তিনি কখনও বোরকা পরে স্বামীর অফিসের বারান্দায় ঘুরঘুর করেন। কখনও রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে স্বামীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। আবার কখনও স্বামীর নারী সহকর্মীদের সঙ্গে টেলিফোনে জেরা করেন- কেন তারা তার স্বামীর কক্ষে বারবার যাওয়া-আসা করেন, কিসের এত মিটিং তার স্বামীর সঙ্গে? প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলছে, অথচ আলোচিত স্বামীটি বোরকাপরা স্ত্রীর পাশ দিয়ে হেঁটে যান কিন্তু টেরও পান না স্ত্রীর এ গোয়েন্দাগিরি। আলোচিত এ স্ত্রীর স্বামী বাংলাদেশ সরকারের একজন যুগ্ম সচিব ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বা এডিবির ঋণের টাকায় পরিচালিত একটি প্রকল্পের কর্মকর্তা ।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, ফিলিপাইনের মাধ্যমিক শিক্ষার মনিটরিং ব্যবস্থা ও গুণগতমান বিষয়ে জ্ঞানলাভের উদ্দেশে গত ২৯শে জুন সরকারের অনুমতি বা জিও লাভ করে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। নাছোড়বান্দা এ স্ত্রী কোন চাকরি না করলেও গত ১৩ই জুলাই স্বামীর সফরসঙ্গী হয়ে ম্যানিলার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করছেন। এডিবির ঋণের প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সফরের ১৫ সদস্যের সরকারি দলের সঙ্গে তিনি কিভাবে ঠাঁই পেলেন এবং কারা কিভাবে এ তালিকায় ঢুকিয়েছেন এ নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। সূত্র জানায়, এ সফরের সব পর্যায়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করলেও আলোচিত এ স্ত্রী শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যান যে ওই ১৫ সদস্যের দলে তার স্বামীর একজন নারী সহকর্মী আছেন। ওই নারী সহকর্মীকে নিয়ে দেশের ভেতরে নানা জায়গার সফরে গেছেন এ যুগ্ম সচিব এবং নানা মুখরোচক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। এরপর ওই স্ত্রী তার যুগ্ম সচিব স্বামীকে চাপ দিতে থাকেন স্বামীর বিশেষ পছন্দের ওই নারী সহকর্মীকে সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য। আলোচিত যুগ্ম সচিব কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে অনুরোধ করেন নারী সহকর্মীকে সরকারের কাছে স্বেচ্ছায় আবেদন করে সফর বাতিল করার, কিন্তু তাতে রাজি নন ওই নারী সহকর্মী। সাফ জানিয়ে দেন, যেহেতু জিও হয়ে গেছে তাই তিনি অবশ্যই যাবেন ম্যানিলায়। বিদেশের মাটিতে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে ১৫ সদস্যের কয়েক সফরসঙ্গীও ওই একমাত্র নারী সহকর্মীকে সফর বাতিল করার অনুরোধ করেন, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ওদিকে স্ত্রী তার দাবিতে অনড়। ফিলিপাইনের ভিসার অনুমতি যোগাড় করার জন্য চাপ দিতে থাকেন স্বামীকে। অগত্যা স্বামী ভিসাও যোগাড় করেন স্ত্রীর। সূত্র মতে, ১৩ই জুলাই ম্যানিলা পৌঁছে ডরমিটরিতে ঢুকেই স্ত্রী প্রথমে দেখে নেন ওই নারী সহকর্মীর নির্ধারিত কক্ষ কোনটি। জানতে পারেন একই রুম তার স্বামী ও ওই নারী সহকর্মীর জন্য নির্ধারিত হয়েছিল তিন সপ্তাহ আগে থেকেই। এরপর প্রথম দফায় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন যুগ্ম সচিব। শেষে দফায় দফায়। কয়েক জন সফরসঙ্গী বিষয়টি টের পেলেও ওই যুগ্ম সচিব চেপে যান বিব্রতকর ওই বিষয়টি।
আন্তর্জাতিক ঋণদান সংস্থার চড়া সুদের ঋণের টাকায় যারা ২৪শে জুলাই পর্যন্ত ম্যানিলা সফরে থাকছেন তাদের মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরও একজন যুগ্ম সচিব, একজন উপসচিব, ওই মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার ও একজন ডেপুটি চিফ, প্রকল্পের ৪ জন কর্মকর্তা এবং ওই মন্ত্রণালয়াধীন অধিদপ্তরের ৩ জন কর্মকর্তা। এ তালিকায় থাকার কথা শিক্ষক ও মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাবৃন্দ- যারা সরাসরি শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সাকুল্যে দু’জন শিক্ষা কর্মকর্তা থাকলেও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত কোনও পর্যায়েরই কোন শিক্ষকই নেই এ সফরে।
সরকারি সূত্র জানায়, আলোচিত এ যুগ্ম সচিব গত তিন বছরে কখনও দেশের ভেতরে সড়কপথে কোন ভ্রমণে যাননি। সবসময়ই গিয়েছেন আকাশপথে, ভ্রমণভাতা বেশি পাওয়ার জন্য। অথচ তার প্রকল্প এলাকা সারা দেশ ।
মানবজমিন ১৯/৭/১১