পৃথিবীর যেকোন উন্নত দেশে, এমনকি পাশের দেশ ভারতে পর্যন্ত আমরা দেখি সরকারের মন্ত্রীসভার কোন সদস্য বা আমলার উপরে গুরুতর কোন অভিযোগ উঠার সাথে সাথে তারা পদত্যাগ করে। কিন্তু আমাদের মন্ত্রী-আমলাদের চামড়া এত মোটা যে, অভিযোগ উঠলে তো দূরের কথা, অভিযোগ প্রমানিত হলেও পদত্যাগ তো করেই না, বরং নিজের দোষের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করে। পদত্যাগের এই রীতি বাংলাদেশে কবে শুরু হবে?
চাল-তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। নাগালের মধ্যে নেই মৌসুমে উৎপাদিত সব্জির দামও। সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। কৃষক উৎপাদন করে দাম পায় না, সব টাকা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্তভোগী মজুদদারদের হাতে। সরকারের বানিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে যাচ্ছে। প্রতিটা বৈঠকে ঘোষণা দেয়া হয় দাম কমার, কিন্তু উল্টো আরো বেড়ে যায় দাম। সিণ্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা সিণ্ডকেটকে সুযোগ করে দেয়া এই নির্লজ্জ মন্ত্রী নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগ করা তো দূরের কথা, উল্টো ঘোষণা দেয় বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য নাকি বিশ্বের সব দেশের চেয়ে কম আছে।
সোমালিয়ার জরদস্যুদের হাতে মাসের পর মাস বন্দি হয়ে পড়ে আছে জাহানমনির নাবিকেরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদক্ষেপ বলতে শুধু বিবৃতি দেয়া। জাহানমনির নাবিক এবং তাদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয় বাংলার আকাশ-বাতাশ। নির্বিকার নির্লজ্জ্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দিনের পর দিন অবনতি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। নাগরিক নিরাপত্তা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। ৫০-৬০ জনের শঙ্ঘবদ্ধ একেকটি ডাকাত দল গ্রামের পর ডাকাতি করছে। নির্বিকার পুলিশ। আর ষরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য - দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক। অবশেষে নিজ দলের এমপির বাসায় ডাকাতি এবং নেতা খুনের পর তার উপলব্ধি - কিছুটা অবনতি হয়েছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। কিন্তু পদত্যাগ? নৈব নৈব চ! আর আমাদের ষরাষ্ট্র-প্রতিমন্ত্রী? তার কাজ বিবৃতি দেয়া। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন নয়।
লিবিয়ায় চলছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর যেখানে হাউজ-অব-কমন্সে জবাবদিহি করতে করতে অস্থির যে তার দেশের কতজন নাগরিককে এই পর্যন্ত লিবিয়া থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে, কতজন এখনো সেখানে রয়ে গেছে এবং কবে নাগাদ তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হবে, সেখানে আমাদের হস্তি সদৃশ পররাষ্ট্র সচীব সাংবাদিকদের জানান, লিবিয়ায় বাংলাদেশীদের কোন ধরনের সমস্যার খবর তার কাছে নেই। যেনো চোখ বন্ধ করে থাকলেই আর সমস্যা কাছে আসবে না। আজো বধি লিবিয়ায় অবস্থিত বাঙ্গালীদের ফিরিয়ে আনতে তারা কোন পদক্ষেপই নেয় নি। যে কজন বাংলাদেশী এ পর্যন্ত ফিরে এসেছে, তারা এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যে। এতে সরকারের কৃতিত্ব শূন্য। এখনো পর্যন্ত এই ব্যর্থতার জন্য কেউ দায়িত্ব নেয় নি - পদত্যাগ তো দূরের কথা।
এত বড় কেলেঙ্কারী হয়ে গেলো শেয়ার বাজারে। সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষ তাদের প্রত্যক্ষ মদদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেল, নিঃস্ব হয়ে গেলো লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। অথচ বিকার নেই কারো মধ্যে। আজোবধি দায়িত্ব নিলো না এসইসি কিংবা ডিএসইর কোন কর্মকর্তা। আমাদের বুড়ো ভাম অর্থমন্ত্রীতো উল্টা তিরষ্কার করলো বিনিয়োগকারীদের। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়ে দিল, তেত্রিশ লাখ বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেলে এদেশের অর্থনীতিতে তার কোন প্রভাব পড়বে না। কাজেই তাদের কিছু আসে যায় না!
সরকারের ব্যর্থ ও অপদার্থ এই সব মন্ত্রী আমলারা কবে থেকে দায়িত্ব নেয়া শিখবে? কিংবা কোন দিনই কি শিখবে? কবে থেকে আমরা দেখতে পাবো সবাই তাদের নিজ নিজ ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করছে? সেই সুদিন এদেশে কি কোন দিন আসবে!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১১ ভোর ৬:৪৮