ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসঙ্গে জানতে অনেকই দেখি ব্লগে লিখেন। মাঝে মাঝেই নানা ব্লগে চোখে পড়ে ইন্ডিয়ান ভিসা পেতে হেল্প চাই। আবার অনেকে ইন্ডিয়ার ভিসা পেতে সমস্যার কথা বলেন, বলেন নানাবিধ জটিলতার কথা। আমি নিজে কয়েকবার ইন্ডিয়া গিয়েছি, প্রতিবারি নিজে দাঁড়িয়ে ভিসা নিয়েছি। আমি এখনো কোন জটিলতা দেখিনাই। আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাদেশীদের জন্য একমাত্র ইন্ডিয়াই একমাত্র দেশ, যারা এখনো সহজেই ভিসা দিচ্ছে। চাকুরী এবং ইচ্ছার কারনে আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। আমি এখনো মনে করি, ইন্ডিয়া আমাদের এখনো সহজেই ভিসা দিচ্ছে, অন্যান্ন দেশের তুলনায়। আমাদের সব সময় মনে রাখা উচিত, ইন্ডিয়া একটা বড় দেশ। তারা তাদের মতই চলবে, তারা আমাদের কথা মত চলবে না!
আমি দেখেছি, আমাদের যাদের তারা ভিসা দেয় না, মুলত ভিসা প্রার্থী হিসাবে তাদের কাছে যে সকল কাগজ পত্র চাওয়া হয় তা তারা দিতে পারে না বা ভুল কাগজ পত্র নিয়ে দাড়াবার কারনে ভিসা পায় না। লাইনে দাঁড়ানো নিয়েও আমি দেখেছি একটা কষ্টে ভুগেন আমাদের ভিসা প্রার্থীরা, কিন্তু দিনে যদি পনর শত ভিসা প্রার্থী হয় তবে লাইনে না দাঁড় করিয়ে কি করবে! দিনে পনর শত ভিসা প্রার্থী শুনে আমিও অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে হয়েছিল, আসলে আমাদের সাধারন মানুষের (ঊচ্চ মধ্যবিত্ত, সাধারন ভ্রমণ পিয়াসী ও রোগবালাই যুক্ত) বিদেশ ভ্রমনের কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে ‘ইন্ডিয়া’, আর যামু কই!
বাংলাদেশ ইন্ডিয়া সম্পর্ক নিয়ে লিখলে সাগরের পানি কালি হলেও শুকিয়ে যাবে তবু কথা শেষ হবে না। আমি আজ যে কারনে লিখতে বসেছিলাম, তা হচ্ছে আপনি কি করে ইন্ডিয়ান ভিসা পেতে পারেন! ধারাবাহিক ভাবে চলুন আলোচনা করি। ইন্ডিয়ান ভিসা পেতে হলে প্রথমেই আপনার কম পক্ষে ছয়মাস মেয়াদী পাসপোর্ট থাকতে হবে। তার পর ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারের ওয়েবে ঢুকে আপনাকে অনলাইনে যথাযত ভাবে একটা ফর্ম পূরন করতে হবে (মনে রাখবেন, এখানে হুবহু পাসপোর্টের ইনফরমেশন প্রদান করবেন, বানান কিংবা তথ্যগত ভুল আপনাকে ওরা ফিরত পাঠাতে পারে)। ফর্ম পুরন ও সাবমিশনের পর ফর্মটির একটি প্রিন্ট নিয়ে নিন। এই ফর্মের গায়েই লিখা থাকে, কোন দিন এবং সময় আপনি আপনার কাগজ পত্র নিয়ে তাদের কাছে জমা দিবেন।
এই লিঙ্কে ভিসার জন্য ক্লিক করুন। নিম্মের এই পেইজটি কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠবে। আপনি কোন ধরনের ভিসা চান তার সব ক্যাটাগরীর নিয়মকানুন পড়ে নিন এবং জেনে নিন কোন ধরনের ভিসাতে কি কি কাগজ পত্র লাগে। সবচেয়ে সহজ ও কম কাগজ লাগে টুরিস্ট ভিসায়!
