অই মামা,যাবা ?
রিকশাওয়ালা কইল- কই ?
আমি-শ্যামলী ।
রিকশাওয়ালা- ওঠেন ।
রিকশায় যেতে যেতে নিজের পরিচয়টা দেই- আমি রাকিব,বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পড়ালেখা শেষ হচ্ছে না । দাদার আমলের ফোনটা হাতে নিয়ে বন্ধু জয়রে ফোন দিলাম,শালা ফোন ধরল চার বারের মাথায় ।
আমি- কই তুই ?
জয়- বাসায়
আমি- ১০ মিনিটের মধ্যে মাঠে আয়,আর আসার সময় পোলাপানরে ফোন দিয়া আসিস আজকেই সব ফাইনাল করুম ।
জয়-ওকে, দিতাছি ।
১৫ মিনিট পর মাঠে গিয়ে দেখলাম,জিসান বসে আছে । তার হাত থেকে বিড়ি নিয়া বললাম- জেডু(ভালো নাম-আতিকুর জেড রেহমান)কই ?
জিসান- ও যাইব না । কাজিনের লগে রংপুর গেছে ।
আমি- মানে ? ওর না আমাগোর লগে সিলেট যাওয়ার কথা ?
জিসান-যাওয়ারতো কথা সেটা আমিও জানি,কিন্তু শেষ সময়ে আইসা এমন পলটি মারব সেইটা কে জানে ?
আমি- ধ্যাত,দিল মেজাজটা খারাপ কইরা ।
জিসান- আমারও এদিকে একটু সমস্যা হইসে । আম্মু রাজি হইতাসে না,আর আম্মু রাজি না হইলে কামনে যাই ?
আমি- দোস্ত,আর এক-দেড় বছর পর তুই জবে ঢুকবি এখনও যদি অ্যান্টিরে এইসব ছোট খাটো বিষয় বুঝাইতে না পারস তাইলে তোর প্রেমিকারে ক্যামনে তুই তোর আম্মার সামনে হাজির করবি?
জিসান- দেহি ।
আমি- দেহি না,তরে যাইতেই হইব ।
কিছুক্ষণ পর জয়রে হেলে দুলে আসতে দেখা গেল ।
আমি- কিরে এত দেরি করলি ক্যা ?
জয়- বুয়ারে বিদায় না কইরা কামনে আসি ? জেডু কই ?
জিসান- ওই হালা যাইব না ।
জয়- আমি আগেই জানতাম ও যাইবনা । খিদা লাগসে, চল কিছু খাইয়া আসি ।
আমি- ওই আমি বিল দিতে পারুম না,তোরা খাওয়াবি ।
জয়-আরে বেটা,জিসান আছে না,বিল তো ওই দিব ।
আমি-যা জিসান চা বিড়ি নিয়া আয় ।
ওই দিন রাত ৮টা পর্যন্ত আমরা আড্ডা দিলাম । যাওয়ার সময় জয় আমাকে বলে,দোস্ত সিলেট যাওয়ার তারিখটা একটু পিছায়া দিলে হয় না ? আমি বললাম,দোস্ত দেখ এর আগে অনেক বার প্ল্যান করসি ট্যুর দেওয়ার জন্য,কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ট্যুরেই আর যাওয়া হয় নাই,আর এই বার না গেলে নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে যামু । জয় বলল-দোস্ত দেখ,মাত্র চাকরিটা পাইসি,এখন কাম ফালায়া ট্যুর দিলে সমস্যা হইতে পারে আর হাতে তেমন টাকা নাই । আমি বললাম-দোস্ত,এই প্ল্যান কিন্তু এক মাস আগে করা হইছিল,তখন সবাই কইছিল যাবে । আমি এখনও সেই প্ল্যানেই আছি,তোরা যদি নাও যাস আমি প্ল্যান ক্যানসেল করুম না,অর্নিব আছে,আমি আর ওই যামু । decision তোর হাতে,পরশু দিন টিকেট কাটুম,ফোন দিস ।
ওই দিন এটুক বলেই চলে আসলাম । খারাপ লাগলো,অন্তত জয় এর কাছ থেকে এটা আমি আশা করি নাই ।
অবশেষে,সেই টিকেট কাটার দিন এলো । বিকেলে অর্নিব ফোন দিল ।
অর্নিব- কিরে কই তুই ?
আমি- এইতো দোস্ত বাসায়,তুই কই ?
অর্নিব-আমিও বাসায়,আজকে না টিকেট কাটার কথা ?
আমি-হ কাটুম । এক কাম কর,তুই শ্যামলীতে আয় ওইখান থেকে একলগে যামু টিকেট কাটতে,ঠিক আছে ?
অর্নিব- তাইলে,তুই বাইরও,আমি আইতাছি
আমি- ওকে মামা,আইতাছি ।
তাড়াহুড়ো করে বের হলাম,তাও দেরি হয়ে গেল । গিয়ে দেখি অর্নিব বসে আছে ।
অর্নিব- কিরে বাল,এত দেরি করলি ক্যা ? কতক্ষণ ধইরা বইয়া আছি ?
আমি-আরে বেটা কইস না,রিক্সা পাই নাই অর্ধেক রাস্তা হাইটা আইছি ।
অর্নিব- বাকি পোলাপান কই ?
আমি- খাড়া ফোন দেই ।
মোবাইলটা বের করে জয়রে ফোন দিলাম,দোস্ত কই ? জয়-দোস্ত,আমি একটা কামে বের হইছি । আমি বললাম- ওই হালা,আজকে না টিকেট কাটার কথা,তাড়াতাড়ি শ্যামলী আয় ? জয়-নারে,আমি যামু না । তোরা যা ।
আমি- আর জিসান ?
জয়-ও যাইব না ।
আমি আর কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলাম । জয় আর জিসানরে ব্যাপক গালাগালি করলাম যা এইখানে লেখা যাবে না (লেখলে ব্যান খামু)। অর্নিব আমার এই অবস্থা দেখে বলে- কিরে কি হইসে ? চেতস ক্যা ? আমি বললাম-চেতুম না মানে ? টিকেট কাটার আগে কেউ যদি কয়-আমি যামু না,তাইলে মেজাজ ঠিক থাকে ক্যামনে ? অর্নিব কইল-কেউই যাইব না ? আমি বললাম-কেউ যাইব না,শুধু আমি আর তুই ছাড়া ।
বেশ খানিকটা সময় নীরবতায় কাটল । আমার,অর্নিব কারো মুখে কোন কথা নেই,দুজনেই গভীর চিন্তায় ডুবে আছি । এমন সময় অর্নিব বলল- দোস্ত চল সিলেট যাওয়া ক্যানসেল করি । আমি বললাম- শেষ পর্যন্ত তুইও এমন করলি ?
অর্নিব-আরে বাল,কথা শেষ করতে দে । দ্যাখ,এহন যদি সিলেট যাই,তাইলে যে হালারা যায় নাই,তখন বারবার তাদের কথা মনে পরবো । আর মনে পরলেই মেজাজটা যাইব খারাপ হইয়া । আরে হালা,ঘুরবিই যখন মেজাজ খারাপ কইরা ঘুরবি ক্যান ? ফ্রেশ মাইন্ডে ঘুরবি ।
আমি- ভালইতো কইছস । তো যামু কই ? আর বাজেটও-তো এতো বেশি না,যে মন চাইল আর উড়াল দিলাম।
অর্নিব- কথায় কথায় মাথা গরম করবি না । ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কইরা দেখ অল্প বাজেটের মধ্যে কই যাওয়া যায় ।
মনে মনে আমি চিন্তা করতে লাগলাম,কই যাওয়া যায় ? হঠাৎ করে অনেক আগের একটা কথা মনে পরল । অর্নিবরে জিগাইলাম- দোস্ত,মনে আছে ২ বছর আগে আমি আর তুই জিয়া উদ্যানে বইসা এক জায়গায় যাওয়ার প্ল্যান করসিলাম ? সে কইল- মনে থাকব না,শেষ সময়ে আইসা তুই পলটি মারছিলি । আমি কইলাম- চল দোস্ত এইবার ওই জায়গায় যাই ।
অর্নিব- আসলেই যাবি ?
আমি- হ যামু । চল টিকেট কাইটা আসি ।
টিকেট কেটে ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল । আগামীকাল রাতের বাসে আমাদের যাত্রা শুরু হবে । শুয়ে শুয়ে ভাবছি কাল কি কি জামা কাপড় নেব,কিভাবে দিন গুলো হেসে খেলে পার করব ইত্যাদি । ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম । দেখতে দেখতে বাসে উঠার সময় এসে গেল । ১০ টার বাস ছাড়ল ১০.৩০ টায় । এক সময় ভুলে গেলাম গত কালের তিক্ততার কথা । রাত ১২ টার দিকে বাস এসে থামল পাটুরিয়া ঘাটে । আমি আর অর্নিব বাস থেকে নদীর ফ্রেশ বাতাস আর দোকানের পরোটা-ভাজি খেতে লাগলাম । এই সময় জয় এর কথা মনে পরল । খাওয়া শেষ হলে ফোন দিলাম তাকে ।
আমি- কিরে কি করস ?
জয়- এই তো দোস্ত,রিপোর্ট লিখছি । তুই কই ?
আমি-এইতো ঘাটে,নাস্তা খাইতাসি ।
জয়- সিলেট যাওয়ার পথে ঘাট আইল ক্যামনে ?
আমি- তোরে কে কইল আমি সিলেট যাইতাসি ?
জয়- তাইলে কই যাস ?
আমি- কুয়াকাটা ।
( পরীক্ষার খাতা ছাড়া জীবনে কখনও দুইটা লাইন বানিয়ে লিখি নাই । কারন সে যোগ্যতা আমার নেই ।কিন্তু আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর জোরাজুরিতে লেখতেই হল । সারা দিন বসে সামুতে বসে বিভিন্ন ব্লগার এর লেখা গুলো পড়ি, আর মনে মনে অবাক হই কিভাবে তারা এই লেখা গুলো লেখে । কয়েক দিন শুধু লেখা গুলো পরেই গেলাম, কিন্তু মাথার মধ্যে কোন আইডিয়া আসে না । কি আর করা নিজের জীবনের কিছু বাস্তব ঘটনা হুবুহু তুলে দিলাম,শুধু নাম গুলো পরিবর্তন করে । যদি লেখাতে কোন প্রকার ভূল বা অসংগতি থাকে আমাকে দয়া এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন । ধন্যবাদ । )