ছোট বেলায় সবার জন্য একটা নাম নির্ধারিত হয়। একজনের সাথে যেনো আরেকজন গুলিয়ে না যায় সেটা মূখ্য কারণ গুলোর একটি। তারপর সে বড় হতে হতে জানে। কে তার বাবা, কে তার মা। তারা কি করেন। মানে, বড় হতে হতে মানুষ তার পরিচয় শিখতে থাকে। তার পরিচয় নির্ধারণে তার কি কোন হাত আছে? এক কথায় উত্তর- হাত নেই। কিন্তু চোরের ঘরে জন্ম নেয়া শিশুর কোন দোষ না থাকলেও তাকে অবধারিতভাবে গালি শুনতে হচ্ছে। তখন কেউ যদি তাকে বলে তুইও চোর। তাহলে কি তার করণীয় কিছু আছে? কিন্তু সেতো, কখনো চুরি করেনি। তাহলে এই অভিযোগ খণ্ডানোর উপায় কি? নাই বলেলই চলে। কারণ চোরের ঘরে জন্ম বলেই যে তাকে চোর বলছে সে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য। একটা উপায় বের করা যেতো যদি সেই অভিযোগকারী মনোযোগী হতেন। যদি তিনি একটু নজর করে দেখতে চাইতেন যে আসলে চোরের ছেলে কি করে? চুরি করে? নাকি সে আমাদের সমাজে যাদেরকে ভালো ছেলে বলা হয় সেরকম।
কিন্তু এখানেও বিধি বাম। ফাকিবাজ বিধাতা ভাবেন, কস্ট করে পর্যবেক্ষণের কি আছে, এরেই বানায়ে দিই চোর। ফলে যে কথা বিধি বলেছেন অন্য কেউ তা ফেলবেন কোন সাহসে? তাহলে এখন? তখন দায়িত্ব বর্তায় মহামান্য সর্বজন গৃহিত শয়তানের ওপর। যেকোন উপায়ে ওরে চোর বানাও। কিন্তু আইন বলে তো একটা কথা আছে। জোর করে পরিচয় তৈরী করে দিতে চাইলেই তো আর করা হয়ে যাচ্ছে না। এসময় শয়তান বিধাতার কাছে সুপারিশ করিল, 'হে বিধাতা। লোকচক্ষুর কারণে অনেককিছুই আটকে আছে। চোরের ছেলে যথেস্ট সত এবং ভালো। তাকে চোর বললে আপনার সৃষ্টি নাখোশ হতে পারে। অতএব, তাহাকে চোর না বলিয়া 'চোরের বাচ্চা চোর' বলিলে ভালো হয়। এতে সাপও মরে লাঠিও ভাঙে না। তারপর থেকে সেই পরিচয় নিয়েই জীবন কাটাতে থাকলো চোরের সত ছেলে।
পরিচয় তাহলে নির্ধারণ করে কে? আর কি দ্বারাই-বা তা নির্ধারিত হয়? গোয়েন্দাবৃত্তির চেয়ে আকর্ষণী পেশা এসময়ে নেই। এখন আপনি যদি সেটা না হতে চান তখন কি করে সে পরিচয় থেকে বের হবেন? কারণ নিজের সুবিধার্থে যে ব্যক্তি আপনাকে গোয়েন্দা বানাবে তিনি তো মনোযোগী না। তিনি এতোটা সত নন যে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি শুধু তকমা লাগাবেন। অতএব তিনি আপনার জন্য নতুন পরিচয় বানিয়ে শব্দটি বাতাসে ছুড়ে দিলেন। কারণ পিরচয় দিয়ে দেয়া বিষয়টি তো বিজ্ঞান নয়। এটা তো হিসেব নিকেশ করে ফলাফলে পৌছানো না। প্লাসে প্লাসে এখানে প্লাস হলে তবেই মিলবে এমন কোন জটিলতা নেই। বলেলই হয়। পরিচয় লাগিয়ে দিয়ে সরে পড়লেই হলো। আর সময় মতো সরে পড়তে পারলে যেটা হবে তা হলো এই পরিচয় দেয়ার সাথে আপনার বা আপনার স্বার্থের কি সম্পর্ক সেটা আপনি টের পাবেন না। ওই একটি হিসেব নিকেশ কিন্তু আছে। সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। পরিচয় নির্ধারকরা দীর্ঘজীবী হন।