আমরা সাংবাদিকরা বছরে পুরস্কার পাই। নানাবিধ। রিপোর্টার্স ইউনিটি পুরস্কার, ইউএনএফপিএ পুরস্কার, অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য টিআইব পুরস্কার, ইউনিসেফ এর মিনা এ্যওয়ার্ড, প্রেসক্লাব পুরস্কার আরো কতো কি!! তালিকা অবশ্যই বাড়বে।
যে সাংবাদিক যে বিটে কাজ করেন তিনি বছরজুড়ে সেই এলাকায় কাজ করার পুরস্কার সরূপ এসব সম্মান ছিনিয়ে নেন। উতসাহিত করার জন্য সেটা জরুরিও বটে। সাংবাদিক সারা বছরই খুজতে থাকেন তার বিট এ কোনটা রিপোর্ট হওয়ার মতো ঘটনা, কোনটা মানুষ জানতে চায় কিংবা কোনটা মানুষের জানা দরকার। এবং অবশ্যম্ভাবিভাবে কোনটা তার পত্রিকা ছাপাবে বা টেলিভিশন প্রচার করবে। কেননা রিপোর্ট লিখলেই বা রিপোর্ট বানালেই তো টেলিভিশন বা সংবাদপত্র ছাপাবে না। সেটা মানুষের জানা যতোই জরুরি হোক বা সেটা মানুষের যতোই আগ্রহের বিষয় হোক। সেই বিবেচনা শেষ করে আমরা রিপোর্ট করি। এবং চেষ্টা করি সেটা যেনো গুরুত্ব পায়। কিন্তু যখন পুরস্কার প্রদানের বিজ্ঞাপন দেয় সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। তখন মনে হয় আসলে সারাবছরে কোন কাজই করা হয়নি। কেননা যে যে বিটে কাজ করা হয় তার অবধারিত পাঠক কিন্তু সেই বিটের সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। কিরকম? ধরুন শিশু বিটের কোন প্রতিবেদন। অন্য পাঠকদের বাদ দিরে যেটা বাকি থাকে তাহলো অবধারিত পাঠক। আর এক্সেত্রে শিশু অধিকার ফোরাম, ইউনিসেফ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশন, সেভ দ্য চিলড্রেন, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স জাতীয় সংগঠনগুলো শিশু বিটের রিপোর্টগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেই। ধরুন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (এ নামের সংগঠনটি পুরস্কারের ব্যবস্থা করে না, উদাহরণের জন্য তাদের নামটা ব্যবহার করলাম) নামের সংগঠনটি কোন পুরস্কারের ব্যবস্থা করলো। সারাবছরে তাদের বিবেচনায় যে বিষয়টি/প্রতিবেদনটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় সেটার রিপোর্টারকেই তারা পুরস্কৃত করবেন। তাই না? কিন্তু হয় কি? হয় না। কি হয়? তারা একটা বিজ্ঞাপন দিবেন। অমুক বিষয়ের ওপর লিখিত বা প্রচারিত রিপোর্টার যেনো তাদের পছন্দমতো দুটি/একটি বা তিনটি প্রতিবেদন জমা দেয়। রিপোর্টাররা সেই বেধে দেয়া নির্দিষ্ট বিষয়ের তার প্রকাশিত বা প্রচারিত রিপোর্ট থেকে একটি প্রতিবেদন বাছাই করে জমা দিবেন। এবং আয়োজকদের নির্বাচিত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ (নির্দিষ্ট বিটের বিষয়গুলো বোঝেন এমন কেউ কমই থাকেন) বিচারক এর আসনে বসে সেই প্রতিবেদনগুলো ভিতর থেকে বাছাই করে নেন এবং পুরস্কৃত করেন।
এতোক্ষণে নিশ্চয় এটুকু পরিস্কার করতে পেরেছি যে, পুরস্কার পাওয়ার বা দেয়া নিয়ে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু পদ্ধতিটি সাংবাদিকদের সারাবছরের কাজের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ সেটাই আমার বিবেচ্য বিষয়। আয়োজকদের উদ্দেশ্য আমার বলনীয় বিষয় একটিই, যে দায়িত্ব নিয়ে সারাবছর একই বিষয়ে র ওপর কাজ করে যেতে হয় রিপোর্টারদেরকে সেটার প্রতি ন্যুনতম সম্মান দেখানোর জন্য দয়া করে আপনারা রিপোর্টগুলো পড়ুন এবং সারাবছর ধরেই পর্যবেক্ষণ করতে থাকুন কোন রিপোর্টারের রিপোর্টটা জরুরি ছিলো। এবং তাকে পুরস্কৃত করুন সামনের দিনগুলোতে কাজ করার উতসাহ যোগাতে।