অতপর অনলাইন ভিসা এপলিকেশন (দাগ দেয়া) এ ক্লিক করুন এবং নিখুত ভাবে ফর্ম পুরন ও সাবমিশনের পর ফর্মটির একটি প্রিন্ট নিয়ে নিন। বানান ভুল করা এবং কোন তথ্য ভুল করবেন না।
সময়ময় দিন তারিখ দেখে ভিসার জন্য নিধারিত কাগজ পত্র নিয়ে গুলশান-১ শুটিং ক্লাবের কাছে ইন্ডিয়ান এম্ভেসির ভিসা রিসিভিং সেণ্টারে গিয়ে জমা দিন। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে পড়ুন। ভিতরে গেলে সিরিয়াল মত আপনার ডাক পড়বে এবং আপনার সামনেই পাসপোর্টের সাথে ফর্ম খানা মিলাবে, যাবতীয় কাগজ পত্র আছে কিনা চেক করবে। সব ঠিক থাকলে আপনার পাসপোর্ট নিদিষ্ট ফী সহ রেখে দেবে এবং ভিসা সংগ্রহের দিন তারিখ জানিয়ে দেবে।
ভিসার জন্য পাসপোর্ট নেয় সকালের দিকে এবং ভিসা সমেত পাসপোর্ট ফেরত দেয় বিকালের দিকে। আপনি নিদিষ্ট দিন বিকালে গেলে লাইন ধরে ভিতরে ডুকবেন এবং সিরিয়াল মত আপনার ভিসা সমেত পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। পাসপোর্ট হাতে পেয়ে আপনি আপনার ভ্রমনের সিডিউল তৈরী করুন।
কয়েকটি সতর্কতা (টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে মাত্র)
১। ছবি ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি হতে হবে, বেশী পুরানো হলে চলবে না। বর্তমান চোহারা ফুটে উঠতে হবে!
২। ১৫০ ডলার কিংবা তার বেশী পাসপোর্ট এ এন্ডোস করা থাকতে হবে। সাথে সার্টিফিকেট নিতে ভুলবেন না। যদি ডলার এন্ডোস না করেন তবে আপনার গত তিন মাসের ব্যাংক এস্টেটম্যান্ট জমা দিতে হবে।
৩। নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট বা ন্যশনাল আইডি কার্ডের ফটো কপি নিবেন।
৪। আপনি কি করেন তা প্রমানের জন্য যে কোন সার্টিফিকেট নিবেন (ব্যবসা হলে আপনার ট্রেড লাইসন্সের ফটো কপি কিংবা চাকুরী করলে যথাযত পক্ষের থেকে লেটার নিতে হবে। উভ্য়ক্ষেত্রে ভিজিটিং কার্ড নিবেন)
৫। ইন্ডিয়া গিয়ে কোথায় উঠবেন (কোন হোটেলের নাম লিখাই উত্তম) তা আগেই ঠিক করে নিন, কারন তার নাম ঠিকানা ফর্মে উল্লেখ করতে হয়।
৬। টুরিস্ট ভিসা ফী এখন ৪০০/- (চার শত টাকা)
ব্যস, এইতো ইন্ডিয়া আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যান, ইন্ডিয়া ঘুরে ঘুরে নিজের কিংবা বাবার টাকা ঢেলে দিয়ে আসুন। সব ক্ষেত্রেই ইন্ডিয়া আমাদের চেয়ে এগিয়ে, আমাদের কঠিন ভাল লাগার দেশ। আমার বয়সতো আর কম হল না, আপনাকে যদি বলা হয় - ৪ দিনের জন্য রাংগামাটি চলুন। আপনি হয়ত বলে বসবেন, না যাব না, টাইম নাই, টাকা নাই! কিন্তু যদি বলা হয় ৩ দিনের জন্য ইন্ডিয়া চলুন, বাহ! কি খুশি। বলে বসবেন - কবে যাব বলুন!