মহান মে দিবসে পৃথিবীর সকল শ্রমজীবি মানুষকে জানাই শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা। মহান মে দিবস সকল সার বিশ্বে শ্রমিক -কর্মচারির জন্য সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা ৫x৮=৪০ ঘণ্টা নির্ধারন করে দিলেও জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকরা আমাদের দেশে এই সুবিধা ভোগ করেননা। দেশে শিক্ষকদের কর্মঘন্টা ৬X৮=৪৮ ঘণ্টা। সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীরা যেখানে সপ্তাহে ২ দিন ছুটি ভোগ করেন এবং ৫ দিন কাজ/অফিস করেন। অর্থাৎ বছরে ১০৪ দিন পূর্ণদিবস ছুটি। সেখানে শিক্ষকরা সপ্তাহে ১ দিন ছুটি ভোগ করেন এবং ৬ দিন কাজ/অফিস করেন। তাঁদের বাৎসরিক পূর্ণদিবস ছুটি মাত্র ৫২ দিন। সব মিলিয়ে বছরে ৭৮-৮০ দিন। অথচ অন্যান্য বিভাগের ছুটি ১১৬ দিন থেকে ১২০ দিন।
আশচার্য হলেও সত্যি যে, ঐ ১ দিন ৮ ঘণ্টা বেশি কাজ করে শিক্ষকরা অতিরিক্ত কোন পারিশ্রমিক/সম্মানি/ভাতা পাননা। এই ১ দিন কাজে/অফিস যেতে একজন শিক্ষকের যে যাতায়ত খরচ ও দুপুরে খাওয়া খরচ হয় তাও হিসাবে নেয়া হয়না। এই খরচ কম করে হলেও ২৫০-৩০০ টাকার কম নয়।অর্থাৎ বছরে ৫২+জাতীয় দিবস দিন কাজ/অফিস করে একজন শিক্ষক অন্যদের তুলনায় প্রায় ২ মাসের বেতন কম পাচ্ছেন। এবং তার ঐ ২ মাস অফিস যেতে ও খেতে অতিরিক্ত খরচের সম্মুখিন হচ্ছেন।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল এই অতিরিক্ত ৫২ দিন বেশি পরিশ্রম করেও আমাদের দেশের শিক্ষা বিভাগকে অবকাশ বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে অবসর গ্রহনের পর প্রাপ্য আর্থিক সুবিধাধি হিসাবের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অন্যান্য বিভাগের কর্মচারির তুলনায় ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
কেউ হয়ত বলবেন শিক্ষকরা গ্রীষ্মকালীন ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি বেশি ভোগ করে থাকেন। এই এপ্রিলের ১- থেকে ১৮ তারিখ কাগজে কলমে সরকারি কলেজ সমূহ গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকলেও এর মধ্যা এইএসসি পরিক্ষা, ডিগ্রী পাস ও সম্মান শ্রেণীর পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাহলে ছুটি কোথায়?
এর চেয়েও বেশি পরিতাপের বিষয় হল সারা দেশের যে কোন (ব্যাতিক্রম থাকতে পারে) সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সবধরনের শিক্ষক (প্রভাষক থেকে অধ্যাপক) কোন ধরনের পরিবহন সুবিধা ভোগ করেন না। যেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা পরিবহন সুবিধা পেয়ে থাকেন। এতে তাদের মাসিক খরচের একটা বড় অংশ বেঁচে যায়।
যে জাতি তাদের শিক্ষকদের শ্রমিকেরদের সমান অধিকারও প্রদান করে না, নানারূপ বৈষম্যমূলক বিষয়ে আবর্তিত করে রাখে তাদের সামগ্রিক উন্নতি খুব সহজেই অনুমেয়??
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:০৪