গত দেড় বছর ধরে অর্থীকে ভালোবাসি । ও আমার অনেক ভালো ফ্রেন্ড হওয়ার কারণে কখনোই ভালোবাসার কথাটা বলা হয়নি । কিন্তু , কথায় আছে , প্রেম মানেনা বাঁধা । ওর প্রতি আমার আবেগটা নিয়ন্ত্রণ করা দিনে দিনে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো । অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে অর্থীকে সব কিছু খুলে বলবো । যেই ভাবা সেই কাজ । সব কিছু খুলে বলার জন্য একটা তারিখও ঠিক করে ফেললাম । প্রেমে পড়লে যে মানুষের সাহস বেড়ে যায় তা ভালোই বুঝতে পারছিলাম নিজের এই সাহস দেখে ।
২।
দেখতে দেখতে আমার ঠিক করা সেই তারিখ এসে গেলো । সকাল থেকেই মানসিকভাবে অনেক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । তবুও অনেক নার্ভাস লাগছিলো । ভার্সিটিতে গিয়ে যখন অর্থীর সাথে দেখা হল তখন নার্ভাসনেসটা আরও বেড়ে গেলো । ওকে কিছু বলতে গিয়েও সাহস হল না । দুপুর পর্যন্ত ক্লাস করলাম । কিন্তু , কিছুই বলা হল না । মনে অনেক সাহস এনে শেষপর্যন্ত অর্থীকে ডাক দিলাম ।
-তুই , আজ বিকালে একটু ভার্সিটিতে আসতে পারবি ?
-কেন ?
-তোর সাথে একটা জরুরী কথা ছিল ।
-এখন বল ।
-এখন বলতে পারবো না । আসতে পারবি কিনা সেটা বল ?
-আচ্ছা , ঠিক আছে । আসবো ।
সাহস করে তো বিকালে আসতে বলে ফেললাম । কিন্তু , আসল কথাটা বলতে পারবো তো । এটা নিয়ে মনে আবার চিন্তার উদয় হল ।
৩।
বিকাল ৫.০৫ । ডিপার্টমেন্টের সামনে সিঁড়িতে বসে আছি । অর্থীকে দেখলাম হনহন করে হেঁটে আসছে । দেখেই হার্টবিট বেড়ে গেলো ।
-এখন তাড়াতাড়ি তোর জরুরী কথা বল । আমাকে সন্ধার আগেই বাসায় ফিরতে হবে ।
-একটু সময় দিবি তো । এসেই সরাসরি জরুরী কথা শুনতে চাচ্ছিশ ।
-আচ্ছা , ঠিক আছে । ধীরেসুস্থেই বল । (একটা মিষ্টি হাসি)
মনে মনে চিন্তা করলাম , আমি আমার ভালোবাসার কথাটা বলার পর এই হাসিটা অর্থীর মুখে থাকবে তো ?
-ওই , কি চিন্তা করিস ?
-না । কিছু না ।
-এখন কথাটা বলবি নাকি এভাবে দাঁড়িয়েই থাকবি ?
-কথাটা বলবো । কিন্তু , কয়েকটা কন্ডিশন আছে ।
-কি এমন কথা বলবি যে কন্ডিশন মানতে হবে ? আমার তো এখন ভয় লাগতেসে । (আবার একটা মিষ্টি হাসি)
-আগে বল কন্ডিশনগুলো মানতে পারবি কিনা ? না হলে বলবো না ।
-আচ্ছা , বল । কি কি কন্ডিশন ?
-প্রথমত , আমি তোকে যে কথাটা বলবো সেটা আর কারও সাথে শেয়ার করতে পারবি না ।
দ্বিতীয়ত , কথাটা শুনে আমার উপর মেজাজ খারাপ করতে পারবি না ।
তৃতীয়ত , কথাটা শোনার পর যদি মেজাজ খারাপ হয়েই যায় তাহলে তা নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং আমাদের বন্ধুত্তের মাঝে কোন প্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যাবে না ।
-বাপরে বাপ । এত কন্ডিশন । আচ্ছা , ঠিক আছে । কন্ডিশনগুলো মানবো । এখন তাড়াতাড়ি কথাটা বলে ফেল ।
-রাগ করবি না তো ?
-আরে বাবা , বললাম তো রাগ করবো না । নির্ভয়ে বলতে পারিস ।
- অর্থী , আমি না গত দেড় বছর ধরে .........
-কি হল আবার ? আঁটকে গেলি কেন ? গত দেড় বছর ধরে ......... তারপর কি ?
-বলতে ভয় লাগছে ।
-ধুর , আমি গেলাম । একটা কথা বলতে এত সময় লাগে ?
-দাড়া । বলছি তো ।
-এখন বললে একবারে বলবি । আমি আর দেরি করতে পারবো না ।
- অর্থী, আমি না গত দেড় বছর ধরে তোকে ভালোবাসি ।
-মানে ?????
-সরি । আমি আসলে ......
অর্থী আর কিছু শোনার অপেক্ষা না করে দ্রুত হেঁটে চলে যেতে লাগলো ।
আমি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম । কি করা উচিত , কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।
৪।
রাতেরবেলা অর্থী ফোন করলো । ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম ।
-সার্থক , তোকে কয়েকটা কথা বলি ।
-হুম , বল ।
-তুই আমার অনেক ভালো একটা বন্ধু । তোকে আমি অনেক পছন্দ করি । কিন্তু , সেটা বন্ধু হিসেবে । তুই একটু ভালো করে চিন্তা করে দেখ , বন্ধুত্বটা প্রেমের চেয়েও অনেক উপরে । আমরা মনে হয় বন্ধু হিসেবেই অনেক ভালো থাকবো । এর মাঝে অন্য কিছু চিন্তা করাটা হয়তো উচিত হবে না । আমি আসলে সত্যিই অনেক সরি যে এই কঠিন কথাগুলো তোকে বলতে হচ্ছে । কিন্তু , তুই কষ্ট পেলেও আমার কিছুই করার নেই । কারণ , আমি তোকে কখনোই বন্ধু ছাড়া অন্য কোনভাবে চিন্তা করতে পারবো না ।
কথাগুলো শেষ হবার পর অর্থী লাইনটা কেটে দিল ।
৫।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর ডিপার্টমেন্টের সামনের সিঁড়িতে বসে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম । অর্থীকে দেখলাম একটু দূরে একা একা বসে আছে । ওইদিনের কথাটা বলার পর থেকে ওর সাথে আমার কেমন জানি একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে গেছে । ও আমার সাথে কথা বলা একবারেই কমিয়ে দিয়েছে । কিন্তু , এখন আর কি করার আছে ...... ভুল যা করার তা তো করেই ফেলেছি । এখন নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা ছাড়া করার কিছুই নেই ।
হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি আরম্ভ হল । বন্ধুরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজতে নেমে গেলো । কিছুক্ষন পর সবাই মিলে আমাকেও টেনে নামিয়ে আনল ।
বৃষ্টিতে ভিজছি এমন সময় মনে হল কে যেন আমার কাঁধে হাত রেখেছে । তাকিয়ে দেখি অর্থী দাঁড়িয়ে আছে ।
-সার্থক , আমার হাতটা একটু ধরবি ?
-মানে ?
-বলছি , আমার হাতটা ধরার জন্য ।
অর্থীর বাড়িয়ে রাখা হাতটা ধরলাম ।
-কথা দে , এই হাতটা কখনোই ছাড়বি না .........
-কথা দিলাম ।
মনে হচ্ছিলো , বৃষ্টি যেন তার সকল ভালোবাসার রঙ নিয়ে ঝরে পড়ছিল আমাদের উপর ।
.
কিন্তু , সেই ভালোবাসার রঙ্গিন বৃষ্টি মুহূর্তেই সাদাকালো হয়ে গেলো যখন বুঝতে পারলাম যে আমি স্বপ্ন দেখছি । ঘুম ভাঙার পর দেখলাম , বাইরে আসলেই ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে । কিন্তু , এই বৃষ্টিটা স্বপ্নের বৃষ্টির মতো রঙ্গিন নয় । কারণ , এই বৃষ্টিতে কেউ আমার হাতটা ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে না ।
কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে । মনে হচ্ছে , কাঁদলে আমার চোখের জল বৃষ্টির জলের সাথে ধুয়ে ঝরে পড়বে অর্থীর গায়ের উপর ...........
.
.
আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনে লেখা । অনেক আবেগ নিয়ে বলেছিলো ওর ভালবাসার ঘটনা টা । জানি না কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি । বন্ধুটা আজ প্রাবসে , অনেকদিন কথা হয় না । ভাল থাকিস দোস্ত ।