঝিয়ে বল। আরে বাবা এত দেখছি মহা যন্ত্রনা।
যাই হোক ২-৩ দিন আরবির দেখা নাই। আমি জানতাম মেয়েটি একটা টেনশনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। আমি ফোন দিলাম না বা মুন্নাকে ও কে বললাম ফোন না দিতে। ফলাফল সত্যি প্রশংসনিয় ছিল। যথারিথী কলেজে আসলো মুন্নাকে ডাকলো। বললো ভালবাসি। এভাবে দিন যাচ্ছে। আমি আর মুন্না অন্তরের বন্ধু হয়ে গেলাম। সব কিছুই একসাথে। শুধু একসাথে বাথরুমে ডুকা ছাড়া। ভাল করে ক্লাস করতাম না। শুধু ঘুরাঘুরি করতাম। আর অফ পিরিয়ড শুরু হলে আমি আড্ডা দিতাম বেষ্ট বন্ধু (মিনা, রনি, জুলি, উর্মি) দের সাথে আর মুন্না হালাই আড্ডা দিত আরবির সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