সময় ৫- ৩০ মিনিট
স্থান- আহসান ভাইয়ের চা স্টল , বাস স্ট্যান্ড ।
একটি মেয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে । গাম্ভীর্যের সাথে আমরা আমাদের ভাব একধাপ বাড়িয়ে তুলতে ভুল্লাম না।
রাব্বি ঝট করে পিছনে ঘুরে,পকেট থেকে চিরুনি বের করে ফটাফট চুলে ভাজ মারল ।
আর আজকেই কেন সানগ্লাস ছাড়া পরল, এই নিয়ে আক্ষেপের কমতি ছিল না তার ।
নুরু অতি ক্ষীণ স্বরে (আমরা যেন শুনতে না পাই) রাব্বির চিরনি ধাঁর চাইল। রাজকীয় চালে
পকেট থেকে চিরনি বের করে সব্বাইকে শুনিয়ে রাব্বি বলল, আরে সামান্য চিরুনিই তো, কিডনি
তো আর চাস নি । আমার স্বভাব জানিসই তো- কেউ কিছু চাইলে না করতে পারিনা । যা তোকে একবারে দিয়ে দিলাম ।
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে, মেয়েটি সোজা শাওনের কাছে গেল। লজ্জা রাঙ্গা মুখ করে বলল ,
'ভাইয়া আপনি না খুউউব কিউট !'
আরও বেশি লজ্জা পেয়ে শাওন মিন মিন স্বরে জবাব দিল, 'তাইইই,
আজকে তো কমপ্লান খাইনি'। কমপ্লান খেলে আমাকে আরও বেশি কিউট দ্যাখায় ।'
- শুধু কমপ্লান , নাকি আরও কিছু খান ?
- রাতে দুধের সাথে কমপ্লান, সকালে ১ প্লেট সাবু এই হল গিয়ে কিউট থাকার গোপন ফরমুলা - কাউকে আবার বোলো না যেন
- না না কাউকে বলব নাহ । ভাইয়া, আপনার নম্বরটা পাওয়া যাবে ?
- আমার তো সবমিলিয়ে ১১ টা নম্বর । আচ্ছা সবগুলোই রাখ ।
মেয়েটি চলে যেতেই, প্রথম চান্সেই রাব্বি তার চিরুনি দখল নিল ।
রাব্বির এই আচরণে সম্পূর্ণ হতাশ নুরু। তার নিজের চিরুনির অবস্থা জরাজীর্ণ ।
দাঁত ভাঙ্গা সেই চিরুনি কুড়িয়ে পেয়েছিল বছর পাঁচেক আগে, ব্রিজের নীচে ।
আকস্মিক চিরনি প্রাপ্তিতে, শোকরানা নামায পড়বে বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, একধাক্কায় তা বাতিল করে দিল নুরু ।
শাওনকে কে সবাই মিলে জাপটে ধরলাম, পার্টি দিতেই হবে । নো ওয়ে ।
কুঞ্জবনের কুঞ্জুস খ্যাত ভিলেন, এক কথায় রাজি হয়ে গেল। হবু প্রেম বলে কথা ।
এই সুযোগের সদব্বহার করতে ভুল্লনা সাগর ।এমনিতেই সে উঁচু পর্যায়ের একজন খাদক ।
৮ নম্বর শিঙ্গাড়া ক্যোঁৎ করে গলা দিয়ে নামিয়েই বিরাট একটা ঢেঁকুর তুলল সে।
শিঙ্গাড়া খাওয়াও যে একটা আর্ট,তাকে না দেখলে কখনও জানতেই পারতাম না আমরা ।
আস্ত শিঙ্গাড়া মুখে পুরে এগাল ওগাল করে ক্যোঁৎ করে গিলে ফেলছে।হোটেল বয় পর্যন্ত হা করে তাকিয়ে দেখছিল ।
খাওয়া শেষ করেই হবু প্রেমের সাফল্য কামনা করে দোয়া হবে বলে ঘোষণা দিল সাগর।
আজকের দিনে প্রেম কতটা জরুরী এই প্রসঙ্গে সামান্য মতবিনিময় করার পর দোয়া শুরু হল ।
মোনাজাতের সময় দেখা গেল, হোটেলের সমস্ত খদ্দের তো বটেই , স্বয়ং হোটেল মালিক পর্যন্ত মোনাজাতে অংশ নিয়েছে ।
এরপর মিষ্টি বিতরণ হল, সব মিলিয়ে সেইদিন ১২০০ টাকা খরচ শাওনের ।
একটু একা হতেই রাব্বি আমার সাথে গোপন আলোচনা করল। তার ধারণা মেয়েটি ভুল করে ,শাওনের কাছে গেছে ।
অবশ্য আজ সানগ্লাস চোখে থাকলে মেয়েটির এ ভুল হতনা। আমিও তাকে পূর্ণ সমর্থন জানালাম ।
রাব্বি খুশি হয়ে আমাকে কোক খাওয়াল ।
সময়- ৯:৪৫ মিনিট
স্থান- আমার বেডরুম ।
বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে কালকের পার্টির লিস্ট করছি । শিঙ্গাড়া না সামুচা কোনটা রাখা যায়,
এ নিয়ে সামান্য চিন্তিত - এমন সময়ে শাওনের ফোন ।
রিসিভ করেই বললাম,
- দোস্ত, শিঙ্গাড়া না সামুচা সিলেক্ট করতে পারছিনা ।ফট করে বলার দরকার নাই, চিন্তা ভাবনা করে বল ।
- কিসের, শিঙ্গাড়া সামুচা ? ঘটনা কি ?
