সুনামগঞ্জের সরকারি হাসপাতালে সকাল সকাল হাজির হয়ে ৫টি ওয়ার্ডের এ পাশ থেকে ওপাশে হেটে বেড়ালাম। চিকিৎসক সেবিকা কে কোথায় নিজেদের কাজ করছে সেটা দেখতে চেয়েছিলাম। হঠাতই নজরে আসে হাসপাতালের আবাসিক শিক্ষকের ফাকা কক্ষ। কিছু তথ্য নিতে ঢুকে পড়ি। তিনি নেই। সকালের রাউণ্ডে গিয়েছেন। অপেক্ষা করার একসময় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন তাজউদ্দিন নামে ৯বছরের এক বালক। পরনে কাবলি, মাথায সাদা টুপি, শরীর বেশি মাত্রায় শুকনো। ডাক্তার নাই বলতেই সে ধপ করে বসে পড়ে। আমি জানতে চাইলাম, কি হয়েছে। বললো বুকে ব্যাথা করে। কোথা থেকে আসছো বলতেই ১৪কিলোমিটার দুরের এক ইউনিয়নের নাম বললেন। সাথে কে এসেছে জিজ্ঞেস করতেই বললো একা। জিজ্ঞেস করলাম এতো দুর থেকে কেনো একা আসলে। কথাটা শেষ হবার আগেই বুঝলাম বোকার মতো একটা প্রশ্ন করেছি। সে টেবিলে মাথা রেখে বললো, আমি এতিম। এতিমকানায় থাকি। অসুখ হলে আমরা একাই আসি।
তারপর হঠাতই জানতে চাইলো, আমার ব্যাথা বুকে ব্যাথা কিন্তু ডাক্তার পেটের ডানদিকের কথা বলছে কেনো? কি বলবো তাকে? ডাক্তার এলেন বললেন, আরেকটা কাগজ বহির্বিভাগ থেকে আনতে হবে। যে ছেলেটি ব্যাথায় নীল হয়ে রয়েছে সে জোর পায়ে গিয়ে সেই কাগজ নিয়ে এলো। একবার ভাবলাম তাকে সাথে নিয়ে গিয়ে কাজগুলো করে দিই। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলাম ও যদি কস্ট পায়, ভাবলাম ওকে একদিন সাহায্য করে না দূর্বল করে ফেলি। কাগজটা নিয়ে এলে ডাক্তার জানালেন সে ভালো আছে, কয়েকটা ওসুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। কথা শেষ হওয়া মাত্র প্রেসক্রিপসন নিয়ে সে ফিরে গেলো। তার পিছে পিছে বেরিয়ে পাশে হাটা শুরু করি। এবার জানতে চাই পড়ালেখা করো? বললো হ্যা, আমি হাফেজ। এক পারা পর্যন্ত মুখস্ত করেছি। তারপর যাই বলে বাসে উঠে গেলো। আরেকটু বসতে বললে জানালো, দেরি হরে দুপুরের খাবার পাব না। ততোক্ষণে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।
আমরা কেনো আমাদের বাচ্চাদের ছেড়ে দিতে পারি না। কেনো নিজ বাড়ির ছাদে গেরেও পিছে পিছে যেতে হয়। কেনো নিজেদের দায়িত্ব তারা নিতে পারে না, কেনো আমরা নিতে দেই না??
Click This Link