এবার ঈদে বাসের টিকেট ছিল এক দুর্লভ বস্তু। তাছাড়া ঈদের ক'দিন আগ থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে জ্যাম লেগেছিলো। তাই ভাবলাম এবার বাড়ি যাওয়ার জন্য অন্য উপায় বেছে নিতে হবে। ট্রেনের চিন্তা প্রথমেই বাদ দিলাম। ভালো লাগে না। বেছে নিলাম লঞ্চ।
ভ্রমণটা আমার কাছে খুবই উপভোগ্য ছিলো কারণ এটিই ছিল আমার প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। তাছাড়া নদী, মুক্ত আকাশের প্রতি আকুলতা কার নেই?
যাত্রাপথে গিলে গিলে খেয়েছি নদীর সৌন্দর্য। মোবাইলফোনে বেশকিছু ছবিও তুলেছি।
ছবিঃ এক
সদরঘাট হতে যাত্রা শুরু করে কিছুদূর যাবার পর কেরানীগঞ্জের গ্রামের দৃশ্য
ছবিঃ দুই
নদীবন্দরটা নারায়নগঞ্জের ঠিক কোন জায়গায় পড়েছে বলতে পারি না। তবে যাওয়ার পথে এটিকে একেবারেই নিশ্চল মনে হয়েছিলো। একটি মাত্র জাহাজ থেকে মাল খালাসের দৃশ্য চোখে পড়েছে। আর বন্দরের কন্টেইনার রাখার জায়গাটা প্রায় ফাঁকা ছিল।
ছবিঃ তিন
মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জনপদ। এমন একটা আবাসের স্বপ্ন আমি দেখি যেখানে আমার ঘর হবে একেবারে নদী লাগোয়া। বারান্দায় দাঁড়ালেইই চোখে পড়বে নদীর সুললিত দৃশ্য।
ছবিঃ চার
এই জায়গাটাতে এসে যতদূর চোখ গেছে শুধু ইটের ভাটা চোখে পড়েছে।
ছবিঃ পাঁচ
ইট ভাটার দৃশ্য উপেক্ষা করলে নদীর বুকে সূর্যের ঝিলিক দেখে যে কারো মনই নেচে উঠবে। খুবই অপূর্ব লেগেছে।
ছবিঃ ছয়
শুধু দেখেই গেছি। মুগ্ধতার তুলিতে মনে আঁকতে চেয়েছি।
ছবিঃ সাত
এই ছবির কোন বর্ণনা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ছবিঃ আট
ছবিঃ নয়
পূর্বে ব্রীজের উপর থেকে নদী দেখতাম। এখন নদীর উপর থেকে ব্রীজ দেখছি।
ছবিঃ দশ
লঞ্চ তখন মেঘনায় এসে পৌঁছেছে।
ছবিঃ এগারো
কোন বিঘ্নতা ছাড়াই লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে বিপরীত দিক হতে আসা লঞ্চ, ট্রলার, মালবাহী নৌযান পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলো অপরূপ নিঃশব্দে। শুধু জলের গায়ে ঢেউ তুলে।
ছবিঃ বারো
বিকাল চারটার দিকে মাঝ নদীতে আমরা। আকাশেও যেন স্বর্গীয় রূপ। নদীও যেন ব্যতিক্রম নয়।
ছবিঃ তেরো
এমন দৃশ্যায়নেই সেজেছিলো প্রকৃতি।
ছবিঃ চোদ্দ
দৃশ্যপটে দূরের গ্রাম রেখার মত।
ছবিঃ পনেরো
সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলান দিয়েছে। পূর্ব আকাশে জমে থাকা মেঘ ঝরে পড়ছে উর্বর বাংলায়। দেখা মিলেছে সাতরঙ্গা ধনুকের।
ছবিঃ ষোল
ছবিঃ সতেরো
বিকেল ঘনিয়ে এলে নদীটা যেন হয়ে উঠলো সদ্য যৌবনবতী কিশোরীর মত।
ছবিঃ আঠারো
এই দৃশ্য দেখে মনে হলো লিখে ফেলিঃ
সফল দশ বছর আয়ু বন্ধক রেখে
একদিন নিজের করে নেবো এই নদী
শৈশবের বিকেল বেলায় নিয়ে যাবো তারে।
ছবিঃ উনিশ
সমগ্র বিকেল নদীর বুকে বিছিয়ে রাখা সোনালী আঁচল তুলে নিয়ে সূর্য ডুবে গেছে।
ছবিঃ বিশ
কত সন্ধ্যা পার করে দিয়েছিলাম বিষণ্ণতা আঁকড়ে ধরে। কত সন্ধ্যায় ছিলো উচ্ছ্বাস, উচ্ছলতা। কিন্তু এমন সন্ধ্যা আগে আর দ্বিতীয়টি পাইনি।
ছবিঃ একুশ
ঢাকা ফিসে আসার সময়ও নৌপথ বেছে নিলাম। ছবিটা চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে। এখানেই মিলিত হয়েছে পদ্মা আর মেঘনা।
ছবিঃ বাইশ
তপ্ত দুপুর। লঞ্চে উঠেই সোজা চলে গেলাম ছাদে। প্রচন্ড গরম আর রোদের একগুঁয়েমিতে অল্পক্ষণেই কাহিল হয়ে গেলাম। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যাবো তখনই টবের ফুলগাছে তাকে বসে থাকতে দেখলাম। লঞ্চ তখন মাঝনদীতে। বেচারা বাস্তুহারা বুলবুলি উপায়ান্তর না দেখে নির্ভীক বসেছিলো অজানা ফুলগাছের ডালে।
ছবিঃ তেইশ
কাছেধারে কোন চরও নেই। বেচারা যাবে কোথায়? মানুষের সঙ্গ তো তারা কোনকালেই ভালোভাবে দেখেনি।
ছবিঃ চব্বিশ
উত্তরের আকাশে মেঘের অভিমান। প্রার্থনায় ছিলাম। ঝড় যেন না উঠে। যদিও এই মৌসুমে ঝড় ঝাপ্টা তেমন হয় না। তবুও...
ছবিঃ পঁচিশ
ঝড় বৃষ্টি কোনটায় আসেনি। কিছুক্ষণ পর মনোমুগ্ধকর নীলের সাথে জলের আলিঙ্গন। শোভিত দুপুর।
ছবিঃ ছাব্বিশ
বিশালতা ছুঁয়েছে জলরাশি।
ছবিঃ ২৭
এমন অনিন্দিত অপরূপ দৃশ্য নয়নে গাঁথা থাকে হাজার লক্ষ বছর।
ছবিঃ ২৮
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।
- জীবনানন্দ দাশ
বোনাস ছবিঃ চাঁদপুরের বন্ধু স্বর্ণা। তাকে বলেছিলাম কখনো নদী দেখিনি খুব কাছে থেকে। সে যত্ন করে ছবিগুলো তুলে পাঠিয়েছে। তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো ভার্চুয়ালি আমার তৃষ্ণা দূর করার জন্য। নদীর মত তাকেও ভালোবাসি।
বন্ধুর পাঠানো ছবিগুলোর বর্ণনা সন্মানিত পাঠকরাই করবেন।
সবার জীবনে আনন্দ আসুক। শুভ হোক পথচলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪১