রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বৈশাথ দেখেছেন? দেখেছেন নিশ্চয়। আমার দেখা ছিল না। আর আমার কাছে নতুন বলেই আমি অভিভূত এবং আপনাদের সাথে সেই অনুভূতি ভাগাভাগি করতে বসা। গুলশানের একটি অভিজাত হোটেল। সকাল বেলাটা শুরু হোলো একটা শিশুদের দলের নাচ আর বাউল গান দিয়ে। আর যারা শুনতে বা দেখতে বসেছেন তারা খাচ্ছেন। নানারকম পিঠা, পায়েস, মুড়ি, মোয়া যতোসব বাঙালি খাবার। তবে লক্ষনীয়, খাবারগুলোর কেবল নামটি বাঙালি, কিন্তু স্বাদ? সেই অভিজাতদের মতোই। পিঠা খাবেন সস দিয়ে, মোয়া খাবেন কিন্তু মনে হবে ক্রিস্পি ক্যাকার্স। শিশুরা ঘন্টা খানেক নেচে ফেলার পর কারো একজনের মনে হলো আরে, ওরা কি সকালের নাস্তা করেছে? তিনি জানতে চাইলেন, তোমরা খেয়েছো কিছু?
ওরা: না।
ভদ্রলোক: খেয়ে এসেছো?
এরা: না।
সামনে বসে যারা খাচ্ছে তাদের বিনোদন দিচ্ছে যে কচি শিশুরা তাদের পেটে ক্ষুধা। আশ্চর্য হওয়া ঠিক হবে না। এটাই স্বাভাবিক। অবশেষে খেতে পেয়েছে সেটাই অনেক।
বিশেষ ব্যবস্থায় ছিলো সারাদিন ক্যাসেটে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো। টেলিভিশনে বাংলা চ্যানেল। জানতে চেয়েছিলাম মাঝে মাঝেই রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানো হয় কিনা। তারা বললো: না, আজ নববর্ষ তাই বাঙালি ভাব আনার চেষ্টা করেছি আমরা।
চেষ্টা তাদের কাস্টমাররাও কম করেনি। উপস্থিত সব নারী শারী আর পুরুষরা পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন। রঙ সাদা বা কালো। শাড়ি পড়লেই বাঙালি হওয়া যায় না সেটা তারাও জানেন। বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই ভুলেও বাংলা বলছিলেন না। রবীন্দ্রনাথের গান শুনে বিরক্ত হলেও বলতে পারছিলেন না। কারণ নববর্ষ, কি করে বলি বাংলা গান বন্ধ করো।
বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮ টায় একটি ফ্লোরে ১লাক ৮০ হাজার টাকার আইসক্রিম বিক্রি হলো শুধু। ২০তলা ভবন..আরো কতোটাকার বিক্র হয়েছে তার হিসাব পাব কি করে। কিন্তু এরা কেমন করে এতো টাকা খরচ করছে? বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। বুঝা যায় বাপের টাকা। বলবেন হয়তো বাপের টাকা আর কে খরচ করবে, ছেলেইতো করবে।
মা আর ছোট দুই শিশু বসে ছিলো। জানতে চাইলাম: বাচ্চাদের বাবা কোথায়?
মা: এব্রোডে
আমি: ওদের এখানে ভালো লাগছে? আপনার কি মনে হয়?
মা: ওদের জন্য তো কেউ কোথাও ব্যবস্থা করে না। ওদের নিয়ে কোথায় যাব?
ভুল বলেননি তো। মনে মণে ভাবলাম, বাচ্চা সংস্কৃতি শিখে না কেনো আমরা সে প্রশ্ন করি। কিন্তু বাচ্চা কোথা থেকে শিখবে সেটা নিয়ে আলাপ নেই। ও বড় হলে এটুকুই জানবে যে। ১৪এপ্রিল, নববর্ষ। এদিন পান্তা ইলিশ খেতে হয়। ইলিশ সপ্তাহ আগে না কিনলে বাজারে পাওয়া যাবে না। ও জানবে, এদিন বান্ধবীকে লাল-সাদা শাড়ী পরতে হবে আর তাকে লাল পাঞ্জাবি, সাথে জিনস না, পাজামা। ওরা জানবে এদিন আইনক্রিম খেতে এবং খাওয়াতে হবে। এই আমাদের বৈশাখ।