- আরে আজ টেস্ট , কাল হবে ফাইনাল পার্টি ।
- প্রেমের গুষ্টি কিলাই, হারামি তোর খবর আছে ।
- ক্যান কি হল, মাইয়া কি বিবাহিত ?
- পুরাই বাঁশ খাইলাম রে, শালী তোর নাম্বার চাইছে ।
- ইয়া আল্লহ, কস কি ?
- শালা,আনন্দে কিছুই খাইতে পারিনি, কাল দ্যাখামু খাওয়া কারে কয়, দে- লিস্টটা দে ।
- ধুর কিসের লিস্ট, ইয়ার্কি মারছিলাম পাগলা !
- ঠিক আছে আমি লিস্ট করছি, টেনশন নিস না শিঙ্গাড়া সামুচা দুটাই থাকবে ।
শাওন এটা কি বলল, মেয়ে আমার নম্বর চায় ? তাহলে ওর সাথে দেখা করল ক্যান ?
ভুল করে ??
ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । যা ভেবেছিলাম তাই, সেই মেয়েটি ফোন দিয়েছে ।
- হ্যালো,
- হুম,
- আপনি খুব ভাল ।
- ধুর, কি নাম তোমার ?
- কিহ , আমাকে চেন না ? ফুলের নামে নাম - অনুমান কর তো ।
- হুম ধরে ফেলছি, তোমার নাম ধূতরা ।
- ধ্যেত ! তোমার মাথায় কিস্যু নেই। শোন আমি কিন্তু ফেসবুকে তোমার প্রত্যেকটা পোস্ট দেখি ।
- জব্বর কাজ করেছ ।
- ভাইয়া, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন ?
- তাড়াতাড়ি বলে ফেল, ঘুম পাচ্ছে ।
- অনেক দিন থেকে বলব বলব করেও বলতে পারছিনা ।
- তাহলে আর বলার দরকার নাই
- বলি ভাইয়া- রাগ করবে নাতো ?
- টাকার প্রসঙ্গ হলে , কিছু বলা যায় না !
- তুমি- তুমি এত কিপটে !! বলছি, রাগ করবেনা কথা দাও...প্লিজ প্লিজ ।
- বোলো...
- আমি না প্রেমে পরে গেছি !
- কিইইই ???
- আরে পুরটা শোন- আমি তোমার বন্ধুর প্রেমে পরেছি ।
- কার ???
- তোমার বন্ধু সাগরের ।
চুপসানো বেলুনের মতই আমার অবস্থা । এতক্ষণ ধরে নাটক করে, শেষে কিনা ফালতু সাগরের নম্বর চায় ।
ফাজলামোর একটা সীমা আছে তো নাকি ! কি ভাবছেন ? মেয়েটিকে এমনি এমনি ছেড়ে দিছি ??
শাওনের মত আমি বেকুব না । কঠিন এক ঝাড়ি দিয়ে ফোন কেটে দিছি ।
তারপর, সুইচড অফ ।
বলেছিলাম, 'বেয়াদব বেটি ছাওয়াল ,তুই সহ তোর গুষ্টির অনূর্ধ্ব -৩০ সবকয়টা মাইয়ারে
কিয়ামত পর্যন্ত , আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ '।
এদিকে মেয়েটি উপযুক্ত জবাব দেয়ার জন্য সকাল পর্যন্ত চেষ্টা করেও ফোন ঢুকাতে পারেনি ।
শেষে ক্ষুব্ধ হয়ে শাওনের উপরেই ঝাল ঝেড়েছে !
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১